মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত কি না বুঝবেন যেভাবে

| আপডেট :  ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৫:২২  | প্রকাশিত :  ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৫:২২


মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত কি না বুঝবেন যেভাবে

স্বাস্থ্য

লাইফস্টাইল ডেস্ক


সম্প্রতি ভাইরাসবাহী মাঙ্কিপক্স আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো মাঙ্কিপক্সের আতঙ্ক বাংলাদেশেও রয়েছে। ভাইরাসবাহী এই রোগে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সরকারও। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি আর রোগের ধরন ও লক্ষণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনাও চলছে। এই রোগের বিস্তারিত জানতে চলছে বিভিন্ন গবেষণাও। একদল গবেষক বলছেন, চিকেন পক্স ও মাঙ্কিপক্স প্রায় একই প্রজাতির। তবে আরেক দল গবেষক জানাচ্ছে, এই দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

মাঙ্কি পক্স সম্পর্কে অনেকেরই এখনো তেমন কোনো ধারণা নেই। চিকিৎসকদের মতে, এটি এক বিশেষ ধরনের বসন্ত রোগ। প্রাণিদেহের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ানোর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

সম্প্রতি অত্যন্ত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে কঙ্গোতে ৪৫০ জন মারা গেছেন এরই মধ্যে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আফ্রিকার কিছু অংশে এমপক্স বা মাঙ্কি পক্স প্রাদুর্ভাবকে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

এটি এখন মধ্য ও পূর্ব আফ্রিকার কিছু অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ও উচ্চ মৃত্যু হার নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরাও। ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, আফ্রিকা ও এর বাইরেও এম পক্স ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে।

মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক কিছু উপসর্গ
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, পেশিতে ব্যথা, গায়ে হাত পায়ে ব্যথার মতো কিছু প্রাথমিক উপসর্গ তো রয়েছেই। এ ছাড়াও মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে। শরীরে ছোট ছোট অসংখ্য ক্ষতচিহ্নের দেখা যায়। ক্রমশ সেই ক্ষত আরও গভীর হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গুটি বা জল বসন্তের সঙ্গে মাঙ্কি পক্সের উপসর্গের দিক থেকে সাদৃশ্য থাকায় অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগকে বসন্ত বা চিকেন পক্স বলে ভুল করছেন।

** লসিকা গ্রন্থি: গলা ও মাথার পেছন, কুচকি ও বগলে এই লসিকা গ্রন্থি থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অংশ হিসেবে এই গ্রন্থি রোগ প্রতিরোধের কোষ জমা রাখে। ভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে এই গ্রন্থিগুলো ফোলা শুরু করে।

চিকেন পক্স ও মাঙ্কি পক্সের মধ্যে পার্থক্য
উপসর্গ এক হলেও, এই দুটি রোগ এক নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাধারণ কিছু দিক থেকে একই হলেও এই দুটি রোগের মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। মাঙ্কিপক্স সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস। এই রোগ নিরাময়ের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। অন্যদিকে চিকেন পক্স রোগটির প্রতিকার রয়েছে। এছাড়া আরও পার্থক্য নির্ণয় করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকেন পক্স ‘ভ্যারিসেলা ভাইরাস’-এর কারণে হওয়া একটি ছোঁয়াচে রোগ। চিকেন পক্সে রোগীর শরীরে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ফুসকুঁড়ি হতে শুরু করে। ১০ দিন পর থেকে তা শুকোতে শুরু হয়। অন্যদিকে মাঙ্কি পক্সে ৩ দিনের মধ্যেই শরীরে  ফুসকুড়ি দেখা যায়। ২১ দিন পর্যন্ত এই রোগ স্থায়ী হতে পারে।
চিকেন পক্স নিরাময়ের ওষুধ রয়েছে। মাঙ্কিপক্সের নিরাময়ে কোনো পদ্ধতি এখনো নেই। চিকেন পক্সের ওষুধ মাঙ্কিপক্স নিরাময়ে কার্যকরীও নয়।
চিকেন পক্সে লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হয় না। অন্যদিকে মাঙ্কিপক্সে কারণে শরীরের লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যায়।

কতটা সংক্রামক এই ভাইরাস?
মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বাড়তে পারে সংক্রমণের আশঙ্কা। শ্বাসনালি, শরীরে তৈরি হওয়া কোনও ক্ষত, নাক কিংবা চোখের মাধ্যমেও অন্যের শরীরের প্রবেশ করতে পারে মাঙ্কি ভাইরাস। বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে এটাই ধারণা করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, সঙ্গমের মাধ্যমেও একে অপরের শরীরে হানা দিতে পারে এই ভাইরাস। আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক মিলনেও মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকেন পক্সের মতো রোগের প্রতিকার থাকলেও এই বিরল রোগ নিরাময়ের এখনো পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আফ্রিকায় মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিবার্তা/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত