‘বন্দুকযুদ্ধে’ পা হারানো সেই ছাত্রদল নেতা এবার নাশকতার প্রস্তুতির অভিযোগে আটক

| আপডেট :  ২৯ জুন ২০২২, ০২:২৪  | প্রকাশিত :  ২৯ জুন ২০২২, ০২:২৪

গত বছরের জুনে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন মহানগর ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। এই ঘটনার পর কেটে ফেলা হয় তার একটি পা। স্ট্রেচারে ভর দিয়েই চলাফেরা করতে হয় তাকে। সেই পঙ্গু ছাত্রদল নেতাকে এবার পুলিশ নাশকতার প্রস্তুতির অভিযোগে আটক করেছে। পুলিশের দাবি, গত সোমবার রাতে পাঁচলাইশ থানাধীন রহমান নগর এলাকায় সহযোগীদের নিয়ে ধারালো অস্ত্রসহ নাশকতার প্রস্তুতিকালে সাইফুলকে আটক করা হয়েছে।

তবে সাইফুলের পরিবারের দাবি, একটি রাজনৈতিক মামলায় হাজিরা দিয়ে চট্টগ্রাম আদালত ভবন থেকে বের হতেই তাকে আটক করে পুলিশ। গতকাল সকালে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছাত্রদল নেতা ‘বার্মা সাইফুল’ পাঁচলাইশের রহমান নগরে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে ধারালো অস্ত্রসহ নাশকতা করতে জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। পরে সেখান থেকে সাইফুলকে তার সহযোগী দেলোয়ার হোসেন (২১), মো. আবিদ (২০), মো. সাজ্জাদ (২০) ও মো. ইমরানসহ (২২) আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি দেশি ছোরাও উদ্ধার করা হয়। আটক সাইফুল পাঁচলাইশ এলাকার হিলভিউ আবাসিক সংলগ্ন বার্মা কলোনির নুরুল আমিনের পুত্র।

তার বিরুদ্ধে ভাঙচুর, নাশকতাসহ ৯টি মামলা আছে। তবে সবগুলো মামলায় আদালত থেকে জামিনে আছেন তিনি। নাশকতার প্রস্তুতিকালে সাইফুলকে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তার ভাই সুজন মানবজমিনকে বলেন, গত বছরের জুনে পুলিশ আমার ভাইকে বাসা থেকে নিয়ে পায়ে গুলি করে বন্ধুকযুদ্ধের নাটক সাজায়। ওই ঘটনায় তার একটা পা কেটে ফেলা হয়েছে। আড়াই মাস সে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সেখান থেকে পরে পুলিশের মামলায় আটক দেখিয়ে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে আসা হয়। কারাগারে ৯ মাস থাকার পর দুই মাস আগে জামিন নিয়ে বাসায় আসেন। এরপর থেকে ঘরবন্দি আমার ভাই। স্ট্রেচার দিয়েও ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারেন না।

কোলে করে গাড়িতে তুলে ডাক্তারের কাছে নিতে হয়, মামলার হাজিরা দিতে নিতে হয়। সে নাশকতা চালাতে লোকজন নিয়ে রাস্তায় ঘুরবে সেই কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না।’ সুজন বলেন, ‘আসল কথা হচ্ছে আমার ভাই একটা বিস্ফোরক মামলায় হাজিরা দিতে গতকাল সকালে চট্টগ্রাম কোর্টে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় একই মামলায় হাজিরা দিতে যাওয়া আরও ৪ জনকে আটক করা হয়। সারা রাত ধরে আমরা তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছি। থানায় গিয়ে বসেছিলাম। পুলিশের সাফ কথা সাইফুল নামে কাউকে তারা আটক করেনি। এখন সকালে এসে বলছে নাশকতার প্রস্তুতিকালে রহমাননগর থেকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদল আহ্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, ‘গত বছর বাসা থেকে নিয়ে গিয়ে সাইফুল ইসলামকে পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হয়। এখন মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার সময় আবার আটক করে নাশকতার গল্প বানানো হচ্ছে। শুধুমাত্র ছাত্রদল করার কারণে তাকে এভাবে নির্যাতিত হতে হচ্ছে।’ নগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলে, ‘সাইফুল ছেলেটা গত বছরের জুনে পুলিশের গুলিতে একটা পা হারিয়েছিলেন। ওই অবস্থায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। কিছুদিন আগেই জামিনে মুক্তি পান। সাইফুল একজন সাহসী ছাত্রদল নেতা। যে কারণে সে বারবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে। এদিকে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিনকে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে এই বিষয়ে থানার তদন্ত কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম বলেন, আটক সাইফুল একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। নাশকতার প্রস্তুতিকালেই তাকে আটক করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত