বিদায়ী অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি ১২.৬৯ বিলিয়ন ডলার

| আপডেট :  ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৫  | প্রকাশিত :  ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৫


বিদায়ী অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি ১২.৬৯ বিলিয়ন ডলার

জাতীয়

বিবার্তা প্রতিবেদক


ডলারের কঠিন সংকটের সময়েও সদ্যবিদায়ী অর্থবছর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এক হাজার ২৬৯ কোটি ডলার বা ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। এ নিয়ে গত তিন অর্থবছরে বাংলাদেশ বিক্রি করেছে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এক হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার (১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন) বিক্রি করা হয়েছিল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ৭৬২ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে তিন অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৩৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, দেশের রফতানি-রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি এবং নানা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে আমদানি কমেছে। তবে আগে নেয়া ঋণ পরিশোধের চাপ, নতুন বাণিজ্য ঋণ কমে যাওয়া এবং আশানুরূপ বিদেশি বিনিয়োগ না আসায় ডলার সংকট পুরোপুরি কাটছে না। ডলার সংকট থাকার কারণে ব্যাংকগুলো চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে না। তাই নিয়মিত রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করতে হচ্ছে। তবে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে গতি ফেরাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির চাপ কমে এসেছে। তাই এখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির প্রয়োজন হচ্ছে না বলে জানান তারা।

জানা যায়, বিদেশের সঙ্গে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে গত অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ৪৭৫ কোটি ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৮৪৮ কোটি ডলার। এ অবস্থায় কোনো ব্যাংক যেন আমদানি দায় পরিশোধে ব্যর্থ না হয়, সেজন্য রিজার্ভ কমলেও ডলার বিক্রি করে যাচ্ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তৃতীয় কিস্তিসহ বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠীর থেকে ঋণ পাওয়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্সে গতি ফেরায় আবারও রিজার্ভ বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। ২৬ জুন ছিল ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী গত ৩০ জুন পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন, যা ২৬ জুন ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন। নিট রিজার্ভ গত ৩০ জুন ছিল ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন, যা এতদিন ১৪ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে ছিল।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রির প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে চলে যায় দেশের রিজার্ভ। যদিও এ পরিস্থিতি থেকে রিজার্ভ যাতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় না আসে, সেজন্য দুই বছর ধরেই নানা পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে প্রথমে উদ্যোগ নেয়া হয় দেশের আমদানি নিয়ন্ত্রণের। ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের আমদানি কমেছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত আমদানি কমেছে সাড়ে ১৫ শতাংশের বেশি।

এছাড়া আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে গত মে মাসে বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১১০ থেকে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাজারের সঙ্গে ডলারের দর সমন্বয়ের প্রভাবে গত দুই মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর মে মাসে ২৫৩ কোটি বা ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল।

মূলত রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই ডলার সংকট বাড়তে থাকে। এটা এক পর্যায়ে তীব্র আকার ধারণ করে। তবে রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবাহসহ আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরণের ঋণের কিস্তি পাওয়ায় রির্জাভ কিছুটা বেড়েছে।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত