বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মহাসড়ক চায় ভারত

| আপডেট :  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:১৩  | প্রকাশিত :  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:১৩

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত একটি মহাসড়ক নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। কৌশলগত দিক থেকে এই মহাসড়ক ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর উপলক্ষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতির ১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মহাসড়কটি নির্মাণের বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য ভারত প্রস্তাব দিয়েছে। মহাসড়কটি ‘নতুন উপ-আঞ্চলিক আন্তসংযোগ’ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ভারত বাংলাদেশের ‘সহযোগিতা’ চেয়েছে।

এবার বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারপ্রধানদের শীর্ষ বৈঠক সম্পর্কে কথা বলার ব্যাপারে কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বেশ সতর্ক। এই সফরে কেবল কুশিয়ারা নদী থেকে সেচের পানি পাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়া এবার আর কোনো অর্জন নেই বলে মন্তব্য করেছেন এক কূটনীতিক। কুশিয়ারা থেকে রহিমপুর খালের মাধ্যমে পানি আনার সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশের কাজে লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানি নিয়ে একটু নাড়াচাড়া হতে ১২ বছর লেগে গেল। এখন অন্য নদীর পানি ভাগাভাগির জট ছাড়াতে আর কত বছর লাগে, সেটাও দেখার বিষয়।

বিনা মাশুলে ভারতের নির্দিষ্ট বন্দর হয়ে অন্য দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির প্রস্তাব প্রসঙ্গে অন্য এক কূটনীতিক বলেছেন, এটি একটি ছায়া (শ্যাডো) প্রস্তাব, যাতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো থেকে অন্য দেশে আমদানি-রপ্তানি করা যায়। এ ছাড়া বিনা মাশুলের সঙ্গে প্রকৃত প্রস্তাবে আর কী কী শর্ত যোগ হয়, সেটাও দেখার বিষয় আছে।

হিলি থেকে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত প্রস্তাবিত মহাসড়ক সম্পর্কে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এই মহাসড়ক নির্মাণের ধারণার কথা তিন-চার বছর আগে দিল্লিতে বাংলাদেশের এক ঊর্ধ্বতন কূটনীতিককে ভারতীয়দের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে ২০১৯ সালে অক্টোবরে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বিষয়টি সামনে আনা হয়নি। ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় হিলি ও মহেন্দ্রগঞ্জের মধ্যে ‘আন্তসংযোগ’ স্থাপনের জন্য ভারত বাংলাদেশের ‘সহযোগিতা’ চায়। এবারের সফরে সুনির্দিষ্টভাবে মহাসড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রতিবেদন প্রস্তুতের কথা বলা হয়েছে। এই মহাসড়কটি নির্মিত হলে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যকার ‘চিকেন-নেক’ হিসেবে পরিচিত পথের পরিবর্তে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সরাসরি ও সংক্ষিপ্ত যোগাযোগমাধ্যম বলে গণ্য হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রস্তাবে কী আছে, তা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। হিলি থেকে মহেন্দ্রগঞ্জের মধ্যকার যেকোনো রকম যোগাযোগসুবিধা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অংশে যমুনা নদীর ওপর আরও একটি দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পটি কি শুধু মহাসড়কেই সীমিত থাকবে, নাকি এটি রেল-সুবিধাসহ বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন প্রকল্প হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

মহাসড়ক নির্মাণের ভারতীয় প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দুই দেশের যোগাযোগব্যবস্থা সংযুক্ত করতে বহু কিছু হচ্ছে। ট্রেন আসা-যাওয়া করছে। জাহাজ আসা-যাওয়া করছে। এখন মহাসড়কের প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক আগে জানার বিষয় আছে। তারপর বলা যাবে।

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেসব অনিষ্পন্ন বিষয় আছে, সেগুলোর সমাধানে ভারতের সংবেদনশীল হওয়া দরকার। সমস্যাগুলো সমাধানে উভয় পক্ষের আরেকটু সচেষ্ট হওয়া দরকার।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, আন্তসংযোগ, বাণিজ্য, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সমুদ্র অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: আজকের পত্রিকা

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত