সারাদেশে সহিংসতা : ৫ দিনে ৯৯৯-এ সোয়া দুই লাখ কল
কোটা বিরোধী আন্দোলন চলতি মাসের প্রথম দিকে শুরু হলেও গত ১৫ জুলাই ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আন্দোলনটিকে কেন্দ্র করে ১৮ থেকে ২২ জুলাই দেশব্যাপী শুরু হয় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতা। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি, মেট্রোরেল স্টেশন, সেতু ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে দুষ্কৃতিকারীরা। ১৮ থেকে ২২ জুলাই রাজধানীসহ সারাদেশে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল আসে ২ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৯টি। এসময় জীবন বাঁচাতে ফোন দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরাও। এর মধ্যে পুলিশ সংক্রান্ত কল ছিল পাঁচদিনে ৪ হাজার ৯২টি, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত কল ১ হাজার ৮১৪টি এবং আগুন সংক্রান্ত কল ৬৫৮টি। অগ্নিসংযোগের কলের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি কল ৯৯৯-এ করা হয় রাজধানী ঢাকা থেকে। জানা যায়, ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাইয়ের পরবর্তী দিনগুলোতেও প্রতিনিয়ত কল আসছে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ। সাধারণ মানুষ কারফিউ কখন শিথিল হবে, ইন্টারনেট কবে চালু হবে, রাস্তায় গণপরিবহন যাত্রা কখন থেকে শুরু হবে– এসব সহ বিভিন্ন নাগরিক সেবার বিষয়ে জানতে ও সেবা নিতে কল দিচ্ছেন। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৯৯৯-এ কল আসে ২০-২২ হাজার। করোনাকালে মানুষ লকডাউনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে ফোন দিতেন। তখন প্রতিদিন ৩০-৩২ হাজার কল আসতো। গত কয়েকদিন কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ফোন কল আসে। এসব কলের অধিকাংশ ছিল আন্দোলনের সময় চলা নাশকতা, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষ ও পুলিশ আটকে থাকার কল। ৯৯৯ সদর দপ্তর থেকে জানা যায়, ১৮ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে ১৮ থেকে ২০ জুলাই- এই তিনদিনে সবচেয়ে বেশি কল এসেছে ৯৯৯ নম্বরে। এই তিনদিনে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ ও আনসার সদস্যরাও ৯৯৯ এ কল করে সহায়তা চান। অনেক সাধারণ মানুষ আন্দোলনের সময় চলা সহিংসতায় আটকে পড়ে উদ্ধারের জন্য কল দেন। এসব কল পাওয়ার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছে ৯৯৯। কিন্তু আন্দোলনের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সেবা দেওয়া যায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে আগুন লাগার পর একাধিক কল যায় ৯৯৯ নম্বরে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি জানানো হয় ৯৯৯-এর পক্ষ থেকে। কিন্তু রামপুরা এলাকায় আন্দোলন চলায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আটকে দেওয়া হয় এবং ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আন্দোলন চলাকালীন অনেক ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স ও সেবা প্রদানকারী যানবাহন আটকে ছিল অনেকক্ষণ। ৯৯৯ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই অনেক পুলিশ সদস্য সহায়তা চেয়ে কল দিয়েছেন ৯৯৯-এ। পুলিশ সদস্যরা ৯৯৯-এ কল দিয়ে বলেন, ‘আন্দোলনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা নিজেদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। আন্দোলনকারীরা ঘিরে ধরে রেখেছে যে কোনো সময় তাদের ওপর হামলা হতে পারে, তাই তাদের যেন দ্রুত উদ্ধার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ।’ এছাড়া অনেক পুলিশ সদস্য কল দিয়ে বলেন, ‘তারা সহিংসতায় একা আটকে আছেন তাদের যেন দ্রুত উদ্ধার করা হয়।’ অনেক সাধারণ মানুষও আন্দোলনের সময় চলা সহিংসতায় আটকে পড়ে উদ্ধারের জন্য জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। এর মধ্যে ছিল অগ্নিসন্ত্রাস ও যানবাহন ভাঙচুরের সময় আটকে পড়া। আবার অনেক মানুষ আন্দোলন চলার সময় কল দিয়ে জানতে চেয়েছেন কোন রাস্তা দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারবেন। সংঘাতপ্রবণ এলাকাগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি কল এসেছে। যেমন- যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকা থেকে কল এসেছে বেশি। অনেক পুলিশ সদস্য সংঘাত চলাকালীন আটকে পড়েছিলেন। তারা ৯৯৯-এ কল করে সহায়তা চান। অনেক ক্ষেত্রে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে আবার কিছু সেবা দেরিতে হয়েছে। তবে সংঘাত চলাকালীনও ৯৯৯-এর নম্বর খোলা ছিল ২৪ ঘণ্টা।- জাতীয় জরুরি সেবার মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স অফিসার আনোয়ার সাত্তার জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ জুলাই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কলে আসে ৩৪ হাজার ২৩৪টি। এদিন অগ্নিকাণ্ডের কল আসে সারাদেশ থেকে ১৫৯টি। অগ্নিসংযোগের কলগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি ছিল রাজধানী ঢাকা থেকে। ১৯ জুলাই কল আসে ৪৮ হাজার ৯৯টি। এর মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কল ২৫৭টি। এই ২৫৭টি কলের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কল ছিল রাজধানী ঢাকা থেকে। ২০ জুলাই কল আসে ৪২ হাজার ৭৬৮টি। এর মধ্যে অগ্নিসংযোগের কল ১৩৫টি। ৮০ শতাংশেরও বেশি অগ্নিসংযোগ সংক্রান্ত কল রাজধানী ঢাকা থেকে। ২১ জুলাই কল আসে ৪৬ হাজার ৩৪৩টি। এর মধ্যে পুলিশ সংক্রান্ত কলের সংখ্যা ছিল ৬৬৮টি, অগ্নিসংযোগের কল ৫১টি। জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত কল ছিল ৪০৪টি। ২২ জুলাই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল আসে ৪৫ হাজার ৩২৫টি। এর মধ্যে পুলিশ সংক্রান্ত কল ছিল ৫৪৯টি, অগ্নিসংযোগের কল ৫৬টি। জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত কল ছিল ৩০৯টি। ১৮, ১৯, ২০, ২১ ও ২২ জুলাইয়ের পরবর্তী দিনগুলোতেও প্রতিনিয়ত কল আসতে থাকে ৯৯৯ নম্বরে। সাধারণ মানুষ ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানতে চান কারফিউ কখন শিথিল হবে? ইন্টারনেট কবে চালু হবে? রাস্তায় গণপরিবহন যাত্রা কবে থেকে শুরু হবে? বাজারঘাট খোলা আছে কি না? বিদ্যুৎ-পানির বিল সংক্রান্তসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবার বিষয়ে জানতে ও সেবা নিতে কল দিচ্ছেন। জাতীয় জরুরি সেবার মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স অফিসার (পুলিশ পরিদর্শক) আনোয়ার সাত্তার জানান, ‘গত ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই আন্দোলনে সৃষ্ট পরিবেশ এবং নৈরাজ্য সংক্রান্ত কল আসে সবচেয়ে বেশি। সেতু ভবন ও বিটিভিসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর সেখানকার কর্মচারীরা সহায়তা চেয়ে কল দিয়েছেন। কল আসার পর আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানা ও সংস্থাকে জানিয়েছি। কিন্তু রাস্তায় সংঘাত চলমান থাকায় এসব কলের বিপরীতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সংঘাত চলমান থাকায় সেবাপ্রত্যাশীদের সেবা দেওয়ার কার্যক্রম ব্যাহত হয়।’ তিনি বলেন, ‘অনেক পুলিশ সদস্য সংঘাত চলাকালীন আটকে পড়েছিলেন। তারা ৯৯৯-এ কল করে সহায়তা চান। অনেক ক্ষেত্রে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে আবার কিছু সেবা দেরিতে হয়েছে। তবে সংঘাত চলাকালীনও ৯৯৯-এর নম্বর খোলা ছিল ২৪ ঘণ্টা।’ বিবার্তা/এসবি
সারাদেশে সহিংসতা : ৫ দিনে ৯৯৯-এ সোয়া দুই লাখ কল
বিবার্তা প্রতিবেদক
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত