পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি : রাঙামাটির পর্যটনে ধস

| আপডেট :  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫  | প্রকাশিত :  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫


পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি : রাঙামাটির পর্যটনে ধস

রাঙামাটি প্রতিনিধি


রাঙামাটির পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত ৬০টি রুমের বুকিং ছিল। কিন্তু রাঙামাটিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সব ধরনের বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। এতে আবাসন ও রেস্টুরেন্ট খাতে পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের দৈনিক প্রায় ৪ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

শুধু পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সেই নয়, রাঙামটিতে প্রায় ৫০টি হোটেল–মোটেলের অবস্থা একই। এসব হোটেলে পর্যটক সংখ্যা নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। হোটেলের পাশাপাশি কাপ্তাই লেকে পর্যটকবাহী বোটের অবস্থাও একইরকম। পর্যটক না থাকায় বোটগুলো ঘাটে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। কাজ না থাকায় বেকার বসে আছেন এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকরা। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে এসব চিন্তায় দিশেহারা এ এলাকার পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা।

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের কমার্শিয়াল অফিসার কেচিং মারমা বলেন, গত এক মাস ধরে রাঙ্গামাটির একমাত্র ঝুলন্ত ব্রিজ পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। এরপরও পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের বুকিং মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু গত ২০ সেপ্টেম্বর সহিংসতার কারণে ব্যবসা পুরোপুরি স্থবির বলা যায়। এই পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসা স্বাভাবিক হওয়ার কোনো আশা দেখছিনা।

সরেজমিন ঝুলন্ত ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে নোঙ্গর করে আছে পর্যটক বোট। নেই কোনো পর্যটক। অলস বসে আছেন বোট চালকরা।

রাঙামাটি পর্যটন নৌ ঘাটের ম্যানেজার মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, “ঝুলন্ত ব্রিজ বোট ঘাটে প্রতিদিন ২৫টি বোট কাপ্তাই হ্রদে চলাচল করে। এসব বোটে প্রতিদিন গড়ে আয় হয় প্রায় ৮০ হাজার টাকা।”

রাঙামাটির হোটেল স্কয়ার পার্ক এর মালিক নিয়াজ আহমেদ বলেন, আমার হোটেলে সিট ক্যাপাসিটি ২০০। কিন্তু এখন গেস্ট সংখ্যা শূন্যের কোঠায়। হোটেল মেইনটেনেন্স বাবদ দৈনিক ২২ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। বুকিং কবে শুরু হবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে দ্রুত এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উন্নতি যেন হয়।

রবিবার বিকালে বনরূপা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানে তালা ঝুলছে। যে কয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে, সেগুলোতেও ক্রেতা নেই।

এদিকে, রাঙামাটির আরেকটি বৃহৎ বাজার তবলছড়িও ক্রেতাশূন্য। এই বাজারে কোনো হামলার ঘটনা না ঘটলেও গত তিনদিন ধরে বেচাকেনা প্রায় বন্ধ। দোকান খোলা থাকলেও নেই ক্রেতা।

তবলছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল করিম  বলেন, “আমদের এখানে ক্রেতা আসার প্রধান মাধ্যম হলো নৌপথ। পাহাড় থেকে কাঁচামাল না আসায় এই বাজারে ব্যবসা–বাণিজ্য পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে। শনিবার সাপ্তাহিক বাজারের দিনেও ক্রেতা–বিক্রেতা শূন্য ছিল বাজার।”

এদিকে, গত দুই দিন ধরে রাঙামাটি পৌর ট্রাক টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছে পণ্যবাহী ট্রাক। সড়ক অবরোধ থাকায় নৌকা থেকে কলা, জাম্বুরা, ফলমূল–সহ অন্যান্য পণ্য নামানো যায়নি। দুইদিন ধরে আটকে থাকায় নষ্ট হওয়ার পথে এসব পণ্য।

পৌর ট্রাক টার্মিনালে দেখা গেছে, কিছু ট্রাকে পণ্য বোঝাই করা হচ্ছে। প্রশাসনের সহযোগীতায় আটকে পড়া ট্রাকগুলো রাঙামাটি ছেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাঙামাটি মৌসুমী ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম–সম্পাদক মোহাম্মদ মুরাদ  বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন রাঙামাটি থেকে ৫০ থেকে ৮০ ট্রাক পণ্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করে। গত দুইদিন ধরে এগুলো চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বোটের মধ্যেই নষ্ট হচ্ছে পণ্যগুলো।”

তবে প্রশাসনের সহযোগিতায় রবিবার কিছু গাড়ি রাঙামাটি শহর ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

বিবার্তা/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত