যে শর্তে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেবে ইভ্যালি

| আপডেট :  ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০৫  | প্রকাশিত :  ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০৫

প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি তাদের কার্যক্রম আবার শুরু করছে। প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন বলেছেন, আমাদের দেনা পরিশোধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। আগামী একবছর নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসা করতে পারলে বিনিয়োগ পাওয়া সম্ভব।

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। দেনা পাওনার পূর্ণাঙ্গ হিসাব করতে ইভ্যালির সার্ভার চালু করার কথা জানিয়ে শামীমা নাসরিন বলেন, সার্ভার ওপেন করতে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলকে প্রয়োজন। গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে একবছর নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসা করতে চায় ইভ্যালি

ইভ্যালি কোনো টাকা পাচার করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইভ্যালি মানিলন্ডারিং করার মতো কোনো অপরাধ করেনি। টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে আমরা দুবাইও যাইনি।

ইভ্যালির সার্ভার খুলতে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলকে প্রয়োজন জানিয়ে শামীমা নাসরিন বলেন, এ ব্যাপারে আমরা হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত ও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাবো। অ্যামাজনের সঙ্গে আমরা যোগোযোগ করছি, তারা রিকভারি কোনো প্লান দিতে পারে কি না।

তিনি বলেন, ১৫ অক্টোবর আমরা নতুন সার্ভারে নতুনভাবে ক্যাম্পেইন শুরু করবো। আমরা যদি ব্যবসা শুরু করতে পারি তাহলে ধীরে ধীরে রিকভারি করতে পারবো। আমাদের সব ডাটা অ্যামাজনে আছে। সার্ভার ওপেন হওয়া মাত্রই ক্রমানুসারে ও গুরুত্ব বুঝে যেসব পণ্য ওয়্যার হাউসে আছে এবং গেটওয়েতে যে টাকা জমা আছে সেগুলো ধীরে ধীরে ছাড়বো।

ইভ্যালির চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রাহক-মার্চেন্টের টাকা ফেরত দিতে চাই। তবে এখনই সময় বা ডিরেক্ট টাইম ফ্রেম জানাতে পারছি না। টাইম টু টাইম আপনাদের আপডেট জানাবো।

গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের দেনা পরিশোধ করতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগ। একটি যথাযথ পরিমাণে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। মূলত আমাদের লক্ষ্য ছিল ইভ্যালিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পর আমরা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেবো। আমরা চেয়েছিলাম বিদেশি বিনিয়োগ কম ভ্যালুয়েশনে না আসুক৷ কম ভ্যালুয়েশনে শেয়ার হস্তান্তর মূলত দেশীয় সম্পদের জন্য একটি বিরাট ক্ষতি। বাংলাদেশের এমন অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো সম্পূর্ণভাবে বিদেশি মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারী এখানে অর্থ বিনিয়োগ করলেও প্রাপ্ত মুনাফা তারা এই দেশ থেকে তাদের দেশে নিয়ে যাবে।

শামীমা নাসরিন বলেন, বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেট সাইজ অনুযায়ী ইভ্যালি মাল্টি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ তোলার সক্ষমতা রাখে। বর্তমানে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ পেতে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিজনেস করে বিনিয়োগকারীদের এটাকে একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উপস্থাপন করা। আমরা এই যাত্রায় প্রথমদিন থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইভ্যালিকে লাভজনক হিসেবে তুলে ধরার যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা মনে করি আগামী এক বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা করতে পারলে প্রথম বিনিয়োগ থেকেই সব দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত দুই বছর ধরে বিএফআইইউ এবং অন্যান্য সরকারি কোনো সংস্থা এখন পর্যন্ত ইভ্যালিতে মানিলন্ডারিং হয়েছে বলে এমন কোনো তথ্য পায়নি। আমাদের সব খরচের হিসাব ছিল।

শামীমা নাসরিন আরও বলেন, ইভ্যালির শুরু থেকে ব্যবসা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত ৫টি গেটওয়ে হতে যে লেনদেন হয়েছে সেসব লেনদেনের বিস্তারিত স্টেটমেন্ট আছে। পাঁচটি গেটওয়েতে জমা হওয়া এই টাকার হিসাব অডিট রিপোর্টেও প্রকাশিত হয়েছে। ইভ্যালির পরিচালনা বোর্ডের চাহিদা অনুযায়ী ৫টি গেটওয়ে থেকে পাওয়া লেনদেনের বিস্তারিত স্টেটমেন্টে টাকা কার কাছ থেকে জমা হয়েছে এবং কাকে দেওয়া হয়েছে তার বর্ণনা দেওয়া আছে। কিন্তু প্রতিটি গেটওয়ের লেনদেনের সংখ্যা লাখ লাখ হওয়ায় ইভ্যালির অ্যাকাউন্ট ডেবিট বা যার নামে/অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে, তা ব্যাক-এন্ড হতে টাকা গ্রহণকারীর সব তথ্য সংগ্রহ করে তা সরবারহ করা ৫টি গেটওয়ের কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না।

গ্রাহকের পূর্বের অর্ডার ফেরত পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের গোডাউনে প্রায় ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে৷ এই পণ্য দিয়ে অতীতের সব দায় মেটানো প্রায় অসম্ভব। তবে এই পণ্য দিয়ে যতটা সুষম বণ্টন সম্ভব, সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে পণ্যগুলো সার্ভার অন করার সঙ্গে সঙ্গে ডেলিভারি করা হবে। এই বিষয়ে আমরা হাইকোর্ট এবং বোর্ডের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবো। এই পণ্য গ্রাহকদের। তাই গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যেই এগুলো ব্যবহৃত হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত