শরীরের গড়ন বুঝে ডায়েট ও ব্যায়াম

| আপডেট :  ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৮  | প্রকাশিত :  ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৮


শরীরের গড়ন বুঝে ডায়েট ও ব্যায়াম

লাইফস্টাইল

লাইফস্টাইল ডেস্ক


আমাদের পরিচিতদের মধ্যে এমন অনেকেই থাকেন, যাঁরা প্রচুর খান, কিন্তু শরীরে মেদ জমে না। আবার কেউ কেউ থাকেন যাঁরা খুবই কম খান, কিন্তু স্থূলকায়। এ সবই নির্ভর করে মানুষের শরীরের গঠনের উপরে। মানুষের চেহারা ক’প্রকারের? ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা বলেন, চল্লিশের দশকে চিকিৎসক এইচ এস শেলডন আবিষ্কার করেন মানুষের শরীরের গঠন তিন প্রকার— এক্টোমর্ফ, মেসোমর্ফ এবং এন্ডোমর্ফ। প্রত্যেকটির বৈশিষ্ট্য ভিন্ন, প্রয়োজনও এক এক ধরনের।

এখনকার যুগে নিজের চেহারা কেমন, সেটা বোঝা আরও বেশি জরুরি নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য। তাই জেনে নেওয়া যাক কার কী রকম ডায়েট হওয়া উচিত, এক্সারসাইজ়-ই বা কেমন করা উচিত।

এক্টোমর্ফ হলে

এখন প্রায় সকলেই চায় রোগা-পাতলা চেহারা। এক্টোমর্ফদের দৈহিক গঠন হয় অনেকটা এই রকম— লম্বা হলেও এদের নীচের দিক অর্থাৎ হিপ-এর অংশটা চওড়া হয়। এদের শরীরে কোনও ভাবেই অবাঞ্ছিত মেদ জমে না। এক্টোমর্ফ চেহারার মানুষেরা যদি চায় ওজন বাড়ুক তবে তাঁদের খাওয়ার ধরনটা বদলানোর প্রয়োজন।

ডায়েট: ফিটনেস বিশেষজ্ঞদের মতে, সে ক্ষেত্রে এদের কার্বোহাইড্রেট (যেমন ভাত, ফেনা ভাত ইত্যাদি) বেশি করে খাওয়া উচিত। ক্যালরি ইনটেক বেশি করতে পারে, সেই সঙ্গে ফল ও শাকসবজি খেতে হবে ভিটামিন এবং মিনারেলের জন্য। তেল, ঝাল, ভাজাভুজি কম খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। সঙ্গে মাংসপেশি ‘হাইড্রেটেড’ রাখতে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন গুরুপ্রসাদ।

ব্যায়াম: শারীরিক কসরতের মধ্যে নিয়মিত বাইসেপ প্রেস-সহ স্কোয়াট করার পরামর্শ দিচ্ছেন সৌমেন। সেই সঙ্গে চেস্টের গড়নের বদল আনতে বেঞ্চ প্রেস করতে হবে। আর এক দিন শোল্ডার প্রেস, ট্রাইসেপ প্রেস করতে হবে হ্যামস্ট্রিং এবং কাফ পেশির কসরত-সহ। প্রত্যেকটা অনুশীলনই ১০ বার করে তিন থেকে চার সেট করুন। এর সঙ্গে গুরুপ্রসাদ জানালেন, এক্টোমর্ফ চেহারার মানুষদের ৪০-এর পর থেকে মাসল লস হয়। আর ৫০-এর পর থেকে ঠিক মতো ডায়েট ও ব্যায়ামের মধ্যে না থাকলে ক্রমশ শীর্ণকায় হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ৪০-এর পর হালকা ওয়েট ট্রেনিং চালিয়ে যাওয়া উচিত।

মেসোমর্ফ যারা

সুন্দর, পেশিবহুল চেহারার গঠন থাকে এদের। এদের সহজে মেদ জমে না। এঁরা খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করলে চেহারা আরও ভাল হবে।

ডায়েট: এদের বেশি প্রোটিন (মাছ, মাংস, ডিম) আর কম কার্বস খাওয়া উচিত। এ ছাড়া হোলগ্রেনস, ফল এবং আনাজপাতি খেতে হবে নিয়মিত।

ব্যায়াম: যেহেতু মেসোমর্ফদের চেহারার ধরনে হাই মাসল টু ফ্যাট রেশিয়ো থাকে, তাই যে কোনও ওয়েট ট্রেনিং খুব ভাল কাজ করে। কার্ডিয়ো ওয়ার্কআউট করা যায়। মেদ ঝরানোর জন্য এদের হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ওয়ার্কআউট (এইচআইআইটি) করা উচিত। এ ছাড়া পেশির গঠন ঠিকঠাক রাখতে প্রোগ্রেসিভ ওয়েট ট্রেনিং করার পরামর্শ দিচ্ছেন সৌমেন ও গুরুপ্রসাদ দু’জনেই। প্রথম দিকে হালকা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে হেভি ওয়েট ট্রেনিংয়ের দিকে যেতে হবে। এ ছাড়া বাইসেপ প্রেস, ট্রাইসেপ প্রেস তো রয়েছেই। মেসোমর্ফ চেহারার মানুষদের যে কোনও ধরনের ট্রেনিং খুব তাড়াতাড়ি সয়ে যায়। ফলে এদের রুটিন পাল্টানো খুব জরুরি হয়ে পড়ে। তাই সাত দিন জগিং করলে, পরের সাত দিন তাদের এরোবিক্স করা উচিত। বা এক সপ্তাহ এইচআইটি (হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং) করলে পরের সপ্তাহে করতে হবে এলআইআইটি বা লো ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ওয়ার্কআউট। সার্বিক শারীরচর্চার জন্য সাঁতারও ভাল। এতে ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ে, জয়েন্ট মুভমেন্ট ভাল হয়। পাশাপাশি মাসল রিকভারির জন্য পর্যাপ্ত ঘুমও প্রয়োজন। শরীরটাকে ঠিক রাখতে মাসাজেরও দরকার পড়ে মেসোমর্ফদের।

এন্ডোমর্ফদের জন্য

শরীরটা সাধারণত নরমসরম হয়, উচ্চতাও কম হতে পারে। এঁদের সাধারণত ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এন্ডোমর্ফ চেহারার মহিলাদের লোয়ার ওয়েস্ট লাইন, হিপস এবং থাই খুব ভারী হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রেও লোয়ার অ্যাবডোমেন, হিপস বা থাইয়ের অংশগুলো মেদবহুল থাকে। তবে ঠিকঠাক ব্যায়ামে চেহারার গঠন ভাল হতে পারে বলে জানাচ্ছেন গুরুপ্রসাদ। এঁদের মেটাবলিক রেট কম হওয়ার ফলে খুব তাড়াতাড়ি মেদ জমে যায়। এন্ডোমর্ফ চেহারার মানুষদের নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।

ডায়েট: এঁদের কার্বোহাইড্রেট কম ও প্রোটিন বেশি খেতে হবে। ভাত, চকলেট, মিষ্টি, সফ্ট ড্রিঙ্কস, এনার্জি ড্রিঙ্কস চলবে না। বরং ওটস, মুড়ি চলতে পারে।

ব্যায়াম: এন্ডোমর্ফ চেহারার মানুষদের ক্ষেত্রে, ইনক্লাইনড ট্রেডমিলে হাঁটা উচিত। এর সঙ্গে ফ্যাট বার্ন করতে স্কোয়াটস, লাঞ্জেস, ফ্রগ জাম্প, পুশ আপ করতে হবে। সঙ্গে ওয়েট ট্রেনিংও থাকবে, যার সেট কম হবে। কিন্তু করতে হবে বেশি বার করে। ১২-১৫ রিপিটেশন করতে হবে। এ ছাড়াও থাকবে এইচআইআইটি ট্রেনিং। সপ্তাহে তিন দিন এইচআইআইটি ট্রেনিং আর তিন দিন ওয়েট ট্রেনিং। প্রথমে ১৫-২০ মিনিট ইনক্লাইনড ট্রেডমিলে হাঁটার পরে ওয়েট ট্রেনিং করা যাবে। অন্য দিকে, এন্ডোমর্ফদের অল্প হাঁটা, হালকা জগিং এবং লোয়ার অ্যাব এক্সারসাইজ়ও করা উচিত। রোজ অনুশীলন পাল্টেপাল্টে করলেই ভালো। যেমন প্রথম দিন লেগ রাইজ় এবং প্ল্যাঙ্কস, সাইড থাই এবং ইনার থাই-এর জন্য স্পট রিডাকশন ওয়ার্কআউট করলে পরের দিন করতে হবে আপার থাই এবং হ্যাম্পস্ট্রিংস-এর ওয়ার্কআউট।

আগে নিজের শরীরের গড়ন বুঝতে হবে। সেই অনুযায়ী শুরু করেন এই ডায়েট ও ব্যায়াম।

বিবার্তা/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত