সাতক্ষীরার দক্ষিণ মাছিয়াড়া দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্য

| আপডেট :  ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:১১  | প্রকাশিত :  ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:১১


সাতক্ষীরার দক্ষিণ মাছিয়াড়া দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্য

সারাদেশ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি


সাতক্ষীরা জেলার তালায় দক্ষিণ মাছিয়াড়া দাখিল মাদ্রাসায় নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রার্থী চূড়ান্তের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অত্র মাদ্রাসার সভাপতি এরফার মোড়ল ও সুপার আজিজুল ইসলাম পারিবারিক ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে এ সকল পদে নিয়োগের নীল নকশা তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে সভাপতির পুত্র ইব্রাহীম মোড়লকে নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে সুপার আজিজুলের ফুপাতো ভাইয়ের স্ত্রী জেসমিন খাতুনের নিয়োগ প্রায় চূড়ান্ত। এখন শুধু ঘোষণা বাকি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষ সহ অবিভাবকবৃন্দ ফুঁসে উঠেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত জুলাই’২০২২ সালে মাদ্রাসাটি এমপিও ভুক্ত হয়। মাদ্রাসা তৈরি শুরু থেকে অনিয়ম দুর্নীতি ঝেঁকে বসেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। শুরু থেকে যে সকল শিক্ষকগণ এখানে চাকরি করতেন তাদেরকে বাদ দিয়ে ভূয়া নিয়োগ বোর্ড দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য ও আত্মীয় করণের মাধ্যমে সুপারের শ্যালকের স্ত্রী খাদিজা আক্তার লিমা, তার বোন জামাই আজিজুল ইসলাম, নিকট আত্মীয় জেসমিন খাতুন ও সভাপতির মেয়ে সেলিনা আক্তারকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এরপর ২০২৪ সালের ৩১ মে একটি জাতীয় পত্রিকা ও একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুটি পদে স্থানীয় চাকরি প্রত্যাশীরা আবেদন করেন।

এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে আবেদনকারী নাজমুল সরদার, শারমীন বেগম, রেজাউল গাজী ও আব্দুস সবুর বলেন, আবেদন করার পরে জানতে পারি, নিরাপত্তা কর্মী পদে সভাপতির ছেলে ইব্রাহীম মোড়ল ও আয়া পদে সুপারের ফুপাতো ভাইয়ের স্ত্রী জেসমিন খাতুনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শিক্ষা অফিসসহ সকল দপ্তরকে ম্যানেজ করে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে তাদের পক্ষের লোকদের দিয়ে আবেদন করিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে বারবার চেষ্টা করেও নিয়োগ বোর্ড বসাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা।

এলাকার গোলাম রব্বানী, সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা বারী আবু বক্করের মামা বর্তমান মাদ্রাসার সভাপতি। প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি ও সুপার মিলে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই দুই পদে নিয়োগ প্রদানের সকল নীল নকশা তৈরি করেছেন। সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন তারা।

তারা জানান, মাদ্রাসা এমপিও হওয়ার পরে সুপারের শ্যালকের স্ত্রী খাদিজা আক্তার লিমা, তার বোন জামাই আজিজুল ইসলাম, নিকট আত্মীয় জেসমিন খাতুন ও সভাপতির মেয়ে সেলিনা আক্তারকে মাদ্রাসায় দেখা গেলেও শুরু থেকে তাদের কখনো মাদ্রাসায় দেখা যায়নি। অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকারে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

সুপার আজিজুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। আগে থেকেই তাদের নিয়োগ দেয়া ছিল তবে তারা মাদ্রাসায় ঠিকমতো আসতো না। এমপিও ভুক্তির পর থেকে তারা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। দুটি পদে নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, কাকে নিয়োগ দেয়া হবে আমি জানি না। এ বিষয়ে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ব্রিগেডিয়ার আবু বক্কর সাহেব ভালো বলতে পারবেন।

অত্র মাদ্রাসার সভাপতি এরফান মোড়ল বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। নিয়োগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা সিদ্ধান্ত নিবেন। এমনকি কবে নিয়োগ হবে তাও জানা নেই।

নিয়োগের আগে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ ফিরোজ হোসেন বলেন, কাদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে আমার জানা নেই। বিধিমোতাবেক বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হবে।

প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিগেডিয়ার বারী আবু বক্করের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিবার্তা/সেলিম/এমজে 

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত