রাজধানীতে ঠিকঠাক, জেলাগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং

| আপডেট :  ২০ জুলাই ২০২২, ০৯:৪৮  | প্রকাশিত :  ২০ জুলাই ২০২২, ০৯:৪৮

এলাকাভিত্তিক লোড শেডিংয়ের প্রথম দিনে রাজধানীতে শিডিউল মেনে একবার করে লোড শেডিং দেওয়া হচ্ছে। বাইরের জেলাগুলোয় তিন থেকে চারবার করেও লোড শেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে শহরের মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কম হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোড শেডিংয়ে ভুগছে গ্রামের মানুষজন। মঙ্গলবার বিভিন্ন প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেখা গেছে।

দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (আরইবি)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরইবির এক পরিচালক বলেন, ‘শিডিউল মেনে লোড শেডিং দেওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। কারণ আমরা চাহিদার চেয়ে অনেক কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি। একবার লোড শেডিং দিয়ে হিসাব মেলানো সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে একাধিকবার লোড শেডিং দিতে হচ্ছে। ’

আরইবি পরিচালক বলেন, ‘আমাদের চাহিদা আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আজ (গতকাল) বিকেলে চাহিদার চেয়ে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কম ছিল। রাতে এই ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দুই হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। তাই লোড শেডিং বেশি দিতে হয়েছে। ’

এদিকে রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আমাদের বিতরণ এলাকায় শিডিউল অনুযায়ী একবারের বেশি লোড শেডিং দিতে হয়নি। আজ (গতকাল) আমাদের বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ করতে পেরেছি প্রায় এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ’

চট্টগ্রামে গতকাল দিনেরবেলা গড়ে চারবার লোড শেডিং হয়েছে। রাতের পিক আওয়ারে এই লোড শেডিংয়ের পরিমাণ আরো বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী। ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে ক্ষণে ক্ষণে লোড শেডিংয়ের সময় পরিবর্তনের কারণে কোনো পরিকল্পনা কার্যকর করা যাচ্ছে না।

কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, এলাকাভিত্তিক লোড শেডিং পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সোমবার রাতে এনএলডিসি থেকে যে ধারণা দেওয়া হয়েছিল তাতে চট্টগ্রামে গতকাল মঙ্গলবার ১০০ মেগাওয়াটের মতো লোড শেডিং হওয়ার পূর্বাভাস ছিল। সে অনুযায়ী পরিকল্পনাও হয়েছিল; কিন্তু সকাল থেকে পূর্বাভাসের সঙ্গে বাস্তব লোড শেডিংয়ের মিল পাওয়া যায়নি। দিনেরবেলা ২০০ মেগাওয়াটের বেশি লোড শেডিং ছিল চট্টগ্রামে।

গাজীপুরে এলাকাভিত্তিক শিডিউল অনুযায়ী লোড শেডিং না হয়ে লোড শেডিং চলেছে আগের নিয়মেই। লোড শেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৬৫০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট। ২০০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি মোকাবেলায় লোড শেডিং করতে হচ্ছে দফায় দফায়। শিল্প-কারখানায় লোড শেডিং না করার সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। তাই শিল্প-কারখানায় লোড শেডিং করা হচ্ছে না।

সিলেটের হবিগঞ্জ বানিয়াচংয়ে গতকাল ভোর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চারবারে তিন ঘণ্টার বেশি লোড শেডিং হয়েছে। সন্ধ্যাকালীন ও রাত্রিকালীন লোড শেডিং ছাড়াই এই হিসাব। বেশ কয়েক দিন ধরেই এমন লোড শেডিং চলছে। বানিয়াচং পল্লী বিদ্যুৎ জোনালের জোনাল কর্মকর্তা পারভেজ ভূইয়া বলেন, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে গ্রাহকের সাময়িক অসুবিধা হবে।

পাবনায় এলাকাভিত্তিক লোড শেডিং শিডিউল ঠিক রাখতে পারছে না বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো। গতকাল পাবনার বিভিন্ন এলাকায় নির্ধারিত সময় ছাড়া অন্য সময় লোড শেডিং দেখা গেছে। ফলে লোড শেডিংয়ের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন অফিস-আদালত, বিপণিবিতাণে। পাবনা নেসকো ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাজেদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, শিডিউল দুই মেগাওয়াট ধরে লোড শেডিং করা হয়েছে, কিন্তু লোড শেডিং ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট তাই শিডিউল ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড (ওজোপাডিকো) গতকাল দুপুর পর্যন্ত লোড শেডিং শিডিউল তৈরি করতে পারেনি। দিনে একাধিকবার লোড শেডিং হচ্ছে। ফলে কোথায় কখন লোড শেডিং হচ্ছে—জানতে না পেরে ভোগান্তির শিকার হয়েছে এই অঞ্চলের গ্রাহকরা। গ্রাহকদের অভিযোগ, সোমবার রাত থেকে একাধিকবার বিদ্যুৎ কম্পানির ওয়েবসাইট ভিজিট করেও লোড শেডিংসংক্রান্ত তথ্য মেলেনি।

ওজোপাডিকো বলেছেন, লোড শেডিং সূচি প্রণয়নে কাজ চলছে। দ্রুতই তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

মানিকগঞ্জে দৈনিক দেড় শ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা; কিন্তু গতকাল ১০০ থেকে ১১০ মেগাওয়াট ছিল। যে কারণে মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একাধিকবার লোড শেডিংয়ের মাধ্যমে জেলার বিদ্যুতের চাহিদা মেটাচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য দিনের মতো গতকালও লোড শেডিং অব্যাহত ছিল। সোমবার রাত থেকেই বিভিন্ন উপজেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।

পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন ছয়টি উপজেলার এলাকায় আজ বুধবার থেকে প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর এক ঘণ্টা লোডিং দেওয়া হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিজস্ব ওয়েবসাইটে এলাকাভিত্তিক লোড শেডিংয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত