ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হলেই কেবল অস্ত্র সমর্পণ: হামাস নেতা

| আপডেট :  ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪১  | প্রকাশিত :  ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪১


ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হলেই কেবল অস্ত্র সমর্পণ: হামাস নেতা

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


ইসরায়েলকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগের সীমান্ত অনুসারে রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণের শর্তে অস্ত্র সমর্পণের ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে হামাসের পলিটব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে গতকাল বৃহস্পতিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ইঙ্গিত দেন। এর আগে এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হামাসের উপপ্রধান খলিল আল-হাইয়্যাও একই কথা বলেন।

২৬ এপ্রিল, শুক্রবার পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্ট।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলের দখল করা অঞ্চলগুলোতে ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলে হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দিতে পারে বলে হামাসের কিছু কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সিএনএন বলছে, সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির কিছু কর্মকর্তার দেওয়া এই বার্তাটি হামাসের অবস্থান কিছুটা নরম হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ গাজা ভূখণ্ডের শাসন ক্ষমতায় থাকা এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে ইহুদি রাষ্ট্র তথা ইসরায়েলকে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সদস্য বাসেম নাইম বৃহস্পতিবার সিএনএনকে বলেছেন, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি নিজেদেরকে নিরস্ত্র করতে রাজি হবে।

হামাসের সশস্ত্র শাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার সংরক্ষণের পাশাপাশি যদি জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাহলে আল কাসামকে (ভবিষ্যত) জাতীয় সেনাবাহিনীতে একীভূত করা যেতে পারে।

হামাস ঐতিহ্যগতভাবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। এই সমাধান নীতি অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকবে। বরং এর পরিবর্তে হামাস এতোদিন সমস্ত ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে কথা বলে এসেছে।

প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা বারঘৌতি বলেছেন, তিনি হামাসের অস্ত্র সমর্পণের প্রস্তাব সম্পর্কে আগে থেকে অবগত নন। তবে তিনি বলেন, এটি সত্য হলে তা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তিনি ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করে সিএনএনকে বলেছেন, ‘এটা এই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ যে, ফিলিস্তিনিরা দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করছে কারণ এখানে দখলদারিত্ব চলছে। যদি কোনও ধরনের দখলদারিত্ব সেখানে না থাকে, তবে তাদের প্রতিরোধ করারও দরকার নেই।

মূলত ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে এখনও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করে। যদিও এসব এলাকায় ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

অন্যদিকে হামাসের একজন শীর্ষ রাজনৈতিক কর্মকর্তা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, ইসলামিক এই গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের সঙ্গে পাঁচ বছর বা তার বেশি সময়ের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে ইচ্ছুক এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্ত অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তারা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে এবং রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হতে ইচ্ছুক।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, গত বুধবার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে হামাসের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা খলিল আল-হাইয়ার এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য গত কয়েক মাস আলোচনা চললেও তা কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে।

এছাড়া হামাস নিজেদের নিরস্ত্রীকরণ করবে এমন ইঙ্গিতটি হামাসের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য ছাড় বলে মনে হচ্ছে। কারণ হামাস এমন এক সশস্ত্র গোষ্ঠী যারা বরাবরই ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামাস নেতাদের এসব বক্তব্য গোষ্ঠীটির ইসরায়েলের প্রতি অবস্থান নরম করার ইঙ্গিত। এর আগে হামাস ইসরায়েল রাষ্ট্রের ধ্বংস চাইলেও বর্তমানে গোষ্ঠীটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে কথা বলছে। এমনকি প্রয়োজনে সশস্ত্র অবস্থান ত্যাগ করার কথাও বলছে।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে হামাস সশস্ত্র পথ পরিত্যাগ করবে উল্লেখ করে বাসেম নাইম বলেন, ‘যদি জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে (ফিলিস্তিনি) শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার সংরক্ষণ করা হয়, সে ক্ষেত্রে আল-কাসামকে (ভবিষ্যতে) জাতীয় সেনাবাহিনীতে একীভূত করা যেতে পারে।’

এর আগে খলিল আল-হাইয়্যা বলেন, ‘হামাস পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুসরণ করে একটি সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন এবং আন্তর্জাতিক রেজল্যুশন অনুযায়ী ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন মেনে নেওয়া হলে হামাসের সামরিক শাখা বিলুপ্ত করা হবে।’

এদিকে, হামাসের এ দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্যের পর ইসরায়েল বা ফাতাহ এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না ইসরায়েল হামাসের এই অবস্থানকে মেনে নেবে। কারণ, গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েল একাধিকবার হামাসকে সমূলে বিনাশ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এমনকি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরায়েলের বর্তমান সরকারও ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুসরণ করে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি মেনে নিতে রাজি নয়।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত