৩ লাখের মোটরসাইকেল ২৫ হাজার টাকা

| আপডেট :  ১৩ মার্চ ২০২২, ০৮:৪২  | প্রকাশিত :  ১৩ মার্চ ২০২২, ০৮:৪২

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মাত্র ৪-৫ সেকেন্ডেই দামি মোটরসাইকেল চুরি করতো চক্রটি। এদের প্রধান টার্গেট দুই থেকে চার লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল। মাস্টার চাবি দিয়ে সহজেই স্টার্ট করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যেতে পারদর্শী তারা। তবে প্রায় প্রতিটি চুরির ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীর উদাসীনতাও অনেকাংশে দায়ী। এ সুযোগ কাজে লাগায় সংঘবদ্ধ চোরচক্র।

সম্প্রতি এই চক্রের মূলহোতাসহ তিন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকা মহানগর (গোয়েন্দা) গুলশান বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ দলের সদস্যরা এ অভিযান চালান।

গ্রেফতাররা হলেন- মশিউর রহমান ওরফে মিশু (৩২), রনি দালাল (৩১) ও নাজিম শেখ (৩৫)। তাদের কাছ থেকে ১০টি দামি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এসব চোরাই মোটরসাইকেল মুন্সিগঞ্জের মোল্লারচর, সিপাহীপাড়া, বেতকা, মুক্তারপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন বলে জানান গ্রেফতাররা।

ভুক্তভোগীদের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগের মশককর্মী মো. ইসমাইল হোসেন রাসেল। জানান, তিনি থাকেন রাজধানীর পল্লবীতে। বাসা থেকে অফিসে যাতায়াতের জন্য তার বড় ভাই তাকে একটি দুই লাখ ১০ হাজার টাকা দামের ইয়ামাহা ফেজার (ঢাকা-মেট্রো-ল-৩৩-৭৪৪৭) মোটরসাইকেল কিনে দেন। কিছুদিন এটা দিয়ে যাতায়াত করছিলেন। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ডিএসসিসির নগর ভবনের গেটের সামনে মোটরসাইকেলটি রেখে অফিসে যান তিনি। প্রায় এক ঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে দেখেন তার মোটরসাইকেল নেই। এরপর নগর ভবনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলটি স্টার্ট করে ভবনের প্রধান গেট দিয়ে বাইরে চলে যায়।

আরেক ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম বলেন, তার ইয়ামাহা ফেজার মোটরসাইকেল ছিল। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি মোটরসাইকেলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল গেটের ভেতরে রাখেন। এরপর যান হাসপাতালের ভেতর। কিছুক্ষণ পর এসে দেখেন মোটরসাইকেলটি যথা স্থানে নেই। এরপর তিনি শাহবাগ থানায় মামলা করেন।

চুরি যাওয়া কোনো মোটরসাইকেলের মালিকই হাইড্রোলিক তালা লাগাননি। আর এটাকেই সুযোগ হিসেবে নিয়েছে চোরচক্র।

গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ জানায়, কয়েক মাস ধরে দামি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা বেড়েছে। চোরচক্র প্রতি সপ্তাহে দু-তিনটি মোটরসাইকেল চুরি করে। তারা প্রথমে রেকি, এরপর সুযোগ বুঝে মাস্টার চাবির মাধ্যমে স্টার্ট দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এমনভাবে চুরি করা হতো যে, অপরিচিত কেউ দেখলে মনে হতো, এটি তাদের নিজস্ব মোটরসাইকেল। এভাবে তারা প্রায় তিনশটির বেশি মোটরসাইকেল চুরি করে বিক্রি করেছে।

গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, চক্রটির সদস্যরা চুরিতে আসার আগে দর্জির পেশায় ছিলেন। দর্জি পেশায় আয় কম হওয়ায় জড়িয়ে পড়েন চুরিতে। পরবর্তীসময়ে মামুন নামের একজনের হাত ধরে তারা মোটরসাইকেল চুরির কাজে নামেন।

এই চক্রের চুরির কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি মোটরসাইকেল চুরি করতে চোরচক্রের দুজন সদস্য স্পটে থাকতেন। একজনের কাজ ছিল মোটরসাইকেল মালিকের গতিবিধি লক্ষ্য করা, অপরজন মোটরসাইকেলটি কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করতেন। এরপর মাত্র ৪-৫ সেকেন্ডের মধ্যে মাস্টার চাবি দিয়ে মোটরসাইকেল স্টার্ট করে সহযোগীকে নিয়ে স্থান ত্যাগ করতেন।

‘মুন্সিগঞ্জ থেকে মাস্টার চাবি তৈরি করে তারা ঢাকায় আসে। এই চাবি তৈরিতে তারা মোটা অংকের টাকা খরচও করে। একটি মাত্র চাবি দিয়েই চক্রের সদস্যরা মোটরসাইকেলের ঘাড় লক খুলে স্টার্ট দিয়ে চুরি করে পালিয়ে যেত।’

জানতে চাইলে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, চোরচক্রের সদস্যরা মোটরসাইকেলগুলো মুন্সিগঞ্জের হাসান নামে একজনের কাছে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এরপর হাসান চোরাই মোটরসাইকেলগুলো কিছুদিন তার কাছে রেখে গ্রামের মানুষের কাছে বিক্রি করেন ৪০-৫০ হাজার টাকায়।

ডিসি মশিউর রহমান আরও বলেন, তিন বছর ধরে এই চক্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ, টিএসসি চত্বর, নগর ভবন, গুলিস্তান, ধানমন্ডি লেক, কাঁচপুর, গাউছিয়া, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি সপ্তাহে দু-তিনটি করে দামি মোটরসাইকেল চুরি করেছে। এ বিষয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় চারটি, বংশাল থানায় একটি, নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি, আড়াইহাজার থানায় একটি ও ঢাকা জেলার দোহার থানায় একটি মামলা রয়েছে। এর আগেও এই চক্রের সদস্যরা দুবার গ্রেফতার হয়েছিল। কারাগার থেকে বের হয়ে তারা আবারও চুরিতে জড়িয়ে পড়ে।

গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, চুরির মূলহোতা মশিউর, আর বিক্রির মূলহোতা ছিলেন হাসান নামে একজন। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত