সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে: ওয়াকার-উজ-জামান

| আপডেট :  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫  | প্রকাশিত :  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫


সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে: ওয়াকার-উজ-জামান

জাতীয়

বিবার্তা প্রতিবেদক


অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যা-ই হোক না কেন’ পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে, যাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো শেষ করা যায় এবং আগামী ১৮ মাসের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং তার বাহিনী আগস্টের শুরুতে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী বিক্ষোভের সময় নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিলেন। ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পথে ধাবিত হয়। ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন।

ঢাকায় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে রয়টার্সের সঙ্গে বিরল এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার তার পূর্ণ সমর্থন পাবে এবং দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকার পথে কাজ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তার পাশে থাকবো। যা-ই ঘটুক না কেন, যাতে তিনি তার মিশন সম্পূর্ণ করতে পারেন।’ ইউনূসের মিশন হল দেশের বিচারব্যবস্থা, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা, যা ভবিষ্যতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ খুলে দেবে।

জেনারেল জামান বলেন, ‘যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি বলবো যে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসা উচিত। তবে এর জন্য ধৈর্য ধরতে হবে।’

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও আওয়ামী লীগ উভয়েই ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন করার দাবি তুলেছিল। তবে সেনাপ্রধান বলেন, ধৈর্যের সাথে কাজ করতে হবে এবং প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে এগোবে।

ইউনূস এবং সেনাপ্রধান প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করেন এবং তাদের মধ্যে ‘খুবই ভালো সম্পর্ক’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জামান।

তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে, যাতে সাম্প্রতিক অস্থিরতার পর দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়। ‘আমরা যদি একসাথে কাজ করি, তাহলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই,’ বলে মনে করেন তিনি।

গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরির কোটা বাতিলের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন রূপ নেয় ব্যাপক সহিংস বিদ্রোহে, যা দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ওই সময় সহিংসতায় ১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। এর পর থেকেই সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

জেনারেল জামান উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমার সংগঠনকে পেশাদার রাখাই আমার প্রধান লক্ষ্য। কোনো অবস্থাতেই আমি আমার বাহিনীকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে দেবো না।’

প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ক্ষমতার সময়কালে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল এবং কিছু সেনাসদস্যকে ইতিমধ্যে শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো সেবা দানকারী সদস্য দোষী প্রমাণিত হয়, অবশ্যই আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০ জন নিখোঁজ ব্যক্তির ঘটনায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। সেনাপ্রধান জামান বলেন, সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার না করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত এবং এটি দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে আনা যেতে পারে।

জেনারেল জামান তার বক্তব্যে বলেন, ‘সেনাবাহিনী কখনোই রাজনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয়। একজন সৈনিকের কাজ রাজনীতি নয়, দেশ ও জনগণের সেবা করা।’

বিবার্তা/জেএইচ

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত