কোটা আন্দোলন: রাষ্ট্রপতি বরাবর শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি পেশ

| আপডেট :  ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৪:২৭  | প্রকাশিত :  ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৪:২৭


কোটা আন্দোলন: রাষ্ট্রপতি বরাবর শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি পেশ

জাতীয়

বিবার্তা প্রতিবেদক


সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে আন্দোলনকারীদের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের দাবি দাওয়া সংবলিত স্মারকলিপিটি পেশ করেন তারা।

১৪ জুলাই, রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে এই প্রতিনিধিরা স্মারকলিপি নিয়ে বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের চেকপোস্ট দিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন।

পরে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন তারা।

রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়া ১২ জনের প্রতিনিধিদলে ছিলেন, আসিফ, নাহিদ, সারজিস, নিদ্রা, আরিফ সোহেল, সুমাইয়া, আশিক, কাদের, মাহিন, হাসিব, মাসুদ ও সিফাত।  

এর আগে, দুপুর আড়াইটার দিকে এই প্রতিনিধিরা স্মারকলিপি নিয়ে বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের চেকপোস্ট দিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন।

বাকি শিক্ষার্থীরা গুলিস্তানের আন্ডারপাস থেকে বঙ্গভবন অভিমুখী সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। এসময় তাদের কোটাবিরোধী নানান স্লোগান দিতে দেখা যায়

বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রায় রাজধানীর গুলিস্তানে জিরো পয়েন্টে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। জিরো পয়েন্টে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনের দিকে রওয়ানা হয়েছেন। পুলিশ সেখানে শিক্ষার্থীদের বাধা দিলেও কোনো লাঠিচার্জ করেনি।

দুপুর দেড়টার পর শিক্ষার্থীরা ওই ব্যারিকেড ভেঙে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেট ধরে এগোতে থাকেন। তবে যানজটের কারণে সেখানে আটকা পড়েন আন্দোলনকারীরা। এসময় সড়কের দুই পাশেই ব্যাপক যানজট দেখা যায়।

পৌনে ২টার দিকে ঘটনাস্থলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যেই নানা স্লোগান দিয়ে চলেছেন সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।

দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণপদযাত্রা করে শাহবাগ, মৎস্যভবন, হাইকোর্ট হয়ে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে পৌঁছান শিক্ষার্থীরা।

সেখানে আন্দোলনকারীরা বঙ্গভবন যাওয়ার রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়েন। পরে সেখান থেকেই আন্দোলনকারীদের সমন্বয়কদের একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিতে যায়।

অন্য শিক্ষার্থীরা কিছুটা সময় সচিবালের সামনে এবং জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিলেও পরে তারা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন।

এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণপদযাত্রা শুরু হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন হয়ে শিক্ষাভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় পুলিশ। পরে ব্যারিকেড ভেঙে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে সামনে দিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার পথে জিরো পয়েন্ট এসে আবার বাধাপ্রাপ্ত হয় আন্দোলনকারীরা।

রবিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল নিয়ে বঙ্গভবন অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। এতে অংশ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী। বেলা ১১টার আগে থেকেই ছোট ছোট দলে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনরত ছাত্ররা।

এসময় শিক্ষার্থীরা, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা, দিয়েছিতো রক্ত, আরও দেব রক্ত, আমাদের সংগ্রাম, চলছে চলবে দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’ সহ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এদিকে, গুলিস্তান আন্ডারপাস এলাকায় এসময় জলকামান, রায়টকার, প্রিজন ভ্যানসহ পুলিশের সতর্কাবস্থান দেখা যায়। পাশাপাশি পেছনের দিকে গোলাপশাহ মাজার এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল শোডাউন দেখা যায়।

শনিবার (১৩ জুলাই) আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন, বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে গণপদযাত্রা শুরু হবে। এই পদযাত্রা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে গিয়ে সেখানে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। গণপদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, শেরে বাংলা কলেজসহ ঢাকার সব প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে বলে জানান নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন।

বিবার্তা/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত