লক্ষ্মীপুরে বীজ সয়াবিনের বাম্পার ফলন

| আপডেট :  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:০২  | প্রকাশিত :  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:০২


লক্ষ্মীপুরে বীজ সয়াবিনের বাম্পার ফলন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি


সয়াবিন আবাদের জন্য বিখ্যাত লক্ষ্মীপুর জেলা। রবি মৌসুমের সয়াবিন চাষের জন্য জমিতে বীজ বপন শুরু কয়েছে চাষীরা। জেলায় চলতি রবি মৌসুমে ৪২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা রবি মৌসুমের সয়াবিন চাষাবাদের জন্য বীজ সয়াবিনের উৎপাদন করে ‘খরিপ-২’ মৌসুমে। চলতি বছর লক্ষ্মীপুরের চরাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বীজ সয়াবিনের চাষাবাদ হয়েছে। ফলে গত বছরগুলোর চেয়েও এবার বীজ সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে। যা গেল মৌসুমের তুলনায় চার গুণ বেশি।

অধিক পরিমাণে জমিতে চাষাবাদ এবং চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজ সয়াবিনের উৎপাদন অতীতের থেকেও বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ। ফলে দামও একেবারে কমে গেছে। তাই বাম্পার ফলনেও মলিন কৃষকের মুখ।

কৃষকরা বলেন, অন্যান্য বছর বীজ সয়াবিনের দাম বৃদ্ধি থাকায় চলতি মৌসুমে শুধু বীজ সয়াবিন উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছিল কৃষকেরা। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় হতাশ চাষীরা।

তারা জানিয়েছে, কৃষকদের কাছে চাহিদার থেকেও এবার বীজ সয়াবিনের পরিমাণ বেশি। গত বছর বীজ সয়াবিনের মন ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এবার দাম পাচ্ছে তিন থেকে চার হাজারের মধ্যে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি ‘খরিপ-২’ মৌসুমে জেলাতে ৭৮৬ হেক্টর জমিতে বীজ সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে গড়ে দেড় মেট্রিক টন করে। সে হিসেবে এবার মোট উৎপাদিত বীজ সয়াবিনের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার মন। কিন্তু গেল বছর ছিল এবারের চার ভাগের একভাগ। গত মৌসুমে জেলাতে ৩০০ হেক্টর জমিতে বীজ সয়াবিনের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মন।  

কৃষকরা জানায়, বীজ সয়াবিন চাষাবাদ করা হয় ‘খরিপ-২’ মৌসুমে, অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমের দিকে। আর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বীজ সয়াবিন সংগ্রহ করা হয়। এরপর বাজারে এনে রবি মৌসুমে চাষাবাদকৃত কৃষকদের মাঝে এ বীজ বিক্রি করা হয়। খরিপ মৌসুমের চাষাবাদকৃত সয়াবিন দিয়েই কৃষকরা রবি মৌসুমের সয়াবিনের আবাদ করে থাকেন। এ বীজ থেকে চারা গজানোর শতকরা হার অনেকাংশে বেশি। কিন্তু পুরাতন সয়াবিন বীজ থেকে চারা গজানোর হার অনেক কম।

তারা আরও জানায়, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বীজ সয়াবিনের আবাদ করা হয় রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী এলাকার চরাঞ্চলে। বর্ষা মৌসুমে চরের জমিতে পানি না জমায় ভালো ফলন আসে।

দক্ষিণ চরবংশী এলাকার কয়েকজন কৃষক বলেন, প্রতি বছর কমবেশি জমিতে তারা বীজ সয়াবিনের আবাদ করেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে উৎপাদন কম হলেও ভাল দামে বীজ সয়াবিন বিক্রি করতে পেরেছেন। ফলে চলতি বছর বেশিরভাগ কৃষক ভাল দামের আশায় চরের জমিতে বীজ সয়াবিনের আবাদ করেছে।

চর কাছিয়া গ্রামের কৃষক মো. হারুন বেপরী বলেন, ১২ একর জমিতে চাষাবাদ করে প্রায় ২৮০ মন বীজ সয়াবিন পেয়েছি। গতবারের চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ করে ফলনও গতবারের চেয়ে বেশি পেয়েছি। কিন্তু বাজারে এবার বীজ সয়াবিনের দাম কম। সর্বনিম্ন আড়াই হাজার থেকে সর্বোচ্চ ভালো মানের সয়াবিন ৪ হাজার টাকায় মন বিক্রি হচ্ছে। ফলন বেশি, তাই এবার দাম কম। কিন্তু গেল বছর প্রতি মন বীজ সয়াবিনের দাম ছিল ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা।

দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকার কৃষক মো. দিদার বলেন, চলতি বছর প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে সয়াবিনের আবাদ করি। ১৫ মন বীজ সয়াবিন পেয়েছি। নিজের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ রেখে বাকিগুলো বাজারে বিক্রি করতে এনেছি। কিন্তু এবার দাম কম। প্রতিমন সয়াবিন ৩ হাজার থেকে ৩৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মোল্লারহাট বাজারের সয়াবিন ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, চলতি মৌসুমে আমি ১০ হাজার মন ক্রয়-বিক্রয় করেছি। চাহিদার থেকে কৃষকদের কাছে সয়াবিনের পরিমাণ বেশি থাকায় দাম কম।

জেলার কমলনগর উপজেলার করুনানগর থেকে রায়পুরের মোল্লার হাট বাজারে সয়াবিন কিনতে আসা ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস বলেন, ৬০ মন বীজ সয়াবিন ক্রয় করেছি। গতবারের চেয়ে দাম অনেক কম। এখানকার বীজ সয়াবিন কমলনগর, রামগতি এবং নোয়াখালীর সুবর্নচর সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে সরবরাহ করি।

বীজ সয়াবিনের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মিরাজ বলেন, সরাসরি খেত এবং কৃষকদের কাছ থেকে এবার প্রায় ৫০০ মনের বেশি সয়াবিন ক্রয় করেছি। প্রতি মন সয়াবিন প্রায় ৪ হাজার করে মাঠ থেকে কিনে নিয়েছি। এর সাথে পরিবহন এবং শ্রমিক খরচ আছে। কিন্তু বাজারে সয়াবিনের দাম আরও কম। তাই লাভের বদলে লোকসান হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কৃষকরা রবি মৌসুমের উৎপাদিত সয়াবিন পরের বছরে বীজ হিসেবেও ব্যবহার করে। আবার নতুন করে তারা ‘খরিপ-২’ মৌসুমে বীজ সয়াবিন দিয়ে রবি মৌসুমের চাষাবাদ করে। কয়েক বছর আগেও অন্যান্য জেলা থেকে বীজ সয়াবিন আসতো। এখন এ অঞ্চলের কৃষকেরা বীজ সয়াবিনের চাষাবাদ করে আসছে। গেল বছরের থেকেও এবার আবাদ এবং ফলনের উৎপাদন বৃদ্ধি পেযেছে। তাই দামও কমের দিকে।

বিবার্তা/সুমন/সউদ

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত