চুয়াডাঙ্গায় কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না

| আপডেট :  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৩  | প্রকাশিত :  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৩


চুয়াডাঙ্গায় কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না

সারাদেশ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি


দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গায় টানা চার দিন বৃষ্টি হয়েছে। ওই চারদিনে জেলায় ২৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক ফসলি জমি তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে।

টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাঠের ফসল। বৃষ্টির পর রোদের তীব্রতায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ স্পষ্ট হচ্ছে। কৃষকরা বিভিন্নভাবে তাদের উৎপাদিত ফসল রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।

কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নীতকরণ ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ সেবা সহজলভ্য করার জন্য জেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে কৃষি তথ্য বোর্ড বসানো হয়েছে। তবে সেগুলো আপডেট না হওয়া ও আবহাওয়ার সঠিক তথ্য কৃষকে না দেওয়ার ফলে কৃষকের ফসল রক্ষায় কোনো কাজেই আসছেনা এই তথ্য বোর্ড।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষি আবহাওয়া এগ্রোমেট ডিসপ্লে বোর্ড বসানো হলেও এর ব্যবহার সম্পর্কে জানেন না এলাকার কৃষক। এছাড়া স্থাপনের পর ব্যবহার না করার ফলে এটি কোনো কাজেই আসছে না কৃষকদের। যার ফলে রক্ষা হচ্ছে না ফসল।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় টানা বৃষ্টিতে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উঠতি সবজি, কপি, পেঁপে ও মরিচের। কৃষকরা বিভিন্ন উপায়ে তাদের উৎপাদিত ফসল রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। ক্ষেত থেকে পানি নেমে গেলেও তীব্র রোদের কারণে সবজিতে পচন ধরার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টানা ভারী বর্ষণের ফলে চুয়াডাঙ্গায় ৫২ হাজার ৩০১ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ৪ হাজার ১০০ হেক্টর মাঠের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে আমন ধান আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ২০ হেক্টর, গ্রীঃ সবজি ১ হাজার ১২৫ হেক্টর, মরিচ ১২০ হেক্টর, গ্রীঃ পেঁয়াজ ৩৫ হেক্টর, মাষকলাই ৪৫০ হেক্টর, পান ৫০ হেক্টর, কলা ৭৫ হেক্টর, পেঁপে ২২৫ হেক্টর।

কৃষকদের দাবি, কৃষি অফিস থেকে তাদের আবহাওয়া সম্পর্কিত অগ্রিম কোনো তথ্য বা পরামর্শ দেওয়া হয় না। এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে স্থাপিত কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড, স্বয়ংক্রিয় বৃষ্টিপাত পরিমাপক যন্ত্র (রেইন গেজ মিটার) এবং সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বছরের পর বছর অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এমনকি সচল বোর্ডগুলোতেও নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করা হয় না। এছাড়া কোথাও কোথাও খুলে ফেলে দেওয়া হয়েছে এসব যন্ত্র। যার ফলে তথ্য না পেয়ে একদিকে যেমন ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে কৃষক অপরদিকে গচ্ছা গেছে প্রকল্পের টাকাও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলুকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড বসানো ছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ সেবা প্রদান করা। কিন্তু সেটি কৃষকের কাজে না লাগাই খুলে রাখা হয়েছে।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোর্ডগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে একদিকে যেমন এগিয়ে যেতো গ্রামীণ জনপদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি; অন্যদিকে আবহাওয়ার আগাম বার্তায় সতর্ক হয়ে ফসল রক্ষার ব্যবস্থা নিতে পারতেন কৃষকরা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সহজে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া গেলে কৃষকদের অনেক উপকার হতো। স্থাপিত যন্ত্রগুলো বেশ পুরাতন হওয়ায় বিকল হয়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগ ওয়েবসাইট ও প্রতিটি ইউনিয়নের ব্লক সহকারীর মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানানো হচ্ছে কৃষকদের।

বিবার্তা/আসিম/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত