‘ব্যাংকে টাকা রাখলে লাভ পাওয়া যায় না’

| আপডেট :  ২৪ মার্চ ২০২২, ১০:৪৮  | প্রকাশিত :  ২৪ মার্চ ২০২২, ১০:৪৮

দ্রব্যমূল্য সামাল দিতে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। কেউ আবার ‘ব্যাংকে টাকা রাখলে লাভ পাওয়া যায় না’ বলেও টাকা সরিয়ে অন্য কোথাও খাটানোর চেষ্টা করছেন। আমানতকারীদের যখন এ অবস্থা, তখন খোদ ব্যাংকগুলোই শেয়ারবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ঝুঁকছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দুই বছর আগে গঠিত হওয়া ব্যাংকগুলোর বিশেষ তহবিলের (পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য) পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ পর্যন্ত ৩৬টি ব্যাংক সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। যার মধ্যে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

এ বিনিয়োগ থেকে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা গেছে সম্প্রতি তালিকাভুক্ত হওয়া বেসরকারি খাতে দেশের প্রথম সুকুক বন্ড বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল ইস্তিসনায়। বেক্সিমকোর সুকুকে ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ দুই হাজার ২২০ কোটি টাকা, যা বন্ডটির মোট আকারের ৭৪ শতাংশ। বিশেষ তহবিলের বাইরে আরও প্রায় ৯০০ কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল থেকেও বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ব্যাংকগুলো যাতে শেয়ারবাজারে টাকা ঢালে, তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সায় আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, শেয়ারবাজারে ব্যাংক যাতে বাড়তি টাকা ঢালতে পারে এবং এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন সায় দেয়, সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকেও এক ধরনের নির্দেশনা আছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকগুলোকে জোর খাটিয়ে শেয়ারবাজারে আনা উচিত হচ্ছে না। ব্যাংকের টাকা মূলত আমানতকারীদের। এটা ঝুঁকির মুখে ফেলা ঠিক নয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমানতকারীদের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে ক্ষমতা আছে সেটা প্রয়োগ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে গ্রাহকের আমানত ছিল ১৪ লাখ ৬২ হাজার ১৯ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে আমানত দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, এই সময়ে ব্যাংক খাত থেকে ৫২ হাজার ৮৪ কোটি টাকা চলে গেছে।

এদিকে গত ৯ মার্চ শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের প্রধান হিসাব কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বৈঠকের পরই ঘুরে দাঁড়ায় দেশের শেয়ারবাজার।

অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী বেশ কিছু ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। আর তা সামাল দিতে এক ব্যাংক ছুটছে আরেক ব্যাংকে। এতে আন্ত-ব্যাংক কলমানি ও রেপোর সুদ হার বেড়েছে। টাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকেরও দ্বারস্থ হচ্ছে অনেক ব্যাংক।

জানা গেছে, করোনার অজুহাতে নিয়মিত ঋণের পাশাপাশি প্রণোদনার টাকা যথাসময়ে ফেরত না আসা, রেমিট্যান্স ও সুদ হার কমিয়ে দেওয়ায় আমানতের প্রবৃদ্ধি ব্যাপক হারে কমে যাওয়া ও আমদানির চাপে ডলার কিনে এলসির দায় পরিশোধের কারণে ব্যাংকগুলোর এ সংকট দেখা দিয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে বেসরকারি খাতে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর করা হয়। এরপর থেকেই আমানতের সুদহার ব্যাপক হারে কমতে শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমানতকারীদের সুরক্ষায় ২০২১ সালের আগস্টে আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে আমানত নিতে অনাগ্রহ দেখায় কিছু ব্যাংক। কিন্তু এখন ঋণের চাহিদা বাড়ায় ওরাই বেশি বিপদে। আবার এমন অবস্থার মধ্যেও ১১টি ব্যাংক তাদের নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে ঋণ বিতরণ করেছে। এতেও ব্যাংক খাতে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দুই কারণে নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। একটি হলো—সুদ কমে যাওয়ায় আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। দ্বিতীয়ত, নেট ফরেন অ্যাসেট কমেছে।

এদিকে রেমিট্যান্স কমার কারণেও আমানত কমেছে। একইসঙ্গে বেড়েছে ঋণ চাহিদা। তাই ব্যাংকগুলো বাড়তি সুদে আমানত সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত