রমজানে স্কুল বন্ধ চেয়ে বরখাস্ত হচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা

| আপডেট :  ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৩২  | প্রকাশিত :  ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৩২

প্রাথমিকে ছুটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ ও সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে কমপক্ষে ১০ সহকারী শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে দেশের অন্তত তিন ডজন শিক্ষককে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে গত ২৪ মার্চ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম ২০ রমজান পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই শিক্ষকরা এই সিদ্ধান্তের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে। এর ধারাবাহিকতায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মন্তব্য তুলে ধরেন। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতেই অধিদপ্তর থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পবিত্র রমজানের ছুটির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার নামে গুজব ছড়ানো হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো নির্দেশনায় দেননি। গুজব প্রতিরোধে মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছিলো। এরপরও অনেক শিক্ষক বিভ্রান্ত ছড়িয়েছেন। এসব শিক্ষককে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে অনেক শিক্ষককে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে।

দিনাজপুর সদর উপজেলার গৌরীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল লতিফ গত ২৯ মার্চ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাজার স্যালুট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অবশেষে প্রথম রোজা থেকেই দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিলেন দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ এই স্ট্যাটাসের ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন দিনাজপুর জেলা শিক্ষাকর্মকর্তা।

রংপুর ক্যাডেট কলেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রওশন আরা বীথিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনায় কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। তাকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে সন্তোসজনক জবাব দিতে আদেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মানিকগঞ্জ সদরের বান্দুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিল্পা রানী সরকার এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘অবশেষে প্রথম রোজা থেকেই সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

এছাড়া ছুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার একটি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক এস এম বাবুল আক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ফেসবুকে একটি অসত্য তথ্য পোস্ট করায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

অন্যদিকে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা চেয়ে এবং ২০ রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়েছে। রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ এ রিট দায়ের করেন। তবে এখন পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের আদেশই বহাল রেখেছেন।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো কর্মকর্তায় মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আমিনুল ইসলাম বলেছেন, পবিত্র রমজানে প্রাথমিকে ছুটি বাড়ছেনা। তিনি বলেন, গত দুই বছর প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেক শিশু পিছিয়ে গেছে। তাদের শিখন ঘাটতি মেটাতে রমজানে ক্লাস করানো হচ্ছে। আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাস চলবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত