শহরে শহরে উত্তেজনা, গণঅভ্যুত্থানের দিকে যাচ্ছে পাকিস্তান?
জেলে বন্দি ইমরান খানের এক ডাকে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার জনতা। বিভিন্ন প্রদেশ থেকে রাজধানী ইসলামাবাদের পথে রওনা হয়েছেন তার দল পিটিআই এর সমর্থকরা। রোববার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে পাকিস্তান সরকার ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সেবা বন্ধ করে দিয়েছে।
আদালত ইমরান খানের দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের ইসলামবাদে জমায়েত হওয়ার জন্য ইমরান খানের ‘চূড়ান্ত ডাক’- অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাওয়া খবর অনুসারে, পিটিআই সমর্থকরা ইসলামাবাদের পথে রওনা হয়েছেন।
এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর ইমরান খান সারা দেশে বিক্ষোভের জন্য ‘চূড়ান্ত ডাক’ দেন। সেই দিন তিনি ঘোষণা দেন, সবাইকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সমবেত হওয়ার। তিনি অভিযোগ করেন, জনগণের ম্যান্ডেট চুরি, মানুষকে অন্যায়ভাবে আটক এবং ২৬তম সংশোধনী পাস করে দেশে ‘একনায়কতান্ত্রিক শাসন’ আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।
২০২৩ সালের আগস্টে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর থেকে তার দল তার মুক্তি এবং ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কথিত কারচুপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।
এবার দেশবাসীকে অবৈধ নির্বাচন ও সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার জন্য ‘চূড়ান্ত ডাক’ দেন ইমরান খান। তার ডাকে ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রস্ততি নিয়েছে পিটিআই। অপরদিকে দেশজুড়ে এ বিক্ষোভ সমাবেশ দমনের জন্য পুলিশ প্রস্তুতি নিয়েছে। এরকম টান টান উত্তেজনায় দেশটির পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে পাকিস্তান সরকার বিক্ষোভ দমন করতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে এবং কোনো ধরনের সমাবেশ অনুমোদন না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে, ইমরান খানের সমর্থকরা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তারা যে কোনো মূল্যে এই চূড়ান্ত বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করবেন। তাদের বিশ্বাস, কোনো বাধাই তাদের থামাতে পারবে না।
উল্লেখ্য, পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই বর্তমানে কারাগারে বন্দি, তাই বিক্ষোভের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে সংবাদমাধ্যম ডন সূত্রে জানা যায়, সমাবেশে পিটিআই কোনো একক নেতা নিয়ে আসবে না। নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা নিজ উদ্যোগে বিক্ষোভ করবেন। তবে, যদি কোনো বাধার সম্মুখীন হন, তাহলে তারা প্রতিক্রিয়া জানাতে পিছপা হবেন না।
দেশটির গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাব রাজ্য সরকার বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কায় তিন দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে এবং ১০ হাজার ৭০০ পুলিশ সদস্যকে প্রস্তুত রেখেছে। রাজধানী ইসলামাবাদ যাওয়ার বিভিন্ন সড়ক ব্লক করে রাখা হয়েছে।
এর আগে, ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি ভিডিও বার্তায় পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ২৪ নভেম্বরের বিক্ষোভ কোনোভাবেই পরিবর্তন করা হবে না, কারণ এটিই চূড়ান্ত ডাক। বুশরা বিবির এই শক্তিশালী বক্তব্য পাকিস্তানে দলটির সমর্থকদের মধ্যে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে।
বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে বুশরা বিবির আহ্বানকে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বিপজ্জনক হিসেবে দেখছেন এবং সতর্ক করেছেন, ২৪ নভেম্বরের বিক্ষোভ যদি সহিংসতায় রূপ নেয়, তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও গভীর হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পাকিস্তানে ২৪ নভেম্বর কি আবারও এক অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে? নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। পাকিস্তানের রাজনীতি এখনো অস্থিতিশীল এবং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত