১৭৯ কিমি বেগে আঘাত হানবে ‘হারিকেন বেরিল’, ক্যারিবীয় অঞ্চলে সতর্কতা

| আপডেট :  ৩০ জুন ২০২৪, ১০:২২  | প্রকাশিত :  ৩০ জুন ২০২৪, ১০:২২


১৭৯ কিমি বেগে আঘাত হানবে ‘হারিকেন বেরিল’, ক্যারিবীয় অঞ্চলে সতর্কতা

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় ঝড় হারিকেন বেরিল আরো শক্তি সঞ্চয় করে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্বে অগ্রসর হচ্ছে। ভয়াবহ এই হারিকেন আঘাত হানার আগেই স্থানীয়দের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

সোমবার (১ জুলাই) এই হারিকেন ক্যারিবীয় দ্বীপে ভয়াবহ তাণ্ডব চালাতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইউএস ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি)।

ইউএস ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) বলেছে, বেরিল বর্তমানে বারবাডোসে থেকে প্রায় ৮৫০ কিলোমিটার পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থান করছে। সোমবার (১ জুলাই) সকালের দিকে উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানতে পারে এটি। সেই সময় ভয়াবহ বিপজ্জনক ঝড়ে পরিণত হতে পারে বেরিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলেছে, আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে বার্বাডোস, ডোমিনিকা, গ্রানাডা এবং মার্টিনিকের ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দিকে অগ্রসর হচ্ছে হারিকেন বেরিল। এগিয়ে চলার সাথে প্রবল শক্তি সঞ্চয় করছে এই ঝড়।

বিবিসি জানিয়েছে, রোববার (৩০ জুন, স্থানীয় সময়) ক্যারিবিয়ানের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঝড়টি। এই অঞ্চলে হারিকেন মৌসুম সাধারণত ১ জুনে শুরু হয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলে। আটলান্টিক মহাসাগর অঞ্চলে হারিকেন মৌসুমের শুরুতে এটি দ্বিতীয় শক্তিশালী ঝড় হতে যাচ্ছে।  এর আগে প্রথম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় আলবার্টোর আঘাতে চারজনের মৃত্যু হয়।

ঝড়টি ক্যাটাগরি-৩ বা এর চেয়েও বিপজ্জনক হারিকেনে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে ইউএস ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি)। এ সময় ঘণ্টায় এর বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ১৭৯ কিলোমিটার। ঝড়টি বর্তমানে বারবাডোস উপকূল থেকে প্রায় ৮৫০ কিলোমিটার পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থান করছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভয়াবহ ঝড় আঘাত হানার আশঙ্কায় বার্বাডোজের রাজধানী ব্রিজটাউনের গ্যাস স্টেশনগুলোয় সারিবদ্ধভাবে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সুপার মার্কেট এবং মুদিদোকানে খাবার, পানি ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে।

এদিকে, ঝড়ের আশঙ্কায় ওই অঞ্চলের লোকজন তাদের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক লোকজনকে গ্যাস স্টেশনে জ্বালানির সারিতে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া ঝড়ের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে লোকজন খাদ্যসামগ্রী ও পানি মজুত করছে।

শনিবার (২৯ জুন) রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী হারিকেন বেরিলের আঘাত করার সময় নাগরিকদের বন্ধুবান্ধব, পরিবার এবং প্রতিবেশীদের দিকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসবিদরা বলছেন, শুক্রবার (২৮ জুন) রাতে পূর্ব আটলান্টিক সাগরে হারিকেন বেরিল গঠিত হয়েছে। আগামী কয়েক দিন ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে মেক্সিকো উপসাগরের দিকে ধেয়ে যাওয়ার সময় এটি ক্যাটাগরি-৩ ঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সময় বেরিলের প্রভাবে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ১৭৯ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

তারা বলেছেন, পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগর লাগোয়া উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জে সবার আগে আঘাত হানতে পারে ঝড়টি। এরপর ডমিনিকা, মার্টিনিক, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রানাডাইনস ও গ্রানাডার দিকে ধেয়ে যেতে পারে। এ সময় ওই অঞ্চলে প্রবল শক্তিতে আঘাত হানতে যাওয়া এই ঝড় প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ ঢেউয়ের পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় আলবার্তোর পর আটলান্টিক মহাসাগরে বেরিলই চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় ঝড়। এর আগে, ২০ জুন উত্তর-পূর্ব মেক্সিকোতে আঘাত হানে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় আলবার্তো। সেই ঝড়ের প্রবল তাণ্ডবে দেশটিতে চারজনের প্রাণহানি ঘটে।

বার্বাডোসের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা হারিকেন বেরিলের তাণ্ডবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও আকস্মিক বন্যা হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে।হারিকেনটি দ্বীপের দক্ষিণে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকার ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই ঝড়ের প্রভাবে বার্বাডোসসহ ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, আটলান্টিক মহাসাগর লাগোয়া অঞ্চলে হারিকেনের মৌসুম ১ জুন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলে। চলতি বছরে ওই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি হারিকেন আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।

ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) চলতি মৌসুম সম্পর্কে সবচেয়ে ভয়াবহ সতর্কতা জারি করেছে।

পূর্বাভাসবিদরা বলেছেন, ২০২৪ সালে অন্তত ২৫টি ঝড় আঘাত হানতে পারে। এসব ঝড়ের মধ্যে আট থেকে ১৩টি হারিকেনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এসব ঝড়ের মধ্যে চার থেকে সাতটি যেকোনও জায়গায় শক্তিশালী হয়ে ক্যাটাগরি-৩ বা আরও তীব্র হারিকেনে রূপ নিতে পারে। যা স্বাভাবিক সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হারিকেনসহ চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো ঘন ঘন ঘটছে এবং এসব আরো বিধ্বংসী হয়ে উঠছে।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত