সমাজে বহুল প্রচলিত ২০টি শিরক

| আপডেট :  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:১১  | প্রকাশিত :  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:১১

শিরক এমন একটি গুনাহ যা করলে ঈমান এবং পূর্বের সমস্ত আমল সম্পুর্ন নষ্ট হয়ে যায়। কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবাহানাহু তা’আলা যেকোন গুনাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু শিরকের গুনাহ কস্মিনকালেও ক্ষমা করবেন না।

১। শরীরে যেকোন প্রকার তাবিজ ঝুলানো শিরক। [মুসনাদে আহমদ: ১৭৪৫৮, সহিহ হাদিস:৪৯২]
২। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম করা শিরক। [আবু দাউদ:৩২৩৬ (ইফা)]
৩। কোন কিছুকে শুভ-অশুভ লক্ষণ বা কুলক্ষণ মনে করা শিরক। [বুখারি :৫৩৪৬, আবু দাউদ:৩৯১০]
৪। মাজারে ও কোন পীর-ফকির কিংবা কারো নিকট সিজদা দেয়া শিরক। [সুর জীন: ২০, মুসলিম:১০৭৭, আবু দাউদ, মুত্তাফাকুন আলাই]
৫। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বা যেকোন পীর-আওলিয়া কিংবা মাজারের নামে নামে মানত করা শিরক। তবে মানত না করাই উত্তম। [সহিহ বুখারি: অধ্যায় : তাকদির]
৬। কেউ পেছন দিক থেকে ডাক দিলে কিংবা নিজে যাত্রার সময় পিছন ফিরে তাকালে যাত্রা অশুভ হয় এই ধারনা বিশ্বাস করা শিরক। (বুখারি, আবু দাউদ:৩৯১০)
৭। আল্লাহর গুণবাচক নামে অন্য কাউকে ডাকা শিরক (যেমন: কুদ্দুস, রাহমান, রহীম, জাব্বার, সালাম, মুমিন ইত্যাদি) এক্ষেত্রে নামের আগে “আব্দুল্লাহ” বসাতে হবে। [সুরা আরাফ:১৮০, ইসরা:১১০, হাশর]
৮। “খোদা” বলে আল্লাহকে ডাকা শিরক। মোট কথা আল্লাহর দেয়া গুণবাচক নাম ব্যাতিত অন্য কোন নামে তাকে ডাকা শিরক। [সুরা আরাফ:১৮০, ইসরা:১১০, হাশর]
৯। কোন বিপদে পড়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে “ও মা, ও বাবা” ইত্যাদি বলে এইরকম গায়েবি ডাকা শিরক। বিপদে পড়লে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন” বলতে হয়। (সুরা বাকারাহঃ ১৫৬)
১০। ‘তোর ভবিষ্যত অন্ধকার’, ‘তোর কপালে বহুত কষ্ট আছে’, এইধরনের গায়েবি কথা কাউকে বলা শিরক। [সুরা নমল:৬৫, আল জিন:২৫-২৬, আনাম:৫৯]
১১। হোঁচট খেলে কিংবা পেঁচা ডাকলে সামনে বিপদ আছে এই ধারনা শিরক। (সুরা আনাম:১৭, ইউনুস:১০৭)
১২। রোগ ব্যাধি বা বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে শরীরে পিতলের বালা, শামুক, ঝিনুকের মালা, সুতা, কিংবা যেকোন প্রকারের বস্তু লটকানো শিরক। [তিরমিযি, আবু দাউদ ও হাকেম]
১৩। সকালে বেচাকেনা না করে কোন কাষ্টমারকে বাকি দিলে কিংবা সন্ধ্যার সময় কাউকে বাকি দিলে ব্যবসায় অমংগল হয় এই ধারনা করা শিরক।(আবু দাউদঃ ৩৯১০)
১৪। সফলতা কিংবা মংগল লাভের জন্য এবং অমংগল থেকে রক্ষা পেতে যেকোন প্রকার আংটি ব্যাবহার করা শিরক। [সুরা আনআম:১৭, ইউনুস :১০৭]
১৫। যে কোন জড় বস্তুকে সম্মান দেখানো তথা তাযীম করা বা তার সামনে নিরবতা পালন করা শিরক। যেমন: পতাকা, স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনার কিংবা মাজার ইত্যাদি। [সুরা বাকারাহ:২৩৮, আহকাফ:৫, ফাতহুল বারি ৭/৪৪৮, আবু দাউদ:৪০৩৩]
১৬। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কিংবা লোক দেখানো ইবাদাত করা শিরক। [সুরা আনাম:১৬২, বাইয়িনাহঃ ৫, কাহফ:১১০,ইমরান:৬৪, ইবনে মাজাহ হা নং৫২০৪]
১৭। আল্লাহ ব্যতীত কোন গণক বা অন্য কেউ গায়েব জানে এই কথা বিশ্বাস করা শিরক।
[সুরা নমল:৬৫, আল জিন:২৬, আনাম:৫৯]
১৮। পায়রা/কবুতর উড়িয়ে শান্তি কামনা করা শিরক, কারন শান্তিদাতা একমাত্র আল্লাহ।
(সুরা হাশরঃ ২৩)
১৯। আল্লাহর ছাড়া কোন পীর-আওলিয়া এবং কোন মাজারের নিকট দুয়া করা বা কোন কিছু চাওয়া শিরক। [সুরা ফাতিহা:৪, আশ-শোআরা:২১৩, গাফির:৬০, তিরমিযি]
২০। “আপনি চাইলে এবং আল্লাহ চাইলে এই কাজটি হবে” এই কথা বলা শিরক। (নাসাঈ শরিফ)

এইরকম আরো অসংখ্য শিরক সমাজে বিদ্যমান। আল্লাহ বলেন…
অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে। (সুরা ইউসুফঃ ১০৬)

আল্লাহ বলেন,,
নিঃসন্দেহে আল্লাহ ইচ্ছা করলে যেকোন গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু শিরকের গুনাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। (সুরা নিসা :৪৮,১১৬)

নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং জাহান্নামকে অবধারিত করে দেন।(সুরা মায়িদাহ:৭২)

রাসুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“আমার সামনে জিব্রাঈল আবির্ভূত হলেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার উম্মতদের সুসংবাদ দিন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা অবস্থায় মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে?
….. তিনি বললেন:
যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে। [সহিহ বুখারি :১২৩৭,মুসলিম:৯৪]

শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় ধ্বংসত্মাক বিষয়। শত পাপ করলে ও কিয়ামতের দিন তা ক্ষমার সম্ভবনা আছে কিন্তু শিরকের পাপ ক্ষমার কোন সম্ভবনাই নেই এবং তা নিঃসন্দেহে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।
ইয়া আল্লাহ আমাদের সকলকে শিরক থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন; সুম্মা আমীন।

সম্পাদনায়, উজ্জল ফরিদ

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত