৫ কারণে বিএনপির ওপর আস্থা নেই কূটনীতিকদের

| আপডেট :  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৫৭  | প্রকাশিত :  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৫৭

বিএনপি এখন রাজপথে আন্দোলন এর চেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছে কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে। প্রতিদিনই কূটনীতিকপাড়ায় বিভিন্ন দূতাবাসে তারা ধরণা দিচ্ছে। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ফর্মুলা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশে সরকারের বাধাদান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়রানি এবং গুম নিয়ে কথা বলছে।

বিএনপির এ সমস্ত কথাবার্তা পশ্চিমা দেশগুলো শুনছে। কিন্তু কোনো মন্তব্য করছে না। পশ্চিমা দেশগুলো কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যেভাবে সতর্কবার্তা দিচ্ছিল, সেই সতর্কবার্তা দেওয়া তাদের এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বিএনপি যে সমস্ত অভিযোগ করছে সেই অভিযোগগুলোর পরও কূটনৈতিকদের মন কেন গলছে না এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় প্রশ্ন। গত এক মাসে বিএনপি অত্যন্ত ১২ টি দেশের কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেছেন, কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়নি। কেন বিএনপির প্রতি আস্থাশীল নন কূটনীতিকরা? এরকম প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. বিএনপির সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা: সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতারা জাপানের রাষ্ট্রপতির সাথে বৈঠক করেছেন। জাপানের রাষ্ট্রদূত বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এসে বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকের সময় বিভিন্ন আলাপ আলোচানায় জাপান দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জঙ্গি নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুস্পষ্টভাবে বলেন, জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কখনো ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদ দমনে তারা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ।এই সময় জাপান বিএনপির সাথে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা এবং জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে প্রশ্ন করেন। এই প্রশ্নের উত্তর মির্জা ফখরুল এড়িয়ে যান। উল্লেখ যে, হলি আর্টিজানে যে জঙ্গিবাদের আক্রমণ হয়েছিল, সেই আক্রমণে জাপানের বেশ কয়েকজন নাগরিক মারা গিয়েছিল। এই জন্য বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান জাপানের বড় একটি ইস্যু। কিন্তু এই ইস্যুতে বিএনপি তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। জাপান সবসময় মনে করে যে, বাংলাদেশে যেমন গণতন্ত্র দরকার, সুশাসন দরকার তেমনি মুক্তচিন্তার বিকাশও দরকার এবং এ দুটির সমন্বয় না করা হলে সেটি হিতে বিপরীত হতে পারে।

২. তারেক জিয়ার নেতৃত্ব: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুস্পষ্টভাবে বিএনপির কাছে একাধিকবার জানতে চেয়েছে তাদের আসল নেতা কে? বিএনপি যদি সরকার গঠন করে তাহলে কে তাদের নেতা হবে? এই প্রশ্নের উত্তর বিএনপি কখনো বলেছেন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন আবার কখনো তারেক জিয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু এই দুইজনই নির্বাচনে অযোগ্য। এই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর আস্থা রাখতে পারছে না।

৩. জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক: জামায়াতের সাথে সম্পর্কের অস্পষ্টতা দূর করা বিএনপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে বিএনপির উপর আস্থা রাখতে পারে না তার একটি বড় কারণ বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক।

৪. বিকল্প ও কর্মপরিকল্পনা কি: বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত জানতে চায় যে, আওয়ামী লীগ সরকারের যে ব্যর্থতার অভিযোগ গুলো বিএনপি করছে, তার বিকল্প কি? ক্ষমতায় এলে তাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কি, সুশাসনের জন্য তারা কি করবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ অন্যান্য কালাকারণের ব্যাপারে তাদের অবস্থান কি ইত্যাদির ব্যাপারে বিএনপির কিছু কিছু জবাব দিলেও অধিকাংশ ব্যাপারে তাদের অস্পষ্টতা এবং ধোয়াচ্ছন্ন চিন্তাভাবনা রয়েছে। যেমন, অর্থনৈতিক কৌশলের ব্যাপারে বিএনপির এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো রূপরেখা নাই। একইভাবে সুশাসনের ব্যাপারে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গিও স্বচ্ছ নয় বলে জানা গেছে।

৫. নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন: বিএনপির কাছে সব কূটনৈতিকরাই জানতে চেয়েছে যে, তারা কেন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। এর আগে কেন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করেছিল। এইসব ব্যাপারেও বিএনপির বক্তব্যের মধ্যে অস্পষ্টতা এবং অসংলগ্নতা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত