বেতন গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে শুধু পদের নাম বদলাচ্ছে

| আপডেট :  ০৯ মার্চ ২০২২, ১০:০৫  | প্রকাশিত :  ০৯ মার্চ ২০২২, ১০:০৫

মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের কর্মবিরতির পরিপ্রেক্ষিতে বেতন গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে শুধু পদের নাম বদলাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৪ জানুয়ারি যেভাবে কর্মচারীদের পদের নাম পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিলেন সেভাবে হচ্ছে না।

কারণ, প্রধানমন্ত্রী ১৩, ১৪ ও ১৫ গ্রেডের কর্মচারীদের পদের নাম সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা করে সবাইকে ১৩ গ্রেডে পদোন্নতির সম্মতি দিয়েছিলেন। এখন ১৩ গ্রেডের কর্মচারীদের নাম হবে উপ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ১৪ গ্রেড হবে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ১৫ গ্রেড হবে উপ সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা। আর ১৬ গ্রেডের অফিস সহকারীদের কোনো পবির্তন আসছে না।

এতে কর্মচারীদের আগের মতোই তিনভাগে বিভক্ত করে শুধু কর্মকর্তা যুক্ত করা হবে, বাড়বে না বেতন গ্রেড। ফলে কর্মচারীদের পদের নাম বদলে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পেলেও ক্ষোভ থেকে যাচ্ছে।

জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে ছিল মাঠ প্রশাসনের সংস্কার। এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারী সমিতি (বাবিককাকস) ও বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির (বাকাসস)। তবে জনপ্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মসূচি স্থগিত রেখে তারা মার্চের ১ তারিখ থেকে শুরু করেছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার সংশোধীত প্রস্তাব প্রেরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজমকে চিঠি পাঠান। জনপ্রশাসন সচিব সেই চিঠি মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগে (সওব্য) পাঠিয়েছেন। সওব্য অনুবিভাগ কর্মচারীদের বেতন গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে পদের নাম তিনভাবে বিভক্ত করে বিধি অনুবিভাগে পাঠিয়েছে। বিধির মতামত শেষে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে চলতি মাসের মধ্যে পদ নাম পরিবর্তনের প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজমের দপ্তরে গেলে তার একান্ত সচিব ফয়সাল হক বলেন, স্যার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। তবে কর্মচারীদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগে কাজ চলছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সওব্য) খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, বিধিগত মতামতের জন্য প্রস্তাব বিধি অনুবিভাগে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ১৩ থেকে ১৫ গ্রেডের পদগুলোকে একই করা হলে সমন্বয় করতে সমস্যা হবে। এজন্য গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে পদের নাম বদলাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

তবে এমন প্রস্তাব মানতে নারাজ মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীরা। তার বলছেন, এতে আরও দ্বন্দ্ব বাড়বে। তবে বেতনগ্রেড পরিবর্তন না করলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী তারা সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদ চান।

বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারী সমিতির (বাবিককাকস) মহাসচিব কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, পদের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। ফলে প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, বেতন গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে পদের নাম ভাগ করা হলে কর্মচারীদের মধ্যে অসোন্তোষ থেকে যাবে।

জানা যায়, ১৩ গ্রেডের অফিস সুপারিনটেনডেন্ট ও সিএ কাম উচ্চমান সহকারী প্রতি উপজেলায় একটি করে পদ রয়েছে, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর আট বিভাগীয় কার্যালয়ে ৪০টি পদ রয়েছে। পদ নাম বদলের পর এসব পদের কর্মকর্তারা হবেন উপ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ১৪ গ্রেডের প্রধান সহকারী ৬৪ জেলায় ১টি করে এবং আট বিভাগে ২৪টি পদ রয়েছে। ট্রেজারি হিসাব রক্ষক ও পরিসংখ্যান সহকারী সব জেলায় ১টি করে পদ আছে। আর সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর সব উপজেলায় ১টি, জেলা সদরের উপজেলায় ২টি এবং আট বিভাগীয় কার্যালয়ে ২০টি পদ রয়েছে। এসব পদ হবে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা। সারাদেশে উচ্চমান সহকারী আছেন প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। এসব ব্যক্তি হবে উপ সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা। বাকি প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তার ভাগ্য বদল হচ্ছে না। এরা সবাই চাকরিজীবনের কমপক্ষে ২০ বছর পর পদ খালি থাকা সাপেক্ষ উচ্চমান সহকারী পদে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। অথচ বাংলাদেশ সচিবালয়ের এমন কর্মচারীরা পাঁচ বছর পরেই প্রশাসনিক কর্মকর্তা হচ্ছেন।

এদিকে ডিসি অফিসের রেভিনিউ শাখা ও এসিল্যান্ড অফিসে যারা কর্মরত আছেন তাদেরও পদ ও গ্রেড পরিবর্তন হচ্ছে না।

অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের দপ্তরে একাধিকবার গেলে তার একান্ত সচিব জানান, স্যার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন না।

বহুল প্রচলিত ‘সরকারি কর্মচারী আইন’ বইয়ের লেখক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া সমকালকে বলেন, নাম পরিবর্তন করলে তাদের সমাজে মর্যাদা বাড়বে।

কিন্তু আর্থিক কোনো সুবিধা হবে না। তবে তিন গ্রেড একসঙ্গে করে পদোন্নতি দিলে অসুবিধার কিছুই নেই। এক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে পদগুলো সমন্বয় করতে হবে। অন্য দপ্তরে সমান পদের প্রায় ৩০ ধরনের কর্মচারীর পদবি ও গ্রেড উন্নীত হলেও মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মচারীদের পদোন্নতি হয়নি।

গত ৩১ জানুয়ারি ভূমি অফিসের কর্মচারীদেরও পদোন্নতি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাদের বেতন গ্রেড ১৬ ও ১৭তম থেকে ১১ ও ১২ তম গ্রেড করে আদেশ জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়। ফলে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, ইউএনও ও এসিল্যান্ড কার্যালয়ে কর্মরত তৃতীয় শ্রেণির হাজার হাজার কর্মচারী সংক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি চলবে চলতি মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত। কর্মচারীরা সকাল ৯ টায় হাজিরা খাতায় সই করে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ না করে অফিস চত্বরে অবস্থান করছেন।

সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত