রাজশাহীতে বছরজুড়ে বইপড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ

| আপডেট :  ১০ মে ২০২৪, ০৭:২৪  | প্রকাশিত :  ১০ মে ২০২৪, ০৭:২৪


রাজশাহীতে বছরজুড়ে বইপড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ

সারাদেশ

রাজশাহী প্রতিনিধি


বছরজুড়ে বইপড়া কর্মসূচিতে নিজের উৎকর্ষতার পরিচয় দেওয়ায় রাজশাহী মহানগরীর ২ হাজার ২১২ জন বইপাগল শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও গ্রামীণফোন।

১০ মে, শুক্রবার সকালে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মো. হুমায়ন কবির পুরস্কার বিতরণী উৎসবের উদ্বোধন করেন।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গত পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে সারাদেশে স্কুলকলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নানাবিধ উৎকর্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দেশভিত্তিক উৎকর্ষ (বইপড়া) কার্যক্রম এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি। বর্তমানে সারাদেশে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১৭০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ লক্ষ ছাত্রছাত্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বইপড়াকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুরস্কারের ব্যবস্থা।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী মহানগরের ৫১টি স্কুলের প্রায় ৬ হাজার ছাত্রছাত্রী বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। এসব স্কুলের যে-সব ছাত্রছাত্রী মূল্যায়ন পর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে, তাদেরকে পুরস্কার প্রদানের জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমি, রাজশাহী মিলনায়তনে গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় এক বর্ণাঢ্য পুরস্কার বিতরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

এই উৎসবে চারটি পর্বে মোট ২ হাজার ২১২ জন ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ১৬৬০ জন শিক্ষার্থী সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে এবং ৫৫২ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক পুরস্কার গ্রহণ করে।

দিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া, বিশিষ্ট অভিনেতা, লেখক, ও অনুবাদক খায়রুল আলম সবুজ, গ্রামীণফোনের সার্কেল মার্কেটিং হেড মো. শাহিনুর রহমান এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন। এছাড়া অন্যান্য পর্বে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নাটোর শাখার সংগঠক অধ্যাপক অলোক মৈত্র, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক জুলফিকার মতিন, লেখক, ঔপন্যাসিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শহীদ ইকবাল, বিশ্ব-পরিব্রাজক ও লেখক তারেক অণু, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং সুজন এর সভাপতি ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র রাজশাহী শাখার সাবেক সংগঠক আহমেদ শফিউদ্দিন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক জনাব শামীম আল মামুন তাঁর স্বাগত বক্তব্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং এই বিশাল আয়োজনে ও পুরস্কারের বই স্পন্সরের জন্য গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বই মানুষের মনস্তাত্বিক বিকাশে সহায়তা করে। বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে জীবনে সার্বিক উন্নয়ন অনেকটাই সহজতর হয়, সেজন্য তিনি বেশি বেশি বই পড়তে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড.দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বিগত ৪৫ বছর ধরে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের নেতৃত্বে সারাদেশে বইপড়া আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বই পড়ার মাধ্যমে অনেক কিছু জানা যায়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও বই পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন। একটি উন্নত ও সুশৃঙ্খল জাতি গঠনে বই পড়ার গুরুত্ব অপিরসীম বলে জানান। সবাইকে বইপড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল শিক্ষার্থীসহ আগত সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, একটি দেশের জাতি সত্তা নির্মাণ করার জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বই পড়ার গুরুত্ব আমরা সবাই যদি অনুধাবন করি তাহলে আগামীতে আমাদের সন্তানরা নৈতিক ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

লেখক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ বলেন, পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের বই পড়ে চিন্তার জায়গায় সৎ হওয়ার পরামর্শ দেন কারণ আলোকিত মানুষ হতে হলে সৎ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে জানান।

গ্রামীণফোনের সার্কেল মার্কেটিং হেড মো. শাহিনুর রহমান তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন “তরুণরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই গ্রামীণফোন সবসময়ই তরুণদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগী। এরই ধারাবাহিকতায় বই পড়ার সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এমন মহতী উদ্যোগের সাথে থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত। তিনি আরও বলেন, সবার মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এবং বই পড়াকে আরও সহজ করে তুলতে গ্রামীণফোন ‘মাইজিপি’ অ্যাপের ‘বইমেলা’-এর মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে পছন্দের সব বই। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, বই পড়ার অভ্যাস সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে আলোকিত মানুষ গড়া।”

আজকের উৎসবে প্রতিটি স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত পুরস্কার, শুভেচ্ছা পুরস্কার, অভিনন্দন পুরস্কার ও সেরা পাঠক পুরস্কার শিরোনামে চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। আজকে ৫১টি স্কুলের ২ হাজার ২১২ জন ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কার প্রদান করা হয় তাদের মধ্যে স্বাগত পুরস্কার পেয়েছে ৭৫৫ জন, শুভেচ্ছা পুরস্কার পেয়েছে ৫৭৫ জন, অভিনন্দন পুরস্কার পেয়েছে ৭২৬ জন এবং সেরা পাঠক পুরস্কার পেয়েছে ১৫৬ জন।

বিজয়ী ১৬৬০ জন শিক্ষার্থীকে সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং ৫৫২ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকের হাতে পুরস্কার প্রদান করা হয় সেরা পাঠক বিজয়ীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতি ১০ জনে একটি হিসেবে মোট ১৫টি বিশেষ পুরস্কারও প্রদান করা হয়।

বিশেষ পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় ১০টি মূল্যবান বইয়ের একটি করে সেট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। দিনব্যাপী এই উৎসবের এ বিশাল আয়োজন ও পুরস্কারের বই স্পন্সর করছে গ্রামীণফোন লিমিটেড।

বিবার্তা/মোস্তাফিজুর/সউদ 

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত