মোবাইল সেট চোরাকারবারি চক্রের হোতাসহ গ্রেফতার ২০

| আপডেট :  ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৪  | প্রকাশিত :  ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৪


মোবাইল সেট চোরাকারবারি চক্রের হোতাসহ গ্রেফতার ২০

বিবার্তা প্রতিবেদক


রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মোবাইল চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় অবৈধ মোবাইল চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতাসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে ৯০০টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি ও বিদেশি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার (১ মার্চ) রাতে রাজধানীর গুলিস্তান, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইলফোন খুঁজে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইএমইআই নম্বর। কিন্তু চক্রটি ৩-৭ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে সেই আইএমইআই নম্বরটি পাল্টে ফেলে।

র‍্যাব জানায়, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন গ্রেফতারকৃত চক্রটি। এইসব মোবাইল ফোন স্বল্পদামে ফের মার্কেট বিক্রি হচ্ছে। এই ফোন স্বল্প দামে বিক্রি হওয়া চাহিদাও বেশি। এই চক্রটি ২০ হাজারের অধিক আইএমইআই পরিবর্তন করেছেন। চক্রটি ৫০০ থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত এই মোবাইলগুলো বিক্রি করতেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- হাফিজুর রহমান (৩৫), রনি আহমেদ ইমন (২৯), জসিম উদ্দিন (৩৫), জামাল উদ্দিন (৫০), আবুল মাতুব্বর (৪২), আহম্মদ আলী (৩৫), কামাল (৪০), বাপ্পি (২৯), আবিদ হোসেন সনু (৩৮), রবিন ভূইয়া (২১), আরিফুল হোসেন (২২), ইব্রাহিম মিয়া (৪০), সুজন (২৯), দেলোয়ার (৩৩), আব্দুর রহমান (১৯), রাজু (২৭), জিহাদ হোসেন (২৪), মুনাইম (৩৮), রাজু (৪৫) ও রফিক (৩৮)।

গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে ৫৪২টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ৩৪১টি বাটন মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার, ১টি হিটগান, ইলেকট্রনিক সেন্সর ডিভাইস, আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন টুলস, ছিনতাই এর কাজে ব্যবহৃত ৬টি চাকু, ১টি ল্যাপটপ, ১টি এলসিডি মনিটর ও ১১ হাজার ৬০০টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা মোবাইল চোরাকারবারি চক্রের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্যও প্রদান করেন।

২ এপ্রিল, মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ অসাধু দুষ্কৃতিকারী চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত চোরাই ও ছিনতাইকৃত বিভিন্ন আধুনিক মডেলের এনড্রয়েড মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলিস্তান, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।  

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা মূলত ৪টি চক্রে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘ ৫-৬ বছর যাবত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এসকল মোবাইল চোরাকারবারির সাথে জড়িত রয়েছে। তারা মোবাইল চুরি, ছিনতাই ও আইএমইআই পরিবর্তনের কারিগর। চক্রটি চোরাইকৃত মোবাইল ফোনগুলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করে থাকে। গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান, রবিন ভ‚ইয়া ও হাফিজুর রহমান মোবাইল ছিনতাই করে পরবর্তীতে চক্রের মূলহোতা রাজু, সুজন ও আবুল মাতুব্বরসহ অন্যান্যদের নিকট স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়। এছাড়াও তারা অন্যান্য ছিনতাইকারীর নিকট থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে থাকে। গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার এবং আবুল মাতুব্বর মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর। তারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনগুলোর আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত দেলোয়ারের নেতৃত্বাধীন চক্রটি গুলিস্তান এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের নিকট হতে ২৯১টি স্মার্ট ফোন এবং ১৭৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আরিফুলের নেতৃত্বাধীন চক্রটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের নিকট হতে ১০৬টি স্মার্ট ফোন এবং ৫৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আবুল মাতুব্বর নেতৃত্বাধীন চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের নিকট হতে ৯১টি স্মার্ট ফোন এবং ২৪টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ইমনের নেতৃত্বাধীন চক্রটি খিলগাঁও এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের নিকট হতে ৫৪টি স্মার্ট ফোন এবং ৭৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চুরি ও ছিনতাইকৃত মোবাইল বিক্রির সময় তারা ক্রেতাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে আইএমইআই পরিবর্তনের নিশ্চয়তা প্রদান করে। পাশাপাশি তারা মোবাইলের কেসিন, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে। গ্রেফতারকৃতরা নিজেরা সকলেই চোরাইকৃত মোবাইলের পরিবর্তিত আইএমইআই নম্বরের ফোন সেট ব্যবহার করে থাকে। গ্রেফতারকৃত এই চক্র ২০ হাজারের অধিক মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে বলে জানায়। ব্রান্ড এবং কোয়ালিটি ভেদে এসব মোবাইলের দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভালো মানের মোবাইলগুলো তারা মোবাইল মেরামত করার দোকানে বিক্রি করে থাকে। অন্যান্য মোবাইল ফোনগুলো বিভিন্ন মার্কেটের সম্মুখে ভ্রাম্যমাণ টেবিলে করে বিক্রয় করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এই সকল ফোন বিভিন্ন অপরাধীরা ক্রয় করে বিভিন্ন গুরুতর অপরাধকর্মে ব্যবহার করে পরবর্তীতে ফেলে দেয়।

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার এর বিরুদ্ধে রাজধানীর বংশাল, শাহবাগ এবং কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। দেলোয়ারের সহযোগী রাজু এবং জিহাদ এর বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত অপর মূলহোতা আরিফুল এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানায় মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে মোনায়েম, রফিক ও আরিফুল ইতোপূর্বে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো পূর্বের পেশায় লিপ্ত হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত