রংপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

| আপডেট :  ০২ জুলাই ২০২৪, ০৩:১৫  | প্রকাশিত :  ০২ জুলাই ২০২৪, ০৩:১৫


রংপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

সারাদেশ

রংপুর প্রতিনিধি


ভারতের উত্তর সিকিমে ভারি বর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীসহ কয়েকটি নদীতে ফের দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ও ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।

রবিবার (৩০ জুন) ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। এতে করে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার ও যমুনা নদী এই বর্ষায় আগ্রাসী রূপ নিচ্ছে।

তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে তিস্তা নদীতে পানি বাড়া-কমায় ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। বেশ কিছু চরাঞ্চলের বাড়িঘরের চারপাশে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। তিস্তার তীরবর্তী কিছু এলাকার সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে। পাউবো কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনকবলিত পরিবারের অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতি সরিয়ে নিচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল সূর্যমুখী ক্বারী মাদ্রাসা, চিলাখাল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, উত্তর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এ ছাড়া কোলকোন্দ ও লহ্মীটারী ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না জানান, তিস্তা নদী এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এ সময় পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, রংপুর জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গত রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে আগামী বুধবার থেকে। সব মিলিয়ে সামনের এক সপ্তাহ দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী তীরবর্তী মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না।

দু’দিনের বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে গাইবান্ধার প্রধান চার নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। সেখানকার তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

এদিকে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চল ও এর উজানে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এতে করে উত্তরাঞ্চলের তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৩০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে রংপুর আবহাওয়া অফিস। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, তিস্তা নদী এলাকায় বন্যায় ও ভাঙনের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।

অপরদিকে বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তায় আগামী কয়েকদিন বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।

সাম্প্রতিক বন্যায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা মধ্যদিয়ে প্রবাহিত তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার ও যমুনা নদী এই বর্ষায় আগ্রাসী রূপ নেয়।

বিবার্তা/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত