ভারতের সহিংসতা ও বিভাজনমূলক নীতিতে উদ্বেগ জানিয়ে ইউরোপীয় সংসদে প্রস্তাব পাস

| আপডেট :  ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৫  | প্রকাশিত :  ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৫


ভারতের সহিংসতা ও বিভাজনমূলক নীতিতে উদ্বেগ জানিয়ে ইউরোপীয় সংসদে প্রস্তাব পাস

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


ভারতে সহিংসতা, ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী বক্তব্য ও বিভেদমূলক নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। চলতি বছরই দেশটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনের আগে ইউরোপীয় সংসদে গৃহীত হলো এমন প্রস্তাব। প্রস্তাবে ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ড, দেশটিতে প্রচলিত বিদেশীদের সহায়তা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন এবং নাগরিক ও সংগঠনের বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের নেতিবাচক প্রভাব ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে।

উল্লেখ্য, বিদেশীদের সহায়তা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইনের মাধ্যমে ভারত একাধিক গবেষণা ও বেসরকারি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চলতি সপ্তাহেই দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের ফরেন কন্ট্রিবিউশন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালার লাইসেন্স বাতিল করেছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে মেইতি ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘাত চলমান রয়েছে। গত মে মাসে শুরু হওয়া এ সংঘাতের ফলে রাজ্যে ২০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। এটিসহ দেশটিতে চলমান অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া বন্ধ করারও আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বলেছে, জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা সম্পর্কিত ‘‌উদ্বেগজনক পরিস্থিতি’ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমঝোতা ও ভালো প্রতিবেশীর সম্পর্ক বজায় রাখতে ইউরোপীয় কাউন্সিল এবং ইউরোপীয় কমিশনেরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা উচিত।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ভারতীয় সংসদে পাস হওয়া নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইনে বলা হয়— বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মুসলমান ছাড়া ছয়টি সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুদের ৬ বছর ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার শর্তে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। ইউরোপীয় সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভারতের এ আইনকে ‘ভয়ঙ্কর বিভাজনকারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনটি সম্পর্কে বলা হয়, দেশটিতের ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করে এ ধরনের অন্যান্য আইনগুলোর সঙ্গে সঙ্গে এই আইনটিও গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।

মুসলিমদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে পাস হওয়া আইনটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। আইনটির ফলে ভারতে বসবাসকারী মুসলমানদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। অনেকেই মনে করেন, আইনটি তাদের ‘‌‌ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনসে’ নিবন্ধিত করাসহ নানাবিধ হয়রানি ও ভোটাধিকার বঞ্চিত করার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস হলো দেশটিতে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের চিহ্নিত করার প্রস্তাবিত একটি ব্যবস্থা।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ভারতে মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশকর্মী, আদিবাসী ও দলিত অধিকারকর্মী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী, সাংবাদিক ও অন্যান্য নাগরিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় কমিশনের দেশটির সঙ্গে কাজ করা উচিত। এছাড়া নাগরিক অধিকারকর্মীদের ক্রিয়াকলাপে নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করার জন্য দেশটিতে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিদেশী তহবিল ও সন্ত্রাস সংক্রান্ত আইন প্রয়োগ বন্ধ করার প্রয়োজন রয়েছে বলেও ওই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সহযোগী ইইউ অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ক্লাউদিও ফ্রাঙ্কাভিলা বলেছেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবটি মূলত নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধেই অভিযোগ। দেশটির অপরাপর আন্তর্জাতিক অংশীদারদের নীরবতা ভারতকে ক্রমাগত আইন অপব্যবহারে উৎসাহ যুগিয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এই নীরবতা ভাঙার জন্য প্রশংসার দাবিদার। অন্যান্য ইইউ প্রতিষ্ঠান, ইইউ সরকার এবং ভারতের পশ্চিমা অংশীদারদের মোদি সরকারকে স্পষ্ট করে দেয়া উচিত, মানবাধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ বিশ্বমঞ্চে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিণতি ডেকে আনবে।

সূত্র: স্ক্রল ডট ইন

বিবার্তা/লিমন 

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত