বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ কর্ণফুলীবাসী!

| আপডেট :  ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৪  | প্রকাশিত :  ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৪


বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ কর্ণফুলীবাসী!

সারাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি


চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি অতীতের যেকোনো সময়ের সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে। বিদ্যুতের এই অসহ্য ভোগান্তিতে তীব্র গরমে শিশু থেকে বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। যদিও বিদ্যুতের অব্যাহত এই বিপর্যয়ের মধ্যেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার আছেন বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুতের এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে সময় কাটছে কর্ণফুলী বাসীর। এই উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবির) দুটি লাইনেই ৫ ইউনিয়নে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিদ্যমান। দিনে বিদ্যুতের এ ভেলকিবাজিতে ও ও বিদ্যুৎবিহীন রাত কাটিয়ে অতিষ্ঠ হলেও পিডিবির মইজ্জারটেক উপকেন্দ্রও।

প্রকৃতপক্ষে গ্যাস সঙ্কটের কারণে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের ঘাটতি না অন্য কিছু, সেটাও স্পষ্ট নয়। নাকি চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম পাচ্ছে তাই লোডশেডিং অসহনীয় পর্যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনেরাতে উপজেলার সিংহভাগ অংশে কেন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে, ঘণ্টার কথা বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকা প্রশ্নের কোন জবাব নেই পিডিবি প্রকৌশলীর।

পিডিবি সূত্র বলছে, কর্ণফুলীর শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা ও চর পাথর ঘাটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের আওতায় প্রায় ২৫ হাজার আবাসিক গ্রাহক ছাড়াও রয়েছে বড় ও মাঝারি বহু শিল্প কারখানা। রয়েছে একাধিক সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান।

এসব প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখা হলেও এলাকার পিডিবি গ্রাহকদের অভিযোগ, লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ তারা দিনের বেলা প্রতি ঘণ্টায় ৩/৪ বার বিদ্যুৎ যায় আসে। কখনো এই লুকোচুরি মিনিটে মিনিটে চলে চলে। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।

টানা বিদ্যুৎহীন থাকলে ফ্রিজের খাবার নষ্ট ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কর্ণফুলী উপজেলার চর পাথর ঘাটার বাসিন্দা শাহরিয়ার বলেন, এই কেমন লোডশেডিং বুঝি না। সারাদিন লোডশেডিং চলছে ছোট ছোট বাচ্চারা গরমে অস্থির। বাচ্চাগুলো অসুস্থ হয়ে পড়বে। গরিবের তো আইপিএস থাকে না। লোডশেডিং দেন ভালো কথা একেবারে ৩ ঘণ্টা ৪ ঘণ্টা দিয়ে দেন না, ২ ঘণ্টা পর আসবে আবার ১০ মিনিট থাকার পরে আবার নিয়ে যায়। ১০ মিনিট ৩০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ দিয়ে লাভটা কি বলে মন্তব্য করেছেন।

শহরের আবাসিক-বাণিজ্যিক সবখানেই এখন বিদ্যুৎ নিয়ে এমন হতাশা শুরু হয়েছে। ভ্যাপসা গরমে আবাসিক এলাকার মানুষকে দুঃসহ যন্ত্রণায় পড়তে হচ্ছে। আবার বহু কলকারখানার চাকাও বন্ধ হয়ে থাকছে।

শিকলবাহায় বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও এ যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। বছরের বেশির ভাগ সময় এরা বিদ্যুৎ পায় না ঠিকমতো। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গত দু’সপ্তাহ ধরে এর মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে করে কলকারখানায়ও উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।

শিকলবাহা দীর্ঘদিন ধরে এমন অব্যবস্থাপনার শিকার হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। বিদ্যুতের এ সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র গরমে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। পিডিবির বিদ্যুৎ অফিসে কোন অভিযোগ নম্বর না থাকায় কল দিয়েও সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ গ্রাহকরা।

শিকলবাহার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ বিপর্যয় এলাকায় দিন ও রাতের বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকে না। অন্য সময়ে লোডশেডিং বেশি থাকে। এটি কি টেকনিক্যাল সমস্যা নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংকট? শিশু, বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কৃষক, পোল্ট্রি খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চরপাথরঘাটার সাইফুদ্দিন সাইফ বলেন, বিদ্যুৎ এর ভেলকিবাজি আর কতদিন সইতে হবে। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ জবাব ও দেয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্ণফুলী পিডিবি অফিসে কর্মরত এক উপ সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘জুলধা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যেখান থেকে ৩৩ কেভির লাইন আসতেছে ওখানে ভোল্টেজ লো হয়ে যাওয়ায় বারবার লাইন বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। লাইন চালু হলে সব ফিডার গুলো এক সাথে বিদ্যুৎ টেনে নেয়। তখন আবারো লো ভোল্টেজে লাইন চলে যায়। মিল কারখানা ইন্ডাস্ট্রিজ বেশি কর্ণফুলীতে। এ কারণে জেনারেশন সমস্যায় উপজেলার সবদিকে বিদ্যুৎ এর সমস্যা হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী আ. স. ম. রেজাউন নবী বলেন, ‘চট্টগ্রাম জুড়ে লোডের যে চাহিদা সেটা আমরা পাচ্ছি না। আমার এখানেও পটিয়া-কর্ণফুলীতে যে চাহিদা তার ৫০ ভাগও পাচ্ছি না। ইন্টারনাল কিছু সমস্যাও রয়েছে। আপনার আমার সবার সমস্যা হচ্ছে প্রচণ্ড গরমে। সেটা আমরা ফিল করতেছি। আশা করি শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।’

বিবার্তা/জাহেদ/সউদ

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত