যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি-অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে: হাইকোর্ট

| আপডেট :  ০২ জুলাই ২০২৪, ০৮:১৫  | প্রকাশিত :  ০২ জুলাই ২০২৪, ০৮:১৫


যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি-অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে: হাইকোর্ট

জাতীয়

বিবার্তা প্রতিবেদক


দুর্নীতি ও অর্থ পাচার সুশাসন ও উন্নয়নের অন্তরায়, তাই যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি-অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

২ জুলাই, মঙ্গলবার সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল ও প্রকাশে করা রিট শুনানিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, হাইকোর্ট বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় দেখা যাচ্ছে অনেক সরকারি কর্মকর্তা অঢেল সম্পদের মালিক হচ্ছেন। এটা বাঞ্ছনীয় নয়।

হাইকোর্ট আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ গড়তে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি-অর্থ পাচার দিয়ে সোনার মানুষ গড়া যায় না। এর জন্য সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। একে আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। সবাইকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আদালত আরও বলেন, ভারতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী সংক্রান্ত আইন আছে। সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হয়। আবার অবসরে যাওয়ার আগেও দিতে হয়। দুই হিসাবের মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি হেরফের হলেই ধরা হয়। আমাদের দেশে আইন আছে। কিন্তু প্রয়োগ নেই।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম ফজুলল হক।

শুনানি শেষে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সম্পদ বিবরণীর ঘোষণা এবং সময়ে সময়ে দাখিলের বিধি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত।

শুনানিতে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের বরাতে রিটকারী আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস বলেছেন, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি ব্যাপক দুর্নীতি করছেন। বিভিন্ন সময় খবর-প্রতিবেদনে এসেছে, তারা অর্থ পাচার করেছেন এবং এ নিয়ে বিবাদীদের উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই। এর ফলে জনগণ তাদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।

সুবীর নন্দী আরও বলেন, সংসদ সদস্যরা সরকারি কর্মচারীর মতো সরকারি কোষাগার থেকে কোনো বেতন পান না। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ ১২(৩)(খ) অনুসারে সংসদ নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে সম্পদের বিবরণী এবং আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয় জনগণের করের টাকা থেকে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) দেওয়া তথ্যমতে, রাজস্বের ৪৩ শতাংশ খরচ করা হয় তাদের বেতন-ভাতা বাবদ। সুতরাং তাদের সম্পদের বিবরণী জানার অধিকার জনগণের আছে। অথচ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর ১৩(১) (২) বিধিমালা অনুসারে চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় সম্পদের ঘোষণা এবং প্রতি ৫ বছর পর পর সম্পদ বিবরণী দেওয়ার বিধান আছে। দুর্নীতি ঠেকাতে এই বিধানের যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার।

তিনি আরও বলেন, সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই বেনজীর-মতিউরদের মতো শীর্ষ পদধারীদের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তখন আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে। এ রকম ব্যক্তিরা শীর্ষ পদে থাকলে তারা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন না তাদের সম্পদ রক্ষা করবেন। স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রে, জনগণ, সার্বভৌমত্ব রক্ষা না করে তারা তাদের নিজেদের সম্পদই রক্ষা করবেন।

বিবার্তা/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত