মাটি কাটার কাজ করছেন প্রধান শিক্ষক, তাতেও দিলেন ঘুষ

| আপডেট :  ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৭:৩০  | প্রকাশিত :  ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৭:৩০

নন-এমপিভুক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি করেন নুরুল ইসলাম। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে বিনা বেতনে ওই এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তিনি। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে চরম বিপাকে পড়েন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

আত্মমর্যাদা জলাঞ্জলি দিয়ে নুরুল ইসলামের মতো আরও চার শিক্ষক কাজ নেন সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে। কিন্তু সেখানে তারা প্রতারিত হয়েছেন। পাননি ন্যায্য মজুরিও। তারপরও দিতে হয়েছে ঘুষ।

এর প্রতিকার চেয়ে নুরুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষক জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় এমপি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে তাদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। ঘটনাটি জেলার উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন সাহেবের আলগা ইউনিয়নে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আর জেলা প্রশাসক অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনওকে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ বছর আগে দুর্গম চরাঞ্চল ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ১০ জন শিক্ষক নিয়ে ‘দৈ খাওয়ার চর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ গড়ে তোলেন। তখন থেকে এসব শিক্ষকরা বিনা বেতনে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান করে আসছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন মানুষ গড়ার কারিগররা।

কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেলে নুরুল ইসলামসহ তার বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করতে শুরু করেন। বাধ্য হয়েই সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ নেন তারা।

২০২০-২১ অর্থবছরে দুই ধাপে ৮০ দিন কাজ করেন। দুইশ টাকা মজুরি হারে জনপ্রতি ১৬ হাজার টাকা হয় তাদের মজুরি। গত ৩০ জুলাই ওই ইউনিয়নে শ্রমিকদের মজুরির টাকা বিতরণ করা হয়।

অভিযোগকারী নুরুল ইসলামের বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মজুরির টাকা নিয়ে বের হতেই বারান্দায় বসে থাকা আলী হোসেন, ইউসুফ আলী ও আয়নাল হক মৃধা প্রত্যেক উপকারভোগীর কাছ থেকে জোড় করে ৪ হাজার টাকা নিয়ে নেন।

তিনি বলেন, এ সময় আমিসহ অন্য শিক্ষকরা চার হাজার করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউসুফ আলী গংরা হুমকি-ধমকি দেন। তারা বলেন- উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর নির্দেশে টাকা তোলা হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়েই তিনিসহ তার স্কুলের শিক্ষক মনসুর আলী, শাহীন আলম, শহিদুল আলম এবং শহিদুল ইসলাম তাদের ২০ হাজার টাকা দেন। পরে অসহায় শিক্ষকরা তাদের দেয়া ২০ হাজার টাকার মধ্যে ১০ হাজার ফেরত চেয়ে হাতে পায়ে ধরলেও মন গলেনি স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানের। বরং তারা উল্টো তাদের জীবননাশের হুমকি দেন।

তিনি আরও বলেন, গত ৩ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে ফোন দিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় এমপি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগে দায়ের করেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ভিডিও ফুটেজ দেখে সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ওই শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ এখনো পাইনি বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, একজন শিক্ষক কতটুকু অসহায় হলে শ্রমিকের কাজ করতে পারেন। আর তাদের ন্যায্য মজুরি জোরপূর্বক হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ঘৃণিত। শুধু এসব শিক্ষকদের নয়, সেখানে বেশির ভাগ উপকারভোগীর কাছ থেকে একইভাবে ৪ হাজার করে টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে এর সত্যতা পাই। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করব।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত