রামগঞ্জে এমপির সমঝোতায় উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী!
লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৫ জন চেয়ারম্যান ও ৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করেছেন। যদিও এমপি-মন্ত্রীরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ-প্রভাব বিস্তার না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিকবার নির্দেশ, বিবৃতি দিয়েছেন। মাঠ পার্যায়ে নির্দেশনা মানছেন না খোদ সংসদ সদস্য। রবিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে রামগঞ্জ শহরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে প্রার্থীদের নিয়ে টানা ৭ ঘণ্টা বৈঠক হয়। এরপর সাদা কাগজে প্রার্থীদের সই নেওয়া, একক প্রার্থী ঘোষণা এবং ৩ কোটি টাকা দাম উঠানো নিয়ে উপজেলাব্যাপী তোলপাড় চলছে। খোদ এমপির বড় ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতার হোসেন খান নির্বাচনে এমপি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এ নিয়ে একাধিক প্রার্থী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেওয়া ১০ নেতা জানিয়েছেন, একক প্রার্থী করার স্বার্থে সেখানে উপস্থিত ৯ প্রার্থীর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়েছে। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদসহ ৬ নেতাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সেখানে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বক্তব্য শোনা হয়। নির্বাচনে ৩ কোটি টাকা খরচ করবেন জানালে দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চুকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় সোহেল রানা ও সুরাইয়া আক্তার শিউলীকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় লোকজন জানায়, আনোয়ার খান রবিবার সন্ধ্যায় ডাকবাংলোতে দলের সিনিয়র নেতা ও উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের ডাকেন। এতে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। রাত ৮টার দিকে এমপি সেখানে আসেন। একক প্রার্থীর করার স্বার্থে এমপি সেখানে উপস্থিত ৯ প্রার্থীর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেন। এজন্য যারা প্রার্থী নন- এমন ৬ জন নেতাকে এমপি দায়িত্ব দেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সাত্তার, বেলাল আহমেদ, এম এ মমিন পাটওয়ারী, সফি উল্যা, শামছুদ্দিন, সফিক মিয়া। এমপি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা একে একে প্রার্থীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে কথা বলেন। কে কত টাকা ব্যয় করতে পারবেন- তা নিয়ে চলে খোলামেলা আলোচনা। পরে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চু তিন কোটি টাকা ব্যয় করবেন জানিয়ে তাকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। সেখানে উপস্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আ ক ম রুহুল আমিন, শহিদ উল্যা, নুরুল ইসলাম, তাহসান আহমেদ রাসেলও উপস্থিত ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রাকিবুল হাসান মাসুদ, মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ভূঁইয়া, শুরাইয়া আক্তার শিউলি সভায় ছিলেন। রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত টানা এ সভা চলে। ওই সভায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আরাফাতকে ডাকা হয়নি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, এমপি সাদা কাগজে আমাদের ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সই নিয়েছেন। এটি দলীয় নির্বাচনী নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নির্বাচন করলে কত টাকা খরচ করতে পারব- তারা জানতে চাইলে আমি দেড় কোটি টাকা বলেছি। আনোয়ার খান এমপির বড় ভাই মো. আখতার হোসেন খান বলেন, এমপি নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। আমিও তাকে সতর্ক করে দিয়েছি। তার লোকজনের হুমকির মুখে আমি এলাকায় যেতে পারছি না। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান মাসুদ বলেন, বৈঠকে ৩ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সই নেওয়া হয়েছে। সেখানে নির্বাচন থেকে বিরত থাকার জন্য বুঝিয়ে আমাকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলেছেন। আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। পরীক্ষিত সাবেক ৩ ছাত্র নেতার প্রার্থী থাকার পরও তিনি পদ-পদবিহীন টাকাওয়ালা একজনকে ‘কথিত সমর্থন’ দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র তিন নেতা জানায়, দল নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এমপি নির্বাচনে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তিনি টাকার বিনিময়ে একক প্রার্থী ঘোষণা করছেন। এতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। বক্তব্য জানতে বুধবার বেলা সোয়া ১১ টার দিকে আনোয়ার হোসেন খান এমপির মুঠোফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এমপির স্থানীয় সমন্বয়কারী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্বাচনে কার কী অবস্থান, কার আর্থিক কী অবস্থা, প্রার্থীদের সক্ষমতাকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এটি দলের আনুষ্ঠানিক কোনো সভা ছিল না। নিজেদের মধ্যে ঘরোয়া আলোচনা হয়েছে। কাউকে চাপিয়ে দেওয়া বা বাধ্য করা হয়নি। এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু এমপি বলেন, চেয়ারম্যান পদের দাম ৩ কোটি টাকা উঠেছে- রামগঞ্জের কয়েকজন আমাকে জানিয়েছে। এবার একক প্রার্থী ঘোষণা, সমর্থক দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আনোয়ার খান দলের নির্দেশনা ভঙ্গ করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি জানাব। উল্লেখ্য, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে রামগঞ্জে আগামী ২১ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিবার্তা/সুমন/রোমেল/এমজে
রামগঞ্জে এমপির সমঝোতায় উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী!
রাজনীতি
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত