ছয়তলা থেকে ফেলে দেওয়া ছাত্রলীগের ১৫ কর্মী যে অবস্থায় আছেন

| আপডেট :  ১৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৭  | প্রকাশিত :  ১৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৭


ছয়তলা থেকে ফেলে দেওয়া ছাত্রলীগের ১৫ কর্মী যে অবস্থায় আছেন

সারাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি


চট্টগ্রামে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ছয়তলা ভবন থেকে ফেলে দেওয়া ছাত্রলীগের ছয় কর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চট্টগ্রামের দুটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বাকিরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় দুটি হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আহতদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন সুদীপ্ত পাল, পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন মেহেদী হাসান, জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ জুবায়ের, মো. আলমগীর হোসেন, মো. সোহেল ও শ্রাবণ।

এর মধ্যে জালাল ও আলমগীরের অবস্থা বেশ গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। আহত বাকি নয় জনের মধ্যে আট জন পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপরজন ছাত্রলীগ কর্মী ইমন ধর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষ চলাকালীন বিকাল ৫টার দিকে মুরাদপুরের একটি ছয়তলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বেধড়ক পিটিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের বেপরোয়া মারধরে প্রাণ বাঁচানোর পথ খুঁজে না পেয়ে ছয়তলার ছাদে আশ্রয় নেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। সেখানে গিয়েও তাদের মারধর করা হয়। এ সময় কয়েকজন কর্মী ছাদ থেকে ভবনের পাইপ বেয়ে নিচে থামতে গেলেও পেটানো হয়। এতে কয়েকজন নিচে পড়ে যান। আরও কয়েকজনকে ছয়তলা থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়।

আইসিইউতে থাকা ছয়সহ ১৫ জনের পদ-পদবি না থাকলেও তারা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ ও দলীয় নেতারা।

তারা চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য নুরুল আজিম রনির অনুসারী বলে জানা গেছে।

নুরুল আজিম রনি জানান, ‌‘কোটা আন্দোলনকারীরা মঙ্গলবার বিকালে মুরাদপুর এলাকায় ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ১৫ কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে একজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে এবং পাঁচ জন আছেন পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে। এর বাইরে পাথর এবং ছুরিকাঘাতে আহত আট জন পার্কভিউ হাসপাতালে এবং একজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’

নুরুল আজিম রনি আরও বলেন, ‘বিনা কারণে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছিল। তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ২০ জন কর্মী একটি ছয়তলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিল। আন্দোলনকারীর ছদ্মবেশে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন তাদের নির্দয়ভাবে সাপ মারার মতো পিটিয়ে ছয়তলা থেকে ফেলে দিয়েছে। তারা সবাই নিচে পড়ে মারা গেছে মনে করে ফেলে রেখে চলে যায়। খবর পেয়ে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা আমাদের ১৫ জন কর্মীকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। বাকি পাঁচ জন আহত অবস্থায় কোনও মতে ফিরে এসেছে।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ষোলশহর স্টেশন থেকে মিছিল নিয়ে মুরাদপুরে আসেন। তখন মুরাদপুরে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছিলেন। সেখানে গেলেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়ে। একপক্ষ আরেকপক্ষের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সুযোগে তাদের ওপর চড়াও হন আন্দোলনকারীরা। যে যেদিকে পেরেছেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় ছাত্রলীগের অন্তত ২০ নেতাকর্মী মুরাদপুর মোড়ের মীর মঞ্জিল নামে একটি ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। তারা সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। আন্দোলনকারীরাও নিচ থেকে তাদের পাথর ছুড়ে মারেন। একপর্যায়ে ভবনের ছাদে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছে থাকা পাথর শেষ হয়ে যায়। ততক্ষণে মুরাদপুর মোড় আন্দোলনকারীদের দখলে চলে আসে। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীরা ভবনটির ছাদে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঠিসোঁটা ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন। তাদের সঙ্গে না পেরে প্রাণে বাঁচতে ভবনের পাইপ বেয়ে নিচে থামতে যান কর্মীরা। ততক্ষণে অন্তত কয়েকজনকে পিটিয়ে ছাদ থেকে নিচে ফেলা দেওয়া হয়। বাকিরা নিচে নামতে গিয়ে পড়ে যান।’

চট্টগ্রামের মুরাদপুরে পাঁচতলা ভবন থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ফেলে দেওয়া ছাত্রলীগ কর্মী জালাল উদ্দিন ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ভাগ্যগুণে বেঁচে ফেরা জালাল হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ওই হামলার বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ছাদ থেকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়ার পরও কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমাকে মেরে ফেলার জন্য লাঠিপেটা করে। ‘ও ছাত্রলীগ করে, ওকে মেরে ফেল’ বলে চিৎকার করে তারা।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জালাল উদ্দিন বলেন, ‘‘মুরাদপুর এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় আমরা ১৫-২০ জন একটি ভবনের ছাদে ছিলাম। এ সময় লাঠি, হকিস্টিক ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ৫০-৬০ জন আন্দোলনকারী ছাদে উঠে আসে। এদের মধ্যে কয়েকজন আমার দিকে এগিয়ে এসে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। তাদের বলি, আমি আপনাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থী। আপনারা চলে যান। তাদের মধ্যে একজন আমার হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তখন তারা চিৎকার করে বলছিল, ‘কাল তোরা আমার বোনকে মেরেছিস না, আজ তোকে মেরে ফেলবো।’ এই কথা বলে একজন লাথি দিলে আমি ছাদ থেকে নিচে পড়ে যাই।’’  

ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় বুধবার সকালে আহত ইমন ধরের মা সুমি ধর বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

সুমি ধর বলেন, আমার ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাকেসহ ১৫ জনকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার সংঘর্ষ চলাকালে বাসার ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। বুধবার সকালে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

তবে তাদের ফেলে দেওয়া হয়নি বরং হামলার পর পালাতে গিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের চট্টগ্রামের সদস্য মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ওই ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল কর্মী আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। এতে কয়েকজন ছাত্র আহত হন। একপর্যায়ে তাদের ছাদ থেকে নামিয়ে আনা হয়। ছাদ থেকে কাউকে ফেলে দেওয়া হয়নি। তারা ভয়ে পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।’

হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে কোটাবিরোধী আন্দোলনের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগ পরস্পরকে চিনতে না পেরে নিজেরা নিজেদের মেরেছে। আমরা সাধারণ অন্দোলনকারী। আমাদের হাতে মারামারি করার মতো কোনো কিছু ছিল না।’

বিবার্তা/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত