সরিষার তেল এবং ফ্যামিলি ক্রাইসিস নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ

| আপডেট :  ১২ মে ২০২২, ০৮:৫৭  | প্রকাশিত :  ১২ মে ২০২২, ০৮:৫৭

এখন যেসব মায়ের বয়স ৬০+ বছর, ৩০+ বয়স পুত্রবধুদের সাথে তাদের অনেক ক্ষেত্রে বনিবনা হয় না।আমি শুধু রান্না ঘর নিয়েই হিন্ট’স দিচ্ছি।

মায়েরা অনেকজন একত্র হলে বলাবলি করেন – পুত্রবধু অপচয় করেন বেশি, সারা দিনে মিলে ঘ্যাত ঘ্যাত করে পেঁয়াজ কাটা আর চ্যাঁৎ চ্যাঁৎ করে কড়াইতে তেল ঢালাকেই এরা সংসারের বহু বড় কাজ ভেবে বসে থাকেন আর আমাদের সময় ৩/৪ জনের কাজই আমরা করে ফেলেছি।

এখন ওরা সারা দিনেই নাকি ফুরসত পায় না।
বউরা বলেন- শাশুড়ি বড়ই কৃপণ। সারাক্ষন শুধু এটা ওটা নিয়ে কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করেন।আলুর অর্ধেক পঁচে গেছে বাকিটা নেয়ার কোন দরকার আছে?

তেল কি আমি খেয়ে ফেলি না বাবার বাড়ি নিয়ে যাই? তেল ছাড়া কি রান্না হয়?
মায়েরা বলেন- আরে তেল মসলা সব দিয়ে রান্না করলে তো গরুর ঘাসও স্বাদ হবে।

বউ শাশুড়ির এই যুক্তিগুলো মাথায় রাখুন। এবার আপনি নিজেই নিজের শৈশবের স্মৃতিচারন করুন-
আমার আম্মা ছোট বেলায় কাঁচের বোতলে ‘ভালা তেল’ (সরিষার তেল) আনতে পাঠাতেন।কতগুলো জানেন? এক ছটাক।

এই এক ছটাকে পনের দিন অনায়াসেই পার করে দিতেন তিনি। কোরবানির সময় কেনা মরিচ হলুদের গুড়া পরের বারের কোরবানের আগেই শেষ হতো।
এভাবে প্রত্যেকটা জিনিস। ৫ টাকায় ৫০ গ্রামের ফিনলে চাপাতায় সপ্তাহ পার হয়ে যেত।
বউকে এখন জিজ্ঞেস করি প্রতি মাসে সরিষার তেল কতটুকু যায়? সে বলে ৩ লিটার।

আমার এক মামাত ভাই যখন ভারতের আলিগড়ে অধ্যয়নরত মামি আনাতেন ২ টাকার চিনি ২ টাকার চা পাতা। মায়ানীতে তখন তাদের ঘরে ও আরেকটি পরিবারে শুধু টিভি ছিল। মামা স্কুল শিক্ষক ছিলেন।যথেষ্ঠ স্বচ্ছলতা সত্ত্বেও মামিকে দেখতাম আশেপাশের শাক সবজি কচুর লতি রান্না করেই ৭/৮ জন সদস্যের পরিবার চালাতেন। হররোজ বাজার সদাইয়ের জন্য মামাকে টেনশন করতে হতো না।

তাহলে শাশুড়ি ও পুত্রবধুদের মাঝখানে এত ফারাক কেন?
আপনি কি ভাবছেন জানি না, আমি যা দেখছি সেটা হলো
হাল জমানার পুত্রবধুরা দুর্ভিক্ষ দেখেনি, অভাব দেখেনি, মঙ্গা দেখেনি। মা, নানি, দাদিরা দেখেছেন।তারা সেসব কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।

মা বলেন পাশের বাড়ির ছেলেরা একপ্লেট ভাতের বিনিময়ে কাজ করতেন স্বেচ্ছায় অফার করে। সেই ৭৪ এর দূর্ভিক্ষের সময় অনেকে এসে ভাতের মাড়গুলো তার জন্য রেখে দিতে অনুরোধ করতেন।
এখন প্রতিবেশীরা গরুর জন্য রাখতে বলেন।

সময় কত বদলে গেছে।জামা কাপড় এভেইলিএবল ছিল না। ভাই বোনেরা একই কাপড় পরে বড় হয়েছেন।এখনকার বউ বাচ্চাদের বছর বছর কাপড় না কিনে দিলে ঈদই হয় না।
সে সময়ের মায়েরা কঠিন পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করতে হয় শিখে গিয়েছিলেন বলেই এখন পুত্রবধুদের অপচয় দেখলে তাঁদের মাথা খারাপ হওয়াই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু এটা আপনি কখনোই তাদের বুঝাতে পারবেন না।

যুক্তি দেবে- তারা কষ্ট করেছেন বলে কি আমাদেরও কষ্ট করতে হবে?
এতক্ষনে হয়তো অনেকে অনুভব করতে পারছেন রান্নাঘরের মূল দ্বন্ধটা হলো ‘হিসেব করে চলা’- নিয়েই।
নতুন করে দূর্ভিক্ষ না এলে বা উত্তর বঙ্গের মত মঙ্গার সংস্পর্শ না পেলে গ্রামের পুত্রবধুদের আপনি কখনোই বুঝাতে পারবেন না।

শেষ করছি একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের ফেসবুক পোস্টের তথ্য দিয়ে। লেখাটা আমি কয়েকমাস আগে শেয়ার করেছিলাম।
তিনি লিখেছেন- তাঁর দীর্ঘ ডাক্তারি অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, যেসব রোগি হার্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে তার কাছে আসছেন এসবের মূল উৎপত্তি হলো রান্না ঘর।

আমিও তো তাই ভাবি প্রবাসিরা বলেন বিদেশে গ্যাস্ট্রিক কি তারা টেরই পান না। দেশে এলে বেড়ে যায়।
রান্না ঘরে রান্না করার পুরাতন বনেদি সিস্টেম বাদ দিয়ে হাল জমানার পুত্রবধুরা সব রেডিমেড করে ফেলেছেন।মায়েরা শিলে ঘষে মরিচ পেয়াজ ভ্যানিস করতেন।এখন বউরা কেবল ছুরি চালায়।
তাই এত এত জটিল রোগের সৃষ্টি।

আমার বাবা ও আরেক মামি ও মামাকে বৃদ্ধ হবার আগ পর্যন্ত কখনো ঔষধ খেতে দেখিনি। মেজরিটি বয়োঃবৃদ্ধদের বড় কোন রোগ বালাই হতে দেখিনি।
বর্তমানে গণহারে গ্যাস্টিক ও হার্ট ডিজিজের বড় নিয়ামক সয়াবিন তেল।

ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির লিখেছেন- অপরিশোধিত সয়াবিন বিদেশ থেকে এনে হিট দিয়ে পরিশোধন করতে গিয়ে কালো করে ফেলা হয়। সেটাকে আবার কেমিকেল দিয়ে স্বচ্ছ করা হয়। হিটের কারনে সয়াবিনের যেসব গুনমান নস্ট হয়ে যায়, কৃত্রিমভাবে সেগুলো আবার যোগ করা হয়।

এই কৃত্রিম গুনাগুন মানব শরীরে এডজাস্ট হয় না বলে নানা বিষক্রিয়া ও জটিলতার সৃষ্টি করে এবং সেটাই দেখা যাচ্ছে।

তাহলে আমরা রান্না ঘর নিয়ে যে ফ্যামিলি ক্রাইসিস দেখছি সেখানে মায়ের কথাই সঠিক।
মায়েরা হিসেব করে চলতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর রান্না আমাদের খাওয়াতেন বলেই আমরা সুস্থ সবল হয়ে বেড়ে উঠেছি। বউরা এখন বেহিসেবি ও সিস্টেম বহির্ভূত রান্না করেন বলেই এত রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব।
তাহলে বলুন কীভাবে আপনি ইনকামে বরকত পাবেন?

সংসার চালাতে ১৫ হাজারে হয় না।। রোগ ব্যাধিতে চলে যায় ১০/১২ হাজার! একটা ঔষধের পাতা ৭০ টাকার নিচে নাই।

আগে মায়েরা টাকার মূল্যমান কম হলেও পুরা মাসে ৫০০ টাকা (এখনকার দিনের ৫০০০ টাকা) খরচ করতেন কিনা সন্দেহ!

সুতরাং স্ত্রীরা যদি বুঝতে পারে আমাদের কি খেতে হবে? কীভাবে খেতে হবে? হিসাব করা মানে যে কৃপনতা নয়। তবে ঘরে ঘরে যেমন অর্থের বারাকাহ আসবে, তেমনি রোগ ব্যাধিও কমে যাবে।
ফ্যামিলী ক্রাইসিসও থাকবে না।
এটাও হতে পারে একটা চমৎকার ফ্যামিলি প্লানিং।
২ টা বাচ্চা জন্ম দেয়াই কেবল ফ্যামিলি প্লানিং নয়…

সম্পাদনায়: উজ্জ্বল প্রধান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত