২ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হত্যার পর বুলডোজার দিয়ে বালুচাপা

| আপডেট :  ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৩  | প্রকাশিত :  ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৩


২ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হত্যার পর বুলডোজার দিয়ে বালুচাপা

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


ফিলিন্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি সৈকতে দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি পুরুষকে গুলি করে হত্যার পর সামরিক বুলডোজার দিয়ে লাশ বালুচাপা দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা।

কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার একটি সৈকতে এই ঘটনা ঘটেছে। নির্মম এ ঘটনার এক্সক্লুসিভ ভিডিও ফুটেজ হাতে পেয়েছে আলজাজিরা।

ভিডিওতে দেখা যায়, সৈকতে দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি হাঁটছিলেন। একপর্যায়ে তাদের একজনকে বারবার একটি সাদা কাপড় নাড়তে দেখা যায়। কোনো হুমকি সৃষ্টি না করা সত্ত্বেও দুজনকে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা। পরে গাজা শহরের কাছে সামরিক বুলডোজার দিয়ে মরদেহ দুটি বালুচাপা দেয়া হয়।

আল জাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, নিহত ওই দুজন গাজা সিটির দক্ষিণ-পশ্চিমে নাবুলসি গোলচত্বরের কাছে ছিল এবং একমাত্র সম্ভাব্য রুট আল-রশিদ স্ট্রিট হয়ে উপত্যকার উত্তরে তাদের বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করছিল। এখানেই তারা ইসরাইলি সেনাদের মুখোমুখি হন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করার কয়েকদিন পর এবং অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে প্রায় ছয় মাস ধরে ইসরাইলের হামলা বন্ধের ক্রমবর্ধমান দাবির মধ্যে ভিডিওটি প্রকাশ হলো।

এদিকে আল শিফা থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের দাবি, ইসরাইলি ট্যাংক এবং সাঁজোয়া বুলডোজার কমপক্ষে চারটি মৃতদেহ এবং অ্যাম্বুলেন্সের ওপর দিয়ে চালানো হয়েছে।

দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি বলেছে, এই ঘটনা ইসরাইলি ফ্যাসিবাদ ও অপরাধের মাত্রার আরও প্রমাণ হাজির করে। এটাই জায়নবাদী আচরণকে পরিচালিত করে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম নাগরিক অধিকার গোষ্ঠী কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) বলেছে, গাজার সৈকতে দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি পুরুষকে হত্যা এবং বুলডোজার দিয়ে লাশ দুটি বালুর নিচে চাপা দেওয়ার ঘটনার তদন্ত জাতিসংঘকে অবশ্যই করতে হবে।

ফিলিস্তিনে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত অধ্যাপক রিচার্ড ফাল্ক বলেছেন, এই ঘটনা ইসরায়েলি সেনারা দৈনন্দিন ভিত্তিতে গাজায় যে নৃশংসতা চালাচ্ছে তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও হাজারো বার ইসরায়েলি সেনারা নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে। এই তো কিছুদিন আগেই, উত্তর গাজার একটি ত্রাণ ক্যাম্পে ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় থাকা নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গাজা শহরের পশ্চিম নাবুলসি গোলচত্বরে ত্রাণের ট্রাকের দিকে খাবারের জন্য মরিয়া হাজার হাজার মানুষ ছুটে গেলে ভিড়ের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলিরা। সেই গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অন্তত ১১২ জন এবং আহত হয় আরও অন্তত ৭ শতাধিক ফিলিস্তিনি।

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে গত মার্চ। সেদিন গাজা শহরের উপকণ্ঠে কুয়েত গোলচত্বরে ত্রাণবাহী ট্রাকের জন্য অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর বিনা কারণে ছোড়া ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৯ জন নিহত হয়।

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে নিহতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ৩২ হাজার ৫০০ জনে। এ ছাড়া গত অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৭৫ হাজার ফিলিস্তিনি।

বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের ভয়াবহ হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৩২ হাজার ৪৯০ জনে পৌঁছেছে। খবর আনাদোলুর।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একই সময়ে অন্তত ৭৪ হাজার ৮৮৯ জন ফিলিস্তিনি ইসরাইলি হামলায় আহত হয়েছেন।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের হামলায় ৭৬ জন নিহত এবং আরও ১০২ জন আহত হয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক ভুক্তভোগী এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় ১২শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরও ২৪২ জনকে। ওই দিন থেকে পাল্টা আক্রমণে তীব্র আক্রোশে গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলায় পুরো গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩২ হাজার ৪১৪ ফিলিস্তিনি। আর আহত হয়েছেন ৭৩ হাজার ৯৩৪ জন। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বাসিন্দারা প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।

এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর এমন আচরণে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের বদলে রোববার মিশরের সীমান্তবর্তী রাফা শহরে স্থল অভিযানের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যেখানে হামলার মুখে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত