বেড়েছে ডিজেলের দাম, গ্যাসে চালিত বাসের ভাড়া বাড়বে কেন

| আপডেট :  ০৭ নভেম্বর ২০২১, ১০:২২  | প্রকাশিত :  ০৭ নভেম্বর ২০২১, ১০:২২

ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে তিন দিন ধরে দেশে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। পণ্যবাহী পরিবহন মালিক সংগঠনের নেতারা চাচ্ছেন, ডিজেলের দাম কমানো হোক। আর গণপরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের ভাবনায় রয়েছে বাসের ভাড়া বাড়ানো। এমন পরিস্থিতিতে রবিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। আজ সকাল ১১টায় বনানীতে বিআরটিএ ভবনে এই বৈঠক হওয়ার কথা।

তবে আজকের এই বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছে পণ্য পরিবহনের সংগঠন বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান বলেন, ‘বিআরটিএর বৈঠকটি বাসভাড়া বাড়ানোর জন্য বসছে। সেখানে আমাদের কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, সেটাই বুঝতে পারছি না। ডিজেলের দাম কমাতে হবে, এটাই আমাদের দাবি।’

ঢাকা শহরের প্রায় ৯৫ শতাংশ বাসই চলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে। দূরপাল্লার বাসের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের চলাচলও গ্যাসনির্ভর। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছাড়া দূরপাল্লার অন্য বাসের ৬০ শতাংশ গ্যাসে চলাচল করে। তাহলে ডিজেলের দাম বাড়ায় সব বাসে কেন ভাড়া বাড়ানো হবে—এমন প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে। অন্যদিকে পণ্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত প্রায় সব গাড়িই ডিজেলে চলে। তাদের দাবি, ডিজেলের দাম যেন কমানো হয়। ভাড়া বাড়ানোর দাবি তারা করেনি।

পণ্য ও গণপরিবহন মালিক সমিতির সূত্র বলছে, বর্তমানে পণ্য পরিবহন খাতে তিন লাখ ৫১ হাজার ৭৩টি নিবন্ধিত গাড়ি আছে। এর মধ্যে বাস ও মিনিবাস রয়েছে ৭৮ হাজার। এসবের প্রায় ৪০ শতাংশ ডিজেলে চলে। বাকি ৬০ শতাংশ বাস চলে গ্যাসে।

ঢাকার বিআরটিএর অনুমোদিত বাস রয়েছে ১২ হাজার ৫২৬টি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এসব বাসের ৯৫ শতাংশই চলে গ্যাসে। সেই হিসাবে ঢাকায় মাত্র ৬২৬টি বাস ডিজেলে চলাচল করে। বাকি ১১ হাজার ৯০০ বাস গ্যাসে চলে।

এমন চিত্রের বিপরীতে ডিজেলের দাম বাড়ায় বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গ্যাসের দাম যখন বাড়ে তখনো ঢাকায় বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। এখন যখন ডিজেলের দাম বেড়েছে তখনো ঢাকায় বাসের ভাড়া বাড়ানো হবে। এটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। যদি ভাড়া বাড়ে তাহলে প্রতি কিলোমিটারে ১৫ পয়সার বেশি বাড়ানো যাবে না। কেননা ডিজেলের দাম যখন লিটারে তিন টাকা কমানো হয়েছে তখন বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা কমেছিল।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, বাসের ভাড়া না বাড়িয়ে ডিজেলের দাম কমাতে হবে। এখন বাসের ভাড়া বাড়ালে সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তাই ডিজেলের দাম কমানো হোক। তিনি বলেন, আগামীকালের (আজ) বৈঠকে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাসের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে জোর দেওয়া হবে না।

যদিও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ডিজেলের দাম কমানো না হলে বাসের ভাড়া বাড়িয়ে এটাকে সমন্বয় করতে হবে। তবে বাসের ভাড়া কত বাড়বে তা কমিটি ঠিক করবে। আমরা ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। প্রস্তাবে ভাড়া কতটা বাড়াতে হবে সে বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করিনি। আশা করি ভাড়া যুক্তিসংগতভাবে সমন্বয় করা হবে।’

জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ভাড়া কতটুকু বাড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বৈঠকে ভাড়া নিয়ে আলোচনা হবে। সব কিছু বিবেচনা করে ভাড়া সমন্বয়ের বিষয়ে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ঢাকায় চলা ৯৫ শতাংশ বাসে ভাড়া বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এগুলো সব গ্যাসে চলে। যেসব বাস ডিজেলে চলে সেগুলো সরকারকে চিহ্নিত করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকায় প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া এক টাকা ৭০ পয়সা। সেখানে ঢাকায় ডিজেলে চলা ৫ শতাংশ বাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রতি কিলোমিটারে ৭০ পয়সা ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে। কারণ ভাড়া কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা হলে নেওয়া হয় আড়াই টাকা। তাই ৭০ পয়সা বাড়ালেও দুই টাকা ৪০ পয়সার বেশি ভাড়া হবে না। ভাড়ার বৃদ্ধি বা ডিজেলের দাম কমানোর এই মারপ্যাঁচে ভুগছে সাধারণ মানুষ। গত তিন দিনের ধর্মঘটে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে সড়কে বের হওয়া সাধারণ মানুষ। গত দুই দিনে দেশের নৌপথে লঞ্চ চলাচল করলেও গতকাল শনিবার ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবার গতকাল চট্টগ্রামে আংশিকভাবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আজকের বৈঠকের পর এই বিশৃঙ্খল অবস্থার অবসান হবে বলে আশা করছে ভুক্তভোগীরা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত