বন্যা পরবর্তী খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বাকৃবি শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

| আপডেট :  ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৫:২৮  | প্রকাশিত :  ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৫:২৮


বন্যা পরবর্তী খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বাকৃবি শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

বাকৃবি প্রতিনিধি


বন্যা পরবর্তী খাদ্য সংকট হওয়া নতুন কিছু নয়। এর আগেও বন্যা পরবর্তী দেশে খাদ্য সংকট হয়েছিলো। দেশের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এই আকস্মিক বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে আমন ধানের চারা। কিন্তু কিছুদিন পর বন্যার পানি নেমে গেলেও, আবার চারা তৈরি করতে ১ মাসের মতো সময় লাগবে। এতে করে আমন ধান লাগানোর সময় চলে যাবে। আবার বন্যার কারণে চারা তৈরি করতে কৃষকরা সমস্যায় পরবেন। দেশে দেখা দিবে খাদ্য সংকট। এই খাদ্য সংকটের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা বন্যা পরবর্তী কৃষকদের ধান চারা দিয়ে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। পরে তাদের সাথে যোগ দিয়েছে অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, বীজ কোম্পানি এবং কৃষি উদ্যোক্তারা।

জানা যায়, বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যা দুর্গত এলাকায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আমন ধানের চারা বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে এসব শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেই লেট আমন ধানের চারা সরবরাহ করবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেই দ্রুত চারা সরবরাহ করা গেলে দেশের খাদ্য সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে বলে জানান তারা। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত বিইউ ধান-১ ধানের জাতের চারা সরবরাহ করবে। ধানের বীজের পরে সবজির বীজও সরবরাহ করা হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের গ্যালারিতে একটি আলোচনা সভায় বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উদ্যমী ছাত্র-ছাত্রীর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন অধ্যাপক, কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষি উদ্যোক্তা এবং কর্পোরেট ব্যক্তির পরামর্শক্রমে বন্যার্তদের চারা সরবরাহের উদ্দেশ্যে এগ্রি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স গঠন করা হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৪-২১ দিন বন্যা অবস্থা থাকলে বা তার বেশী সময় পার হয়ে গেলে আমরা আমন মৌসুম আর ধরতে পারবো না। সেক্ষেত্রে চাহিদা মেটাতে আমাদের বিশাল পরিমাণে চাল আমদানি করতে হবে বা দুর্ভিক্ষ অবস্থা হতে পারে। এতে কয়েক হাজার কোটি ডলার রিজার্ভ থেকে চলে যাবে। সেটা মোকাবেলায় আমাদের খুব দ্রুতই চারা তৈরি করা শুরু করতে হবে। যেন আমরা পানি নেমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে চারা সরবরাহ করতে পারি। এতে আমরা অনেক এগিয়ে থাকবো। পরবর্তীতে বোরো মৌসুম যথাযথ সময়ে ধরতে পারবো এবং এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

এ বিষয়ে বাকৃবির স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল মুন্না বলেন, প্রাথমিকভাবে ৫ একর জমির ব্যবস্থা হয়েছে বীজ বপন করার জন্যে। বাকৃবি ক্যাম্পাস থেকে ৪ একর এবং নোয়াখালী থেকে ১ একর জমিতে বীজ বপন করে চারা তৈরির কাজ করা হবে। জমির পরিমাণ আরো বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আমরা ধান বীজ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করছি। আমরা যত বেশি বীজ সংগ্রহ করতে পারবো তত বেশি বন্যা দুর্গত এলাকায় ধানের চারা রোপণ করতে পারবো। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার আশেপাশের অঞ্চলে জমি ব্যবস্থা করতে পারলে সেটা খুবই ফলপ্রসূ হবে। এতে যোগাযোগ সহজ হবে, খুব সহজেই চারা গাছ ওই এলাকার মাটির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।

এ বিষয়ে বাকৃবির খামার ব্যবস্থাপনা শাখার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমাদের চারা সংকট রয়েছে। তবে আমরা খামার ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে ৩ একর জায়গা দিয়ে সাহায্য করতে পারবো। শিক্ষার্থীরা ৩ একর জায়গায় বীজধান বপন করে ধানের চারা উৎপাদন করতে পারবে।

বাকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম. আরিফ হাসান খান রবিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ বন্যা পরবর্তী দেশের খাদ্য সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আমরা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এই মহৎ উদ্যোগে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এই প্রক্রিয়ায় বেশি সীড এবং বেশি জমির প্রয়োজন। চারা প্রস্তুত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ একর জমি নেওয়ার ব্যবস্থা করবো। এখন যেহেতু আমন মৌসুম চলছে । বন্যা পরবর্তী সময়ে ব্রি-৫২, ব্রি-৭১, ব্রি-৭৫, এবং বিনা ১৬, বিনা ১৭ ধানের জাতগুলো বন্যা এলাকার জন্য উপযুক্ত হবে। ব্রি ৫২‘ জাতের ধান পানির নিচে ১৫ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। এছাড়াও বিআর-২৩, ব্রি-৩৪, ব্রি-৪৬, ব্রি-৪৯ জাতের ধানগুলো সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে নতুন করে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে ২০-৩০ দিন সময় লাগবে। বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি নেমে যাওয়ার পরপরই যেন চারা রোপণ করা যায় সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমানে ময়মনসিংহ বা তার আশেপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণে ধানের চারা আছে। এলাকার মানুষেরা তাদের জমিতে ধানের চারা রোপণ করার পরও অতিরিক্ত চারাগাছ পড়ে আছে। এগুলো দ্রুততার সাথে সংগ্রহ করতে হবে। যেন বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই বন্যাদুর্গত এলাকায় ধানের চারা রোপণ করা সম্ভব হয়।

বিবার্তা/আমান উল্লাহ/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত