বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ সার্কুলার জারি

| আপডেট :  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:০০  | প্রকাশিত :  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:০০

এখন থেকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনবিএফআই) তাদের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া, সুদ আয় মওকুফ ও খেলাপি হওয়া ঋণ অবলোপন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে জারি করা সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে—কতিপয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাবসিডিয়ারি/সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ করছে। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রদত্ত ঋণের সুদ মওকুফ কিংবা ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধিবিধান লঙ্ঘনের ঘটনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর ফলে আর্থিক খাতের ঋণ শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ/বিনিয়োগ ফেরত না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এখন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের স্বার্থে ও ঋণ শৃঙ্খলা আনতে নিজস্ব সাবসিডিয়ারি/সহযোগী প্রতিষ্ঠানে ঋণ বা বিনিয়োগ প্রদান, সুদ বা মুনাফা মওকুফ ও বিতরণকৃত ঋণ অবলোপনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

অপরদিকে,
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও সাবসিডিয়ারিতে দেওয়া ঋণসীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত বিনিয়োগ ও ঋণ দিচ্ছে। আবার সেই ঋণের সুদ মওকুফ ও ঋণ অবলোপন শুরু করেছে। এর ফলে ঋণ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ওভারনাইট রেপো সুদহার আগের চেয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫.৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এতে রেপো তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নেওয়া ধারের বিপরীতে ৫.৭৫ শতাংশ সুদ দিতে হবে। রেপোর মাধ্যমে সাধারণত একদিনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করা বা জমা রাখা হয়। তবে রিভার্স রেপো সুদহার বিদ্যমান বার্ষিক শতকরা ৪ ভাগে অপরিবর্তিত থাকবে। এ নির্দেশনা আগামী ২ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, করোনার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শক্তিশালী হলেও চলমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাপ্লাই চেইনে সৃষ্ট সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ব চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা এখনও রয়েছে। ফলে ২০২১ সালের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে অধিকাংশ পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে যা এখনও পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসেনি। বিশ্ব বাজারে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রত্যাশিত মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিধায় তা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে রেপো সুদহার আগের চেয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৭ জুন মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) ৫৫তম সভায় রেপোর সুদহার আগের চেয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫.৫০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল।

ওই সময় বলা হয়েছিল, চলমান করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা কার্যকর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা হ্রাস এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন, চলমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্য (খাদ্য ও খাদ্য-বহির্ভূত) মূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির ও বৈশ্বিক অর্থনীতির মুখ্য সূচকসমূহের পর্যালোচনার জন্য দেশের মুদ্রানীতি সুষ্ঠুভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত মনিটারি পলিসি কমিটি রেপো সুদহার পুনঃনির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশে দাঁড়ায়। জুনে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত