অব্যাহত বৃষ্টিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুর্ভোগ ফোর লেন সড়ক

| আপডেট :  ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০৭:১৪  | প্রকাশিত :  ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০৭:১৪


অব্যাহত বৃষ্টিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুর্ভোগ ফোর লেন সড়ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি


বন্যা দুর্যোগের মতোই আরেক দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফোর লেন সড়ক। অব্যাহত বৃষ্টিতে যা ডোবার আকার ধারণ করেছে। এর ওপর দিয়ে গাড়ি চলতে গিয়ে ডেকে আনছে বিপদ।

সড়কের ভয়ংকর অংশ দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ এই বিভাগের অন্যান্য জেলাগামী শত শত যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য পরিবহন।

যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। একটি গাড়ি বেকায়দায় পড়লে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। শেষ নেই দুর্ভোগের। মাইক্রোচালক আলমগীর ইসলাম জানান, এত দুর্ভোগ তা বলার বাইরে।

ঘাটুরা মোড় থেকে মেডিকেল পর্যন্ত দু-আড়াইশ’ মিটার জায়গা বিপদজ্জনক। কোনো একটি গাড়ি ফেসে গেলে এখানেই আড়াই-তিন ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। তাছাড়া পীরবাড়ি থেকে কাউতলী, এরপর রাধিকা, গজারিয়া, উজানিসার থেকে ধরখার পর্যন্ত সড়কের অবস্থা আরও খারাপ। কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না। আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত এই সড়কের কাজ এখন বন্ধ। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সবাই দেশ ছেড়েছেন। সাময়িক চলাচল উপযোগী করার মতো পদক্ষেপও নেই।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার এই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভারতীয় ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ৩০শে জুন। শুরু থেকে নানা কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়।

সরকার পরিবর্তনের পর গত ১০ই আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা কবে ফিরবেন, কবে আবার কাজ শুরু হবে সবই অনিশ্চিত এখন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৩টি প্যাকেজে এই কাজ চলছে। এরমধ্যে আশুগঞ্জ থেকে সরাইল মোড় পর্যন্ত ১ নম্বর প্যাকেজের কাজ হয়েছে ৬২ ভাগ। দ্বিতীয় প্যাকেজ সরাইল মোড় থেকে আখাউড়া তন্তর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫২ ভাগ। আর তৃতীয় প্যাকেজে থাকা তন্তর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত কাজ শুরুই হয়নি। গড়ে সড়কের কাজ ৫০ ভাগ হয়েছে। বর্তমানে আশুগঞ্জ গোল চত্বর থেকে তন্তর পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, এটি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে তা আমরা এখনো জানি না। এটি ভারতীয় ঠিকাারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল। তারা সবাই সেফটি ইস্যুতে নিজের দেশে চলে গেছেন। তবে মাল-মেটার, মেশিনপত্র সবই রয়েছে। কবে আসবেন সেটা বলছেন না। যেহেতু রাস্তাটা প্রজেক্টের আন্ডারে ঠিকাদারের কাছে ছিল। এর যাবতীয় মেইনটেন্যান্স বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তাদের হাতেই ছিল। তারা যেহেতু চলে গেছে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করার উপায় এই মুহূর্তে কারও হাতেই নেই। এর বাইরেও আমরা বিষয়টি চিফ স্যার এবং সচিব স্যারকে বলার চেষ্টা করছি। রাস্তার যে অংশটা বাকি আছে সেটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক বিভাগের মাধ্যমে করানোর জন্যে এর ইষ্টিমিটসহ চিফ স্যারের কাছে চিঠিপত্র পাঠিয়েছি। রাইট নাউ ফান্ড বা কোনোকিছুই যেহেতু নেই আমরা হয়তো ২-৪টা লেবার দিচ্ছি, মেশিন ভাড়া করে মালমেটার দিচ্ছি যা অপ্রতুল। এভাবে কিছু করে রাস্তার কিছু করাও সম্ভব নয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, এতে তাদের করণীয় কিছু নেই। কাজ করলে প্রকল্পের মাধ্যমে করতে হবে। এই ৪ কিলোমিটার অংশ স্বল্প মেয়াদি মেরামতে ১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন।

এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সড়কে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে আলাদা চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, জেলার আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ চলমান ছিল। প্রকল্পের ৩টি প্যাকেজের মধ্যে ১ম এবং ২য় প্যাকেজ দুইটি ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কের অংশ হওয়ায় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পের এই অংশের রাস্তা ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এবং পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত এ দুইটি প্যাকেজের সড়কের কিছু অংশে এখনো নতুন রাস্তা নির্মাণ শেষ না হওয়ায় বর্তমানে রাস্তার বিভিন্ন অংশে ভাঙা ও পানি জমে থাকার কারণে জনভোগান্তি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে আশুগঞ্জ গোল চত্বর, সরাইল গোল চত্বর, ঘাটুরা মেডিকেল কলেজ, বিরাশার ইত্যাদি অংশে রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহনের দুর্ঘটনা ও যানজট সৃষ্টি করছে এবং প্রতিদিন বাস, ট্রাক, পিকআপ উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। উল্লেখিত অংশগুলোতে অতিদ্রুত মেরামত কাজ করা না হলে হতাহতসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিবার্তা/আকঞ্জি/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত