বিএনপি’র শিক্ষিত নেতারা অশিক্ষিতের মতো কথা বলছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

| আপডেট :  ২৯ জুন ২০২৪, ০৫:৩৭  | প্রকাশিত :  ২৯ জুন ২০২৪, ০৫:৩৭


বিএনপি’র শিক্ষিত নেতারা অশিক্ষিতের মতো কথা বলছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সারাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি


পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, আর কিছু সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে, কোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নাই। অথচ বিএনপি নেতারা গলা ফাটিয়ে বলে যাচ্ছেন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব নাকি ঢাকা কলেজে পড়াতেন, বিএনপির আরো কিছু নেতাসহ ড. মঈন খানও শিক্ষিত। চুক্তি আর সমঝোতা স্মারকের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারা বিএনপির শিক্ষিত নেতারা কেন অশিক্ষিতের মত কথা বলছেন সেটি আমার বোধগম্য নয়।

২৯ জুন, শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫বছর উপলক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ এই সেমিনারের আয়োজন করে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সমস্ত সমঝোতা স্মারক দেশের স্বার্থেই করা হয়েছে। আমরা কানেক্টিভিটি বাড়াতে চাচ্ছি, কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্যই ইতিমধ্যে ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা, দিনাজপুর-শিলিগুড়ি ট্রেন চালু হয়েছে, আখাউড়া দিয়ে ট্রেন চালু হওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ভারতের বুকের উপর দিয়ে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছি, ভুটানের সাথেও আলাপ-আলোচনা চলছে। সেই কানেক্টিভিটিকে আমরা আরো বাড়াতে চাই। এবং সেই কানেক্টিভিটির সাথে আমরা নেপাল ও ভুটানকেও যুক্ত করতে  চাই। এই অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থেই আমরা কানেক্টিভিটি বাড়াতে চাই। কিন্তু বিএনপি সেটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আসলে যাদের নেত্রী বলেছিলেন সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে বাংলাদেশ যুক্ত হলে দেশের সমস্ত সিক্রেসি আউট হয়ে যাবে, তারা কানেক্টিভিটির মর্ম বুঝার কথা নয়, যেমন নেত্রী তেমন তার সভাসদ, সেজন্যই তারা এসমস্ত আবুল-তাবুল কথা বলছেন আর বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।

তিনি বলেন, কোনো কোনো পীর সাহেবও দেখছি লাফাচ্ছেন। গাজায় যেভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, প্রায় ৩৮ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে লাফাতে দেখিনা। বিএনপি আর জামাত এনিয়ে একটি শব্দও বলে নাই।  

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই বাংলাদেশের সমস্ত অর্জন অর্জিত হয়েছে। ৭৫ বছরের আওয়ামী লীগের পথচলা সবসময় কণ্টকাকীর্ণ ছিল। আওয়ামী লীগ সবসময় অগণতান্ত্রিক ও অপশক্তির চক্ষুশুল ছিল। পাকিস্তান আমলে আয়ুব খাঁন মার্শাল ল দেয়ার পর বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। ৭০’এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান ও এরশাদ দুই সামরিক স্বৈরশাসকই আওয়ামী লীগের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে। ২০০৭ সালে ভিন্ন খোলসে প্রকৃতপক্ষে সামরিক শাসন চলেছে। সমাজে বুদ্ধিজীবী পরিচয় দেয়া কিছু ব্যক্তিকে ভাড়া করে সামনে দিয়ে প্রকৃতপক্ষে সামরিক শাসনই চালু করেছিল তখন।  

তিনি বলেন, সেই সময় দেশের ক্ষমতায় ছিল বিএনপি, দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা দেখিয়েছিল বিএনপি। দুর্নীতি আর দুঃশাসনের অভিযোগ তুলে যেই শাসক এসেছিল, তারা তো প্রথমেই বেগম খালেদা জিয়াকেই গ্রেফতার করার কথা। কিন্তু তারা সেটি না করে প্রথমে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু, জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সবসময় অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরচারী শক্তির চক্ষুশূল ছিল।

জননেত্রী শেখ হাসিনা আজকে বিশ্ব নেতায় রূপান্তর হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদেশের বিভিন্ন সম্মেলনে গিয়ে দেখতে পাই, তিনিই হচ্ছেন সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। কারণ একটা জনবহুল সমস্যা সংকুল, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে জর্জরিত এবং ঝড়-বন্যা-জ্বলোচ্ছাসের দেশকে তিনি যেইভাবে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছেন, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন এবং সমস্ত সূচকে আশেপাশের সমস্ত দেশকে পেছনে ফেলেছেন, অর্থনৈতিক সূচক ও মাথাপিছু জিডিপি’র ক্ষেত্রে ভারতেকেও আমরা পেছনে ফেলেছি। সেই কারণে তিনি আজকে পৃথিবীময় সম্মানের আসনে আসীন হচ্ছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ ছিল। সেখান থেকে এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। ধান উৎপাদনে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে এখন দ্বিতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম, ১৪টি কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। অথচ আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৯২তম রাষ্ট্র। মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ সর্বনিম্ন। মানুষের ঘনত্ব পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। এগুলো সম্ভবপর হয়েছে একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বের কারণে।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. মঈনুদ্দীন, আবুল কালাম আজাদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, সদস্য ইফতেখার হোসেন বাবুল, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, সরোয়ার শামীম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দা রিফাত আক্তার নিশু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন রিয়াজ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রত্না, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম প্রমুখ।

বিবার্তা/জাহেদ/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত