বিভিন্ন বাসায় চুরি করাই আফসানার পেশা

| আপডেট :  ১০ আগস্ট ২০২১, ০৮:৪১  | প্রকাশিত :  ১০ আগস্ট ২০২১, ০৮:৪১

সুন্দর সাজপোশাক, দেখতে আকর্ষণীয়, কথাবার্তায় চৌকস। বিজ্ঞাপনের মডেল-অভিনেত্রীদের মতো নানা ভঙ্গিতে ছবি তোলা তার শখ। মাঝেমধ্যে টিকটক মডেল হিসেবেও কাজ করে সে। তবে তার মূল কাজ একেবারেই ভিন্ন- সালোয়ার-কামিজের ওপর অ্যাপ্রোন পরে গলায় স্টেথোসকোপ ঝুলিয়ে চিকিৎসক সেজে সে বিভিন্নজনের বাসায় যায় চুরি করতে!

নিরাপত্তাকর্মীর কাছে এই ভুয়া চিকিৎসক নিজেকে উপস্থাপন করে গৃহকর্তার আত্মীয় হিসেবে। এরপর ঢুকে পড়ে বাসার ভেতরে। বাসার লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফের বেরিয়ে আসে। তারপর দেখা যায়, ওই বাসা থেকে স্বর্ণালংকার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ গায়েব! এমনই এক ছদ্মবেশী চোরকে রাজধানীর লালবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার নাম আফসানা আক্তার ওরফে ইশা।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, আফসানা চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সেনা কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন ব্যক্তির বাসা থেকে চুরির ঘটনায় জড়িত। সর্বশেষ তেজগাঁওয়ের পারটেক্স গলিতে ‘শেলটেক মণিহার’ ভবনের পঞ্চম তলার এক ফ্ল্যাটে সে হানা দেয়। ওই বাসায় থাকেন পাট গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ড. মাসরুর রহমান। ২৩ মার্চ সেখানে ঢুকে সে টাকা-স্বর্ণালংকার চুরি করে। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় মামলা হয়।

সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, সালোয়ার-কামিজের ওপর অ্যাপ্রোন ও হিজাব পরা এক নারী সকাল ৭টা ৩ মিনিটে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকছে। পরে ৭টা ১৫ মিনিটে তাকে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।

এর সূত্র ধরেই শুরু হয় তদন্ত। এ-সংক্রান্ত মামলায় অভিযোগ করা হয়, বাসা থেকে তিনটি স্বর্ণের আংটি, একটি স্বর্ণের চেইন ও নগদ ২০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই সাইফুল বাসার বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেলেও তাকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। সর্বশেষ চুরির ঘটনার পর সে ঢাকা থেকে পালিয়ে যায়। একপর্যায়ে জানা যায়, গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের সখিপুরে সে অবস্থান করছে। তবে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানোর আগেই সে গত ২ আগস্ট ঢাকায় চলে আসে। এরপর তার অবস্থান শনাক্ত করে গত ৮ আগস্ট বিকেলে লালবাগ কেল্লার অদূরে এক বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে অন্তত সাতটি চুরির মামলা আছে। তবে তেজগাঁওয়ের বাসাটিতে চুরির উদ্দেশ্যে ঢুকলেও কিছুই নিতে পারেনি বলে দাবি তার।

তদন্ত সূত্র জানায়, এর আগে শাহবাগ এলাকায় এক চিকিৎসকের বাসা থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও টাকা চুরি করে আফসানা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করেন। পরে এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। সেনানিবাস এলাকায় এক সেনা কর্মকর্তার বাসায় ঢুকেও সে চুরি করেছিল। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর ও সূত্রাপুরেও দুটি চুরির ঘটনায় সে জড়িত। তবে সূত্রাপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসক সেজে ঢুকলেও সে ধরা পড়ে যায়। চুরির জন্য সে সাধারণত ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়কে বেছে নেয়। তেজগাঁওসহ কয়েকটি ঘটনায় সংশ্নিষ্ট বাসার দরজা খোলা পেয়ে ঢুকে পড়ে সে। কোথাও চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্ত করেও ভেতরে ঢোকে সে।

পুলিশ জানায়, রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে আফসানা কিশোরী বয়সেই বখে যায়। সে একা ঢাকায় চলে আসে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। ইয়াবায় আসক্ত আফসানা মাদকের টাকা জোগাতেই মূলত চুরি করে। টিকটক ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এরপর ঘনিষ্ঠতার সুযোগে অর্থ হাতিয়ে নেয় তাদের কাছ থেকে। সমকাল

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত