সংঘবদ্ধ পরিকল্পিত উপায়ে ছড়ানো হচ্ছে গুজব

| আপডেট :  ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৭  | প্রকাশিত :  ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৭


সংঘবদ্ধ পরিকল্পিত উপায়ে ছড়ানো হচ্ছে গুজব

জাতীয়

বিবার্তা প্রতিবেদক


গুজবে ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে অগণিত অপতথ্য, গুজব ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকে। গতকাল রোববারের ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী দিনটির আগের রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে হাজারো গুজব ছড়ানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা এবং গণযোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, শনিবার রাতে যত গুজব ছড়ানো হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার সব ল্যাব ব্যবহার করেও তা যাচাই করা অসম্ভব। ‘এক দফা’ ঘোষণার পর সরকারপন্থি ৬৭টি পেজ থেকে ছড়ানো গুজব অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সবচেয়ে বেশি ৭৩ শতাংশ গুজব ছড়ানো হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে। ফটোকার্ড-সংশ্লিষ্ট খবরের লিঙ্ক না পেলে বুঝতে হবে, তা মিথ্যা।

আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ দাবি করে সেখান থেকেও অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। মন্ত্রী, এমপিরাও সেসব শেয়ার করেছেন। বিএনপি এবং দলটির মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড পেজে ভুল তথ্য না থাকলেও দলটির সমর্থকদের হাজারো অ্যাকাউন্ট থেকে আন্দোলনে নিহতের অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এই নামে অসংখ্য গ্রুপ, পেজ এবং অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। বিএনপি এবং দলটির সমর্থকদের হাজারো অ্যাকাউন্ট থেকে আন্দোলনে নিহতের অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

৪ আগস্ট, শনিবার ‘সানজানা ইরা ফারহানা’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হয়, তিনি কক্সবাজারের আন্দোলনে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। ফ্যাক্ট চেকাররা জানিয়েছেন, ভিডিওটি পুরোনো এবং এর জিও লোকেশন ঢাকার উত্তরায়। প্রোফাইলটিও ভুয়া। কয়েক বছরের পুরোনো প্রোফাইল গতকালই সচল করা হয়েছে। এতে ৬০ জন বন্ধু রয়েছে, সেগুলো ভুয়া।

এর আগে, শুক্রবার রাতে ফেসবুকে ছড়ায় ভারতের হায়দরাবাদ থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকায় আসছে। ‘রেশমি মো. রফিক’ নামের প্রোফাইল থেকে এ অপতথ্য ছড়ানো হয়। এই প্রোফাইল থেকে গত কয়েক দিনে আন্দোলনের পক্ষে এবং সরকারের বিপক্ষে অনেকগুলো পোস্ট করা হয়েছে। এর অধিকাংশ ভুয়া।

‘ক্লাসিক শপ বিডি’ নামের পেজে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দাবি করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকা সেনাসদস্যরা গণভবন ছেড়েছে। যাচাইয়ে জানা গেছে, দাবিটি মিথ্যা। এ পেজ থেকে একাধিক গুজব ছড়ানো হয় গত কয়েক দিনে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরউদ্দিন শিশির বলেন, তিনটি পক্ষ গুজব ছড়াচ্ছে। আন্দোলনের পক্ষে যারা, তারা মিছিলের ছবি দিয়ে, এখনকার বলে দাবি করছে। রাস্তায় আহতাবস্থায় পড়ে থাকা কারও ছবিকে চলমান আন্দোলনের দাবি করেছে। যেমন গতকাল শনিবার পুরোনো ছবি দিয়ে একটি প্রোফাইল থেকে দাবি করা হয়, কুমিল্লায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এসব গুজব সংঘবদ্ধ পরিকল্পিত উপায়ে ছড়ানো হয়েছে প্রমাণ নেই।

গুজব সাধারণত কিছু অযাচাইকৃত তথ্য বা গল্প, যা মৌখিক বা লিখিত যোগাযোগের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই গল্পগুলো আংশিক সত্য বা মিথ্যা হতে পারে, তবে মানুষের কৌতূহলজনক তথ্য শেয়ার ও আলোচনা করার প্রবণতার কারণে এগুলো মানুষের কাছে অধিক মাত্রায় আকর্ষণীয় হয়। গুজব পরিচিতদের সম্পর্কে জাগতিক গসিপ থেকে শুরু করে স্বনামধন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরো গুরুতর অভিযোগ বা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব পর্যন্ত হতে পারে।

কীভাবে গুজব থেকে দূরে থাকা যায়?

যে কোনো তথ্যকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করার আগে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার আগে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে এবং ফ্যাক্ট চ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সর্বদা তার বিশ্বাসযোগ্য সূত্র যাচাই করে দায়িত্বশীল শেয়ার করতে হবে। পাশাপাশি তার পেছনে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীর স্বার্থ আছে কি না, তা যাচাই করতে হবে।

বিবার্তা/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত