রহিমা খাতুন যেভাবে খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ-চট্টগ্রাম ঘুরে ফরিদপুরে যান

| আপডেট :  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:০৯  | প্রকাশিত :  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:০৯

‘খুলনার গৃহবধূ রহিমা খাতুন কেন, কী কারণে নিখোঁজ ছিলেন- আমরা এখনও তা জানতে পারিনি। কারণ পুলিশ হেফাজতে আনার পর থেকেই তিনি আর কথা বলছিলেন না। তবে বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে জানা গেছে, রহিমা খুলনা থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর হয়ে চট্টগ্রাম যান। সেখান থেকে ফরিদপুরের বোয়ালিয়ায় কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে আসেন।’

শনিবার দিনগত রাত (২৫ সেপ্টেম্বর) পৌনে ২টার দিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন দৌলতপুর থানায় বসে কথাগুলো বলছিলেন।

তিনি বলেন, রাতে রহিমা কিছু খেতে চাননি। এখন কোনও কথা বলছেন না, ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করছেন। পুলিশ যখন বোয়ালিয়ার কুদ্দুসের বাড়িতে পৌঁছে তখন রহিমা সেখানে কুদ্দুসের স্ত্রী ও ভাইয়ের বউয়ের সাথে আড্ডায় মেতে ছিলেন। পুলিশ দেখার পরই তিনি নির্বাক হয়ে যান। এ সময় কুদ্দুস বাড়িতে ছিলেন না। তাই কুদ্দুসের স্ত্রী ও ছেলে এবং ভাইয়ের বউকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রহিমা তাদেরকে এখানে আসার কারণ কী বলছে তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা তেমন কিছুই জানাতে পারেননি। তারা রহিমার কাছে এ সব জানার চেয়ে সাবেক বাড়িওয়ালাকে সেবাযত্ন করতে বেশি তৎপর ছিলেন।

‘গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত ৭ দিন রহিমা এ বাড়িতে ছিলেন। রহিমা তাদেরকে জানায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর ও চট্টগ্রাম ঘুরে তিনি ফরিদপুরে এসেছেন। রহিমার সাথে প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় থাকায় তারা তেমন কোনও সন্দেহও করেননি। আর রহিমার ছেলে-মেয়েদের সাথেও কথা বলেননি।’

তিনি জানান, আমাদের কাজ ছিল রহিমাকে উদ্ধার করা। আমরা সেটা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। এ কাজটি করতে গিয়ে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা বিফল হয়। কারণ রহিমা তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চালু করেননি। এ কারণে আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করি। তাতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে। তারপরও আমরা সফল হয়েছি। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। আশা করছি— তারা এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হবে। আমরা আপাতত রহিমাকে কেএমপির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই রাখবো। তাকে সেবা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সুস্থ করে তুলবো আগে। এরপর যখনই চাইবে তখনই রহিমাকে আমরা পিবিআইতে হস্তান্তর করব।

উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রহিমা বেগম (৫২)। ঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেন না। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা সেখানে গিয়ে মায়ের ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সকল স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর মাকে পান না। এরপর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র‌্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন— খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল এবং হেলাল শরীফ। এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে প্রেরণের আদেশ দেন।

এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নথিপত্র ১৭ সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই খুলনা। এখন এ মামলার তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। ২২ সেপ্টেম্বর রহিমা মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। একই সাথে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক মহিলার লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন। এবং ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য সম্মত হন। ২৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের আদালতে ডিএনএ প্রোফাইল করার আবেদন করার কথা রয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত