‘বিদ্যুতে সাফল্যের বয়ান দুঃসংবাদে পরিণত হয়েছে’

| আপডেট :  ০৮ জুলাই ২০২২, ০৯:৫৭  | প্রকাশিত :  ০৮ জুলাই ২০২২, ০৯:৫৭

‘শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের সাফল্য ও আত্মতৃপ্তির বয়ান এরইমধ্যে দুঃসংবাদে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে ব্যাপক লোডশেডিং চলছে, যাতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।’

বুধবার (৬ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব এসব মন্তব্য করেন।

রব বলেন, এমনকি রাজধানীতেও লোডশেডিংয়ের মাত্রা অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে চিকিৎসা-শিক্ষা-শিল্প কারখানাসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

‘গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার চলছে। বিদ্যুতের অভাবে সেচযন্ত্র বন্ধ থাকায় মৌসুমি আবাদসহ সামগ্রিক উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়লেও বিতরণ-সরবরাহ সক্ষমতা বাড়েনি। এমন দুর্গতি দ্রুত নিরসনের কোনো সম্ভাবনাও নেই।’

তিনি বলেন, সরকার এখন অফিস, দোকান, মার্কেট ও কাঁচাবাজার বন্ধসহ উৎপাদন উপকরণের সাশ্রয়ের যে নতুন বয়ান দিচ্ছে তাতে জনগণ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সরকার বিদ্যুতের অপচয়, অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার ও কোন কোন জায়গা থেকে সাশ্রয় করা যায় তা চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

জেএসডি সভাপতি বলেন, এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে সরকার ২.১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েও জনগণের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পারেনি। দক্ষতার অভাব, দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ করতে না পারলে এ খাতে দেনার পরিমাণ আরও বাড়বে। আর, এর সব দায় অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের সক্ষমতার ৫৮% বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে, যা কোনোভাবেই জাতীয় স্বার্থের সহায়ক নয়। অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন ক্যাপাসিটি পেমেন্টের কারণে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যতটুকু বিদ্যুৎ কেনা হয় তার দাম প্রতি ইউনিটে গড়ে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পড়েছে, যা অত্যন্ত বিস্ময়কর।

‘সিস্টেম লসের নামে বিদ্যুতের মূল্য পুনরায় ৫৮% বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। যেকোনো দিন বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে, যা জনজীবনকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে।’

তিনি বলেন, সরকারি খাতে কম মূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে বেসরকারি খাতে অধিক মূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্রয়কে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে কয়লা ব্যবহার বন্ধের পরিকল্পনা ঘোষণার পরও বাংলাদেশে অপরিকল্পিতভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, এমনকি জ্বালানি উৎসের বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

‘অনেক আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা নতুন করে কয়লা খাতে বিনিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য এটি বড় দুঃসংবাদ। এর ফলে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা চরম ঝুঁকিতে পড়বে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতের তুঘলকি কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে হবে। অধিক ব্যয়বহুল রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে।

রব আরও বলেন, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। তাই স্থল-সমুদ্রভাগে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। জ্বালানি খাতের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত