সরকারি চাকরিপ্রার্থী একটি পরিবার যেভাবে নিঃস্ব করে দিলো তারা

| আপডেট :  ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:০৬  | প্রকাশিত :  ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:০৬

মেয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে। জামাইকে খাদ্য অধিদফতরে সরকারি চাকরি দেবেন বলে মেয়ের শ্বশুরের কাছ থেকে টাকা এনে হারুণ অর রশীদ নামের এক ব্যক্তিকে তিন লাখ টাকা দেন শিবগঞ্জের আলমগীর হোসন রতন। মেয়ের জামাইয়ের চাকরিতো হয়ইনি উল্টো মেয়ের সংসার ভাঙার উপক্রম। রতনের মতো এ রকম আরও কয়েকজন রয়েছেন, যারা হারুণকে সরকারি চাকরির জন্য টাকা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

পরিচিত মানুষজনের কাছে নিজেকে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলে উপস্থাপন করতেন হারুণ। বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে বলে চাকরিপ্রার্থীদের কাছে বলতেন তিনি। এভাবে পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সহজ সরল মানুষের টাকা আত্মসাৎ করতেন হারুন।

সিআইডি হারুণ ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে। হারুনকে কেরানীগঞ্জ থেকে এবং অপর দুজনকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হারুনের (৩৬) বাড়ি নওগাঁর বদলগাছি এলাকায়। তার দুই সহযোগী হলেন মাসুদ রানা (২৩) ও সেকান্দার আলী (৩৪)।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন এসব তথ্য জানান।

ইমাম হোসন বলেন, ‌‘পল্টন থানায় একটি মামলার ভিত্তিতে হারুন অর রশীদ ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছে।’

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা জাল নিয়োগপত্র দিতেন। বিভিন্ন মন্ত্রীর ভুয়া ডিও লেটারও তৈরি করেছেন। চক্রের মূল হোতা হারুন অর রশীদ। তাকে গ্রেফতারের পর আমরা আরও অভিযোগ পাচ্ছি।’

ভুক্তোভোগী রতন বলেন, ‘আমার খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে হারুনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। হারুণ মাঝেমাঝে ফোন দিতো। খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে জানাতো। আমার মেয়ের কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়েছে। জামাই চাকরি খুঁচ্ছিল। হারুণ আমাকে জানালো, সে খাদ্য অধিদফতরে চাকরি দিয়ে দিতে পারবে। মেয়ের শ্বশুরের সঙ্গে আলাপ করি। ৩০ লাখ টাকায় খাদ্য উপপরিদর্শক পদে চাকিরির বিষয়ে হারুণের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়। মেয়ের শ্বশুর বলেন, চাকরি হলে টাকা দেবেন। আমরা শুরুতে তিন লাখ টাকা দিই হারুণকে। কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্টে আমার মেয়ে জামাইয়ের নাম আসেনি। বিষয়টি হারুনকে জানানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সে আর ফোন ধরে না। এভাবে ঘোরাতে থাকে। টাকা ফেরত দেয়নি।’

একইবাবে কেউ সৌদির ভিসার জন্য টাকা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন, আবার কেউ সেনাবাহিনীতে চাকরি পেতে হারুণকে টাকা দিতে সুদে টাকা এনেছেন। সিআইডি কার্যালয়ে এ রকম ৫-৬ জন ভুক্তোভোগীকে পাওয়া গেছে, যারা হারুণকে বড়মাপের প্রতারক বলেছেন।

মেরাজুল ইসলাম নামে শ্যামলীর এক মুদি দোকানি হারুনকে তার শ্যালকের সেনাবাহিনীর মেস ওয়েটার পদে চাকরির জন্য পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন।

মেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শ্যালকের চাকরির জন্য গত অক্টোবরে ইউসিবি ব্যাংকে হারুনের অ্যাকাউন্টে টাকা দিই। একমাস পর একটা নিয়োগপত্র দেয় হারুন। আমার শ্যালককে ক্যান্টনমেন্টের পাশের একটি বাসায় নিয়ে রাখা হয়। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে একটি বিয়েতে একদিন ডিউটিও করে। এরপর ১৫ দিন তাকে বসিয়ে রাখে। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেও নেয় না। তখন আমরা বুঝতে পারি সে প্রতারণার শিকার। এরপর আমি আমার শ্যালককে নিয়ে আসি। হারুনের কাছে টাকা ফেরত চাই। কিন্তু তার কোনও হদিস পাচ্ছিলাম না।’

সিআইডির কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেন, ‌‘হারুন জাল জালিয়াতি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করতো। তার কাছ থেকে বিভিন্ন জাল নিয়োগপত্র, স্ট্যাম্প, ব্ল্যাঙ্ক চেক উদ্ধার করা হয়েছে।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত