সরকারি খাস জমিতে প্রভাবশালীদের দোকান নির্মাণের অভিযোগ

| আপডেট :  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৩৮  | প্রকাশিত :  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৩৮


সরকারি খাস জমিতে প্রভাবশালীদের দোকান নির্মাণের অভিযোগ

সারাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর গরুর বাজারে সরকারি খাস জায়গায় ইজারা ছাড়াই দোকান নির্মাণ করে চড়া দামে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ওই চক্রটি গরুর বাজার সংলগ্ন কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পূর্বপাশে হ্যালিপ্যাডের সরকারি জায়গাটিও ইজারা নিয়ে দোকান নির্মাণ করে বিক্রি করছে।

দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ চললেও প্রশাসন নির্বিকার। অবৈধভাবে দোকান নির্মাণের ঘটনায় গ্রামের লোকজন গত ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সুহিলপুর গরুর বাজারের উত্তর দিকের জায়গা দখল করে প্রভাবশালী চক্রটি বেআইনিভাবে স্থায়ী স্থাপনা (দোকান ঘর) নির্মাণ করছেন। নির্মাণকারীরা বাজারের ব্যবসায়ী নয়।

গরু বাজারের পূর্বদিকে (কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পূর্ব পাশে) সুহিলপুর আলহাজ হারুন-আল-রশিদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাসহ পাশের জায়গা ১নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হ্যালিপ্যাডের ভূমি ও অর্পিত সম্পত্তি।

সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ ভূইয়া ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাতে হ্যালিপ্যাডের ভূমিসহ অর্পিত সম্পত্তিতে থাকা কলেজের রাস্তায় ইটের দেয়াল নির্মাণ করে দখলে নেয়। রাস্তাটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। ইউপি চেয়ারম্যান হ্যালিপ্যাডের ভূমি থেকে পুরাতন ২ লাখ ইট মাটির নিচ থেকে বের করে বিক্রি করে দেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের রাস্তাটি বেদখল হওয়ায় কলেজের শতশত শিক্ষার্থী, কলেজ সংলগ্ন কলেজপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, কেউ প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ ভূইয়া তাদেরকে হেফাজত ইসলামের নামে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মোবারক হোসেন ও শামীম হোসেন নামে দুজন সরকারি চাকরিজীবী, সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য নীপা দত্তের স্বামী মিন্টুর রঞ্জন ও আরেকটি সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য সুমি বেগমের স্বামী জাকির হোসেন, ইউপি সদস্য মেজবাহুল হকের ছেলে মোঃ রকি, স্থানীয় বাবুল মিয়া, কাসেম ও শফিকুল ইসলাম সুহিলপুর গরুর বাজারের উত্তরদিকে সাতটি দোকান নির্মাণ করছেন।

এদিকে গরুর বাজারের পূর্বদিকের খাস খতিয়ানভুক্ত হ্যালিপ্যাডের ভূমিসহ অর্পিত সম্পত্তির ২৫ শতক জায়গা মোবারককে বাণিজ্যিক ইজারা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এই দুই জায়গার বিষয়ে মোবারকসহ অন্যদের নাম শোনা গেলেও পেছনে রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশীদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুহিলপুর ইউনিয়নের এক ব্যক্তি জানান, সুহিলপুর গরুর বাজারের উত্তরদিকে নির্মাণকরা প্রতিটি দোকানের জন্য
চেয়ারম্যানকে তারা ১২লাখ টাকা করে দিয়েছেন। চেয়ারম্যান হ্যালিপ্যাডের ২৫শতক জায়গা মোবারকের নামে নিজের জন্য ইজারা নিয়েছেন।

হ্যালিপ্যাডের জায়গায় ৭০টি দোকান নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তার। হ্যালিপ্যাডের পশ্চিম দিকের ৮ শতক জায়গায় ১৬ থেকে ১৮টি দোকান নির্মাণ করে ইতোমধ্যেই তিন লাখ টাকা করে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

মোবারক হোসেন জানান, হ্যালিপ্যাডের জায়গা ইজারা পাইছি। আর গরুর বাজারের উত্তরদিকের জায়গা ৫-৭জন মিলে ইজারা পাইছি। সেখানে সাতটি দোকান হবে। এর মধ্যে একটি আমার। তবে অফিস খরচ কিছু লাগবে। এখনো নির্ধারণ হয়নি কে কত দিবে।

সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ ভূইয়া জানান, আমার নামে ইজারা আছে এমন প্রমাণ বা কাগজপত্র কেউ দেখাতে পারবে না। বাজারের ক্ষতিগ্রস্তসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের গরু বাজারের উত্তর দিকের জায়গা দেয়া হয়েছে। হ্যালিপ্যাডের জায়গা কয়েকজনের মধ্যে ইজারা দেয়া হয়েছে। এসবের সাথে আমি জড়িত নই।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সেলিম শেখ জানান, গরু বাজারের জায়গা কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তবে কেউ যদি সরকারি জায়গা কিনেন এবং বিক্রি করেন তারা বিপদে পড়বেন।

বিবার্তা/আকঞ্জি/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত