বিএনপি’র এবার কঠোর হুঁশিয়ারি

| আপডেট :  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৪৫  | প্রকাশিত :  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৪৫

দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে আর নির্বাচন হতে দেয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি নেতারা। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা। বিএনপি নেতারা বলেছেন, বর্তমান সরকার গত দুটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে ক্ষমতায় এসেছে। এবারো আগের মতো ক্ষমতায় যাওয়ার পাঁয়তারা করছে তারা। তাই নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এই নির্বাচন কমিশন এই সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশন। সুতরাং এই সরকারের নির্বাচন করার জন্য যতো ধরনের ছল চাতুরি করুক না কেন দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন আর এই দেশে হবে না।

বিএনপি’র কর্মসূচিতে বাধা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, যেখানে হামলা হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র যৌথ উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর পল্লাবীসহ দেশব্যাপী বিএনপি’র চলমান কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিবর্ষণ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরু হলেও বেলা ১২টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশস্থলের আশপাশের গলিতে অবস্থান নেন।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সেখান থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন ব্যানারসহ বাঁশের লাঠিতে ঝোলানো জাতীয় পতাকা ও বিএনপি’র দলীয় পতাকা। একপর্যায়ে নয়াপল্টন এলাকায় নেতাকর্মীদের ঢল নামে। ফলে নয়াপল্টনের সড়কে দুপুর থেকেই গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। সমাবেশ শুরুর আগে থেকেই গাড়ির জট শুরু হয়। সমাবেশের কারণে ফকিরাপুল মোড় থেকে কাইকরাইলের নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে সমাবেশের জন্য বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে পিকআপ ভ্যানে তৈরি করা হয় অস্থায়ী মঞ্চ। নেতাকর্মীদের বসার জন্য সড়কে বিছানো হয় কার্পেট। বক্তব্য শোনার সুবিধার্থে নয়া পল্টনের ভিআইপি সড়কের বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগানো হয় মাইক। বিএনপি’র সমাবেশ ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ব্যাপকসংখ্যক পুলিশসহ সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন ছিল সমাবেশ এলাকায়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসী দল।

আওয়ামী লীগের জন্ম সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। আর সন্ত্রাস না করলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। গত ১৫ বছরে তারা ত্রাস ও সন্ত্রাস করে এবং ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছে। তাদের মূল চরিত্র হচ্ছে, সন্ত্রাস করা। সেজন্য এই যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হয়েছে, তখন এই আওয়ামী লীগ সরকার তাদের পেটোয়া বাহিনীকে নামিয়ে দিয়েছে। এই আন্দোলনে শনিবার আমাদের নেত্রী বেগম সেলিমা রহমানকে আহত করেছে, বরকত উল্লাহ বুলু, তাবিথ আউয়ালের মাথায় রক্ত ঝরিয়েছে। আমাদের নারী নেত্রীদের পর্যন্ত তারা রেহাই দেয়নি। মিয়ানমার বোমা মেরে শেষ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে বোমা মারছে। রোহিঙ্গারা মারা যাচ্ছে। সরকার নীরব! কারণ এদের কোমর সোজা নাই। জনগণের দ্বারা তারা নির্বাচিত না। সেজন্য আজকে তারা বুক ফুলিয়ে মিয়ানমারের বোমা বর্ষণের প্রতিবাদ করতে পারছে না। বিশ্ব জনমতকে একসঙ্গে আনতে পারছে না। সেজন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারকে পরাজিত করা হবে বলে হুঁষিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার যতদিন থাকবে এবং যতদিন এদেশ শাসন করবে, এদেশের মানুষের সমস্ত অর্জনগুলোকে তারা ধ্বংস করবে। তাই আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানুষের অধিকার এবং ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করছি। যারা দিন আনে দিন খায় তাদের চাল, ডাল, লবণ, সবজির দাম কমানোর কথা বলছি।

আজকে শতকরা ৪২ জন লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে বলেও মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা ধ্বংস করেছে, নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং মানুষের টিকে থাকার স্বপ্নকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায় মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই- সংগ্রাম করছে, তখন তারা সন্ত্রাস, হত্যা এবং সভা ভঙ্গের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। যাতে করে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহজ হয়।

তিনি বলেন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, আজকে ২০২২। সেই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আজকে এই দুঃখী, খেটে খাওয়া মানুষের চাল, ডাল এবং তেলের দাম কমানোর আন্দোলন করতে গিয়ে, গণতন্ত্রের আন্দোলনে কথা বলতে গিয়ে এবং ভোটাধিকারের কথা বলতে গিয়ে- তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। আজকে এই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করবার জন্য, গণতান্ত্রিক কর্মীদের ভয় দেখানোর জন্য, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য সারা বাংলাদেশে ত্রাসের ও সন্ত্রাসীর রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা মারামারি করতে চাইনি। সবখানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতেছি। কিন্তু আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করছে। সরকারি দলের হয়ে পুলিশ গুলি করছে। আমাদের মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিও সরকার সহ্য করতে পারছে না। আপনারা অপকর্ম করবেন আমরা সহ্য করবো? আমরা আর সহ্য করবো না।

কোথাও কোনো সভা করতে গেলে অনুমিত দেয়া হয় না। আমি কি তা হলে গণভবনে, বঙ্গভবনে সমাবেশ করবো? তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচন করার চিন্তা করছেন। আপনারা যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন সে নির্বাচন কমিশনের অধীনে তো নির্বাচন হবে না। আগামী নির্বাচন হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আর ঢাকায় আমাদের আরও কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু আমাদের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। আমরা আর কোনো বাধা মানবো না। বিএনপি’র ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান বলেন, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু তার পরিবার নিয়ে আসছিলেন। লাকসামে তাকে রাস্তার ওপরে ফেলে সস্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে। ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালসহ অনেক নেতাকর্মীর ওপরে তারা আক্রমণ করেছে। আওয়ামী লীগ আমাদের সভা-সবাবেশ করতে দেবে না বলে প্রতিজ্ঞা নিয়েছে। আগামীকাল মহাখালী, বনানী, গুলশানের তিনটি স্পটে আমাদের কর্মসূচি করার কথা রয়েছে। এখনো প্রশাসন থেকে আমাদের কর্মসূচি করার অনুমতি দেয়া হয়নি। এসময় তিনি কর্মসূচি করতে দেয়া না হলে পুরো ঢাকা শহর অচল করে দেয়ার হুমকি দেন। বলেন, আঘাত আসলে আঘাত মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুত। সন্ত্রাসীরা ইট-পাটকেল মারলে লাঠি নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের তারা (আওয়ামী লীগ) আহত করছে। পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমরা যদি মােেঠ নামি তখন বলবেন না কিন্তু বিএনপি বাড়াবাড়ি করছে। আপনারা হাতুড়ি বাহিনী থামান। তা না হলে আপনারা থানায় অবস্থান করেন। ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে, থানায়-থানায় আমরা আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করবো। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে আমরাই যথেষ্ট। দরকার হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি রাজপথে যুদ্ধ করবে। তিনি বলেন, আমরা অস্ত্রের রাজনীতি করি না, আমরা ভোটের রাজনীতি করি। তাই আমরা গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে চাই। এসময় তিনি মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে সমস্ত কাপুরুষ নারীর ওপর হামলা করে, তারা পার পেয়ে যাবে এটা ভাবার কোনো উপায় নেই। প্রতিটি হামলার জবাব আমরা দেব। সেই প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে রিজভী বলেন, যারা হামলা চালিয়েছে, সেই কাপুরুষদের প্রত্যেকটা ভিডিও আর ছবি আমাদের কাছে আছে। আপনারা কেউ রেহাই পাবেন না। ঢাকা উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবেদিন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, শিরীন সুলতানা, যুবদল নেতা সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ছাত্রদল নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত