যুক্তরাষ্ট্রকে বদলে দেওয়া সেই তিন ঘণ্টার বর্ণনা

| আপডেট :  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৭  | প্রকাশিত :  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৭

দিনটি ছিল ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১। মার্কিন মুলুকে সবে মাত্র সকাল। ব্যস্ততম শহরগুলোর একটি নিউ ইয়র্ক। অন্যদিনের মতো যে যার কর্মস্থলে যোগ দেন। কিন্তু মুহুর্তেই যেন সব বদলে গেলো। নিউ ইয়র্কে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুইটি ভবনে বিমান নিয়ে হামলা চালায় আল কায়েদার জঙ্গিরা। হামলার শিকার হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। এমন বর্বরতায় তিন ঘণ্টার মধ্যেই স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা দেশ। স্তম্ভিত হয় সারা দুনিয়া। প্রাণ হারায় প্রায় তিন হাজার মানুষ। ইতিহাসের পাতায় ৯/১১ নামে স্থান করে নেয় দিনটি।

ভোর ৭টা ৫৯ মিনিট: লস অ্যাঞ্জেলেসগামী আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১১ বোস্টনের লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। ৮১ জন যাত্রী ও ১১ জন ক্রু নিয়ে যাত্রা করা ফ্লাইটটিতে ছিল পাঁচ হাইজ্যাকারও।

সকাল ৮টা ১৪ মিনিট: ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭৫, ৫৬ জন যাত্রী ও ৯ জন ক্রু নিয়ে লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টেক অফ করে। এটিও যাচ্ছিল লস অ্যাঞ্জেলেস এবং এতেও ছিল পাঁচ হাইজ্যাকার।

৮টা ১৯ মিনিট: ফ্লাইট ১১-এর ক্রু মেম্বাররা জানান, বিমান হাইজ্যাক করা হয়েছে। এর কয়েক মুহূর্ত আগে ড্যানিয়েল লেউইন নামের এক যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে এক হাইজ্যাকার।

সকাল ৮টা ২০ মিনিট: আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৭, লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাওয়ার জন্য ওয়াশিংটন ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টেক অফ করে।

৮টা ৪২ মিনিট: সান ফ্রান্সিসকোগামী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৩ বিলম্বের পর নেওয়ার্ক থেকে টেক অফ করে। এতে ছিলেন সাতজন ক্রু, ৩৩ জন যাত্রী ও চার হাইজ্যাকার।

৮টা ৪৬ মিনিট: ফ্লাইট ১১ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারের উত্তর দিকে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ৯২ জন নিহত হয়।

৮টা ৫০ মিনিট: প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে বিমান বিধ্বস্তের বিষয়টি অবহিত করা হয়।

৮টা ৫০-৮টা ৫৪ মিনিট: সাউদার্ন ওহাইয়োর আকাশে হাইজ্যাক হয় ফ্লাইট ৭৭।

৯টা ৩ মিনিট: ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাউথ টাওয়ারের দক্ষিণ দিকে বিধ্বস্ত হয় ফ্লাইট ১৭৫।

৯টা ২৮ মিনিট: ওহাইয়োর উত্তরাঞ্চলের কোথাও হাইজ্যাক হয় ফ্লাইট ৯৩।

৯টা ৩৭ মিনিট: ফ্লাইট ৭৭ পেন্টাগন ভবনের পশ্চিমাংশে বিধ্বস্ত হয়। এতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

৯টা ৪৫ মিনিট: যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) সব বিমানকে অবতরণ করার নির্দেশ দেয়। সব ফ্লাইটকে নিকটবর্তী বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বলা হয়।

৯টা ৫৭ মিনিট: ফ্লাইট ৯৩-এর যাত্রীরা হাইজ্যাকারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে।

৯টা ৫৯ মিনিট: ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাউথ টাওয়ার ধসে পড়ে। ফ্লাইট ১৭৫ বিধ্বস্ত হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর প্রভাব দেখা দেয়। আট শতাধিক মানুষ নিহত হয়।

১০টা ৩ মিনিট: ফ্লাইট ৯৩ পেনসিলভানিয়ার শ্যাঙ্কসভাইলের একটি ক্ষেতে বিধ্বস্ত হয়। যাত্রীরা ককপিটে প্রবেশের ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৪০ জন নিহত হয়, তবে হাইজ্যাকাররা বেঁচে যায়।

১০টা ২৮ মিনিট: ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ার ধসে পড়ে। ওই ভবন ও আশেপাশের ভবনের এক হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।

১০টা ৫০ মিনিট: পেন্টাগনের পশ্চিম পাশের পাঁচ তলা ভবন ধসে পড়ে।

১১টা ২ মিনিট: নিউ ইয়র্কের মেয়র রুডি গিলিয়ানি লোয়ার ম্যানহাটন খালি করার নির্দেশ দেন।

ওই দিন রাত ৮টা ৩০ মিনিটে হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট বুশ ঘোষণা দেন এই জঘন্য হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে।

সেদিনের ঘটনার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ উঠে বিশ্বজুড়ে। জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদাকে নিশ্চিহ্ন করতে আফগানিস্তানে পা রাখে পশ্চিমা বাহিনী। সে সময় আল কায়েদার নেতা ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অভিযান চালিয়ে তাকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী।

২০০১ সালের ওই ভয়াবহ বিমান হামলার পর থেকে প্রতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর হতাহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে যুক্তরাষ্ট্র। দিনটিকে ঘিরে জাতীয়ভাবে নানা আয়োজন হয়ে থাকে। যারা সেদিন নিহত হলেন, তাদের প্রত্যেকের নাম স্মরণীয় হয়ে আছে বিধ্বস্ত টুইন টাওয়ারের স্থলে নির্মিত স্মৃতিসৌধে। একটি জলাধারের পাশে নির্মিত উঁচু বেদিতে নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির নাম উৎকীর্ণ করা আছে। প্রতি বছর এখানে নিহতদের স্বজনরা প্রতিটি নাম উচ্চারণ করে স্মৃতি ও ভালোবাসায় তাদের জীবন্ত করে তোলেন।

সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত