‘সচেতন নাগরিকের দায়িত্বের জায়গায় নৈতিকতা ও সততার প্রতিশ্রুতি থাকা জরুরি’

| আপডেট :  ০১ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৭  | প্রকাশিত :  ০১ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৭


‘সচেতন নাগরিকের দায়িত্বের জায়গায় নৈতিকতা ও সততার প্রতিশ্রুতি থাকা জরুরি’

সামিনা বিপাশা


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক রোমানা পাপড়ি। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তরের ছেংগারচর পৌরসভাতে। প্রাইমারি স্কুল পার করেছিলেন কয়েকটি। বাবা হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। বাবার চাকরি সূত্রে সেখানে দুটি স্কুলে গিয়েছেন। রোমানা পাপড়ির মা’ও শিক্ষক ছিলেন। ফলে যেকোনো বন্ধে ঢাকায় বা নিজ গ্রামে আসলেও মা স্কুলে পাঠাতেন।

রোমানা পাপড়ি বলেন, প্রাইমারি স্কুলে পড়া অবস্থায় ৫ টির মতো পাঠ চুকিয়েছি। পড়াশুনার ফাঁকে যথেষ্ট খেলাধুলা করেছি স্কুল ও বাসায়। তারপর বাবার স্কুলেই ক্লাস সিক্সে ভর্তি হই কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর নিজ গ্রামে চলে আসি। তারপর ছেংগারচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ক্লাস সিক্স থেকেই এসএসসি সম্পন্ন করি। অনেক স্মৃতি স্কুল জীবন নিয়ে। বাবা নেই এভাবেই পড়াশোনায় মনোযোগী হতাম। স্কুলে শিক্ষকবৃন্দ, বড় আপু-ভাইয়ারা ও বন্ধুরা ভীষণ ভালোবাসতেন ও স্নেহ করতেন। প্রতিদিনের পড়ালেখা প্রতিদিন সেরে নিতাম। এককথায় কীভাবে ভালো ফলাফল করা যায় সে চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। এতে সবাই সহযোগিতা করতেন। স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম, কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতা ও স্কাউট করতাম। স্কুলে ছুটির দিনে সাইকেল চালাতাম।

রোমানা পাপড়ি বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। কলেজজীবন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কলেজের সময়টা বেশ অল্প এছাড়া বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করাতে ক্লাস এরপর ল্যাব ক্লাস করে দিন শেষ হতো। গ্রাম থেকে আসার পর ঢাকাতে কলেজ অ্যাডজাস্ট হতে কিছুটা সময় লেগেছে। জীবনের স্বপ্নপূরণে কলেজের শিক্ষকদের অবদান আছে। উনাদের চলনবলন অনুসরণীয় ছিল। কিছু বান্ধবী ছিল ওদের নিয়ে ফুচকা ও ঝালমুড়ি খেতাম। কেউ টিফিন নিয়ে আসলে শেয়ার করে খেতাম। বান্ধবীরা এখন স্ব-স্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।

রোমানা পাপড়ি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি বি.এ. ও এম.এ. উভয় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। প্রথম স্থানের লাভ করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি স্বর্ণপদক ও দুটি ডীনস অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। তিনি ২০২২ সালে এম.ফিল সম্পন্ন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল “বৌদ্ধদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা : পরিপ্রেক্ষিত ঢাকা শহর”।

বিজ্ঞানের বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই রোমানার ইচ্ছে ছিল তিনি মেডিকেলে পড়বেন। স্বপ্নপূরণ না হলেও তিনি লক্ষ্যপূরণ করেছেন ঠিকই। রোমানা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবার পর বিভাগে ভর্তি হবার পর আফসোস হয়নি। বিভাগের প্রতি শ্রদ্ধা, শিক্ষকবৃন্দের স্নেহের পাঠদান, নিয়মিত অনুশীলনে ভালো ফলাফলে আফসোস করতে হয়নি আর! বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন এক্সট্রা কারিকুলামের সংগঠনে যুক্ত ছিলাম। যেমন: বিএনসিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ, আবৃত্তি, ভাষা শিক্ষা। পড়াশুনার ফাঁকে চেষ্টা করতাম ওয়ার্কশপ, সভা ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করবার জন্য। ভালো ফলাফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা বৃত্তি পেয়েছি৷ নতুন বই সংগ্রহ, পড়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিসহ আশেপাশের লাইব্রেরিতে নিয়মিত পরতে যেতাম।

স্বপ্ন নিয়ে রোমানা বলেন, শিক্ষক হবার স্বপ্ন ছিল। ভালো ফলাফল যেহেতু ছিল সেহেতু আমি বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক যোগদান করি প্রথমে এরপর প্রভাষক পদে। এছাড়া হলে সহকারী আবাসিক শিক্ষক পদে আছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেঞ্জার ইউনিটের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে আছি৷

পরিবার নিয়ে রোমানা বলেন, তিন বোন ও এক ভাই আমরা। আমার বাবা মারা যান খুব আর্লি এইজে। বাবা একদিকে স্কুল শিক্ষক ছিলেন অন্যদিকে সমাজসেবক। তিনি মারা যাবার পর তেমন টাকা পয়সা রেখে যেতে পারেননি। সমাজের কে বিপদে আছেন ফি ছাড়া টিউশনি করাতেন (কাদের সন্তান পরীক্ষার ফি দিতে পারছেন না, কার ঘরে খাবার নেই, কার সন্তান বিয়ে দিতে পারছেন না) এসব বিষয় বাবা খুব নজর দিতেন। তারাও যেন অকপটে বাবার কাছে বলতেন। আমাদের মা খুব স্ট্রাগল করেছেন আমাদের নিয়ে। মা চাইতেন আমাদের ভাই-বোনের পড়াশোনাটা অন্তত চলুক। সে সময়ে উপার্জন করার মতো কেউ ছিল না পরিবারে। তবে ভাই-বোন টিউশন করে সকলের পড়ার খরচ বহন করতেন। মা ভীষণ বুদ্ধি ও কষ্ট করেই সংসার চালাতেন। তা বুঝেই তেমন আবদার করতাম না। বাবা-মা, বড়দের দোয়া ও ছোটদের স্নেহ এবং আমাদের অদম্য ইচ্ছেই নানা বাধা বিপত্তি কেটে দাঁড়াতে পেরেছি। আমার জন্য আমার বড় তিন ভাই-বোন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বাবা’র শূন্যতা যেন না বুঝতে পারি তারা সবসময় চেষ্টা করেছেন। সকল আবদার পূরণ করেন ভাই-বোন।

প্রতিকূল জীবনে চলার পথে অনুপ্রেরণা কে ছিল জানতে চাইলে রোমানা বলেন, আমার অনুপ্রেরণা আমার আদর্শ বাবা। বাবা ভীষণ পরিপাটি ও রুটিন মাফিক চলতেন। বাবার স্মৃতি বেশি মনে না থাকলে যখন বাবার শিক্ষার্থীরা ও এলাকার সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মৃতিচারণ ও স্মরণ করেন তখন বাবার জন্য ভীষণ গর্ববোধ হয়।

রোমানা পাপড়ি এখন স্বপ্ন দেখেন উচ্চশিক্ষা লাভের, পিএইচডি করার স্বপ্ন তার। তিনি বলেন, মৌলিক গবেষণার করার চেষ্টা করছি সবসময়। এখনো শিখছি বই থেকে, আমার শিক্ষকবৃন্দের কাছে ও স্নেহধন্য শিক্ষার্থীদের থেকে। যতটুকুন শিখছি সবার কাছে এতটুকুন যাতে বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ ও রাষ্ট্রকে দিতে পারি।

কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান জানতে চাইলে রোমানা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই শামিল হবার জন্য সমৃদ্ধ ও আসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে আমরা যেই কাজটি করি না কোনো যার যার অবস্থান থেকে নৈতিকতা, দায়িত্ব ও সততার সহিত যথাযথ পালন করার চেষ্টা করব । একজন সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গায় এই প্রতিশ্রুতি থাকা জরুরি।

বিবার্তা/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত