ব্যাংকের শেয়ারবাজার নিয়ে হতাশার খবর

| আপডেট :  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:০৮  | প্রকাশিত :  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:০৮

দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাত। খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণখেলাপিদের নানা সুবিধা দেওয়া হলেও কাজ হচ্ছে না তাতে। উল্টো দিন দিন বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এটা বাড়তে বাড়তে ছাড়িয়ে গেছে লাখ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে ব্যাংকের এমন পরিস্থিতি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে আস্থাহীনতায় ব্যাংকের বিপুল শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৩টি ব্যাংকের মধ্যে ২৭টির শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে ২১টি ব্যাংকের বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে বিদেশিরা। বাকি ছয়টির মধ্যে চারটির শেয়ার নতুন করে কিনেছে বিদেশিরা। আর দুটির শেয়ার ধারণ অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিদেশিদের ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাপি ঋণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সার্বিক ব্যাংক খাত এক ধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে। ফলে ব্যাংকের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে। এছাড়া ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণেই বিদেশিরা ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ব্যাংক খাতে বর্তমানে বিদেশিদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকে। ২০২১ সালে এই ব্যাংকটির প্রায় দুই শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন বিদেশিরা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ৩৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে, যা কমে ২০২১ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৮৮ শতাংশে। অবশ্য চলতি বছরের প্রথম মাসে এই ব্যাংকটির কিছু শেয়ার কিনেছে বিদেশিরা। এতে জানুয়ারি শেষে ব্যাংকটির ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ শেয়ার আছে বিদেশিদের কাছে।

বিদেশিদের বিনিয়োগের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকটির শেয়ারও বিক্রি করেছে বিদেশিরা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ২০ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে, যা কমে ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ১৯ শতাংশে। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই ব্যাংকটিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। জানুয়ারি শেষে ব্যাংকটির ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ার আছে বিদেশিদের কাছে।

বিদেশিরা আরও যেসব ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করেছে তার মধ্যে রয়েছে- এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি এবং উত্তরা ব্যাংক।

বিদেশিরা অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করলেও ২০২১ সালে আইএফআইসি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, এনসিসি ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ার কিনেছে। এর মধ্যে বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের দশমিক ৪১ শতাংশ শেয়ার আছে বিদেশিদের কাছে, যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ছিল দশমিক ৩৩ শতাংশ। এনসিসি ব্যাংকের দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার আছে বিদেশিদের কাছে, যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ছিল দশমিক ৪৪ শতাংশ।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কোনো শেয়ার বিদেশিদের কাছে ছিল না। তবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এসে ব্যাংকটির দশমিক ১৬ শতাংশ দখলে নেয় বিদেশিরা। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি শেষেও ব্যাংকটির দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিদেশিদের কাছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে আইএফআইসি ব্যাংকের ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিদেশিদের কাছে, যা গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭৯ শতাংশ।

অন্যদিকে দুটি ব্যাংকে বিদেশিদের শেয়ার ধারণের চিত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর মধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দশমিক শূন্য এক শতাংশ শেয়ার আছে বিদেশিদের কাছে। আর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার আছে বিদেশিদের কাছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ৯ মাস আগের তুলনায় এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৪ শতাংশ বেশি। আর বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেশি ৭ শতাংশ।

বিদেশিদের ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার কারণ হিসেবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। কাজেই ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা নেই। এ কারণেই বিদেশিরা ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যারা ঋণখেলাপি, তাদের নানা রকম সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে ঋণখেলাপি করা যাবে না। সুতরাং, আর্থিক প্রতিবেদনে ঋণখেলাপি দেখাচ্ছে না। আবার ঋণের সুদ আদায় না করেই আয় হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এসব নানা রকমের ঝামেলা আছে।

এ নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, কতগুলো ব্যাংকের ওপর বিদেশিদের কোনো আস্থা নেই। সুতরাং, ব্যাংক খাতের ওপর আস্থার একটা অভাব আছে। এছাড়া এখানে (ব্যাংক খাত) স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এটা আস্থাহীনতার দিকে নিয়ে যায়। এখানে সুশাসনের অভাব আছে। আবার ব্যাংকের বিনিয়োগ আয় কমে আসছে। এসব কারণেই ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করছে বিদেশিরা।
সূত্র: জাগোনিউজ

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত