ঠান্ডায় স্থবির ঢাকার জনজীবন, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে নওগাঁ দিনাজপুর

| আপডেট :  ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:২৮  | প্রকাশিত :  ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:২৮


ঠান্ডায় স্থবির ঢাকার জনজীবন, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে নওগাঁ দিনাজপুর

জাতীয়

বিবার্তা ডেস্ক


মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে রাজধানী ঢাকা। দেশের অন্যান্যা জেলার মতো ঢাকা আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল থেকেই কুয়াশায় মোড়ানো রাজধানী। শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় স্থবিরতা নেমে এসেছে জনজীবনে। এমতাবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছে বেশিরভাগ চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা। এছাড়া দিনমজুররা হয়ে পড়েছে অসহায়। কাজে বের হতে না পেরে দিন চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।

একদিনের মধ্যে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো কমেছে। ঢাকায় কমেছে প্রায় দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে সকালে অফিসে যাওয়ার পথে বেগ পেতে হয়েছে সিংহভাগ চাকরিজীবীদের। যানবাহন পেতে যেমন কষ্ট হচ্ছে তাদের, তেমনি এতো শীতে দুরূহ হয়ে পড়েছে তাদের পক্ষে অফিস-আদালত করা।

ভোরে অফিস ধরতে বের হওয়া তামিম শাহরিয়ার নামে একজন জানান, ঠিক সময়ে অফিস ধরতে না পারলে বেতন কাটা যাবে। অথচ এতো সকালে না পাওয়া যাচ্ছে যানবাহন। কিন্তু আমরাও অসহায়। যে করেই হোক, অফিসে যে যেতেই হবে।

মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের অনেক জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রয়েছে। তবে ঢাকায় এর ব্যতিক্রম। ফলে সাতসকালে স্কুলমুখি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অভিভাবকদের।

পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা টিক্কু জামান। তিনি জানান, এতো শীতের মধ্যে সন্তানদের স্কুল ধরার জন্য বাইরে বের হতে হচ্ছে তাদের। তীব্র শীতে বাচ্চারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কিন্তু কিছুই যেন করার নেই।

তিনি বলেন, আমার বাচ্চার স্কুল সকাল ৭টা ১৫ মিনিট থেকে। সঠিক সময়ে স্কুলে প্রবেশ করার জন্য ভোর ৬টা বাজেই উঠতে হচ্ছে। এমন শীতে ছুটি না হোক, অন্তত স্কুল কিছুক্ষণ পেছালেই হতো। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, আজ ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এই শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ নগরীর। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আজ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদফতর গতকাল (রবিবার) সন্ধ্যায় দেয়া পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসেই জানিয়ে রেখেছিল তাপমাত্রা কমবে। সেই সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে।

গতকাল দেশের ছয় জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বইছিল। আজ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় এবং সেই সঙ্গে টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে।

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে এলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে ধরা হয়।

এছাড়া দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুর ও নওগাঁ জেলায়। জেলা দুটিতে সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ লোকজন।

নওগাঁ

নওগাঁয় সকাল থেকেই কুয়াশা দাপট কম থাকলেও মেঘলা আকাশ ও হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষদের।

সোমবার সকাল ৬টায় নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাই এই মৌসুমে নওগাঁ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

এর আগে, রোববার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সোমবার সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই কুয়াশা কম ও মেঘলা আকাশ, তবে সকাল ৯টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের।

স্থানীয়রা জানান, গত দুইদিন থেকে দুপুরের পর একটু সূর্যের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু উত্তাপ ছড়াতে না পারায় বিকেল থেকেই তাপমাত্রা আবারও কমতে শুরু করে। আর দিনভর হিমেল বাতাস। সন্ধ্যার পর থেকে শীতের মাত্রা বাড়ে। রাত বাড়আর সঙ্গে সঙ্গে শীতও বাড়ে সমানতালে। এদিকে হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের লোকজন। জীবিকার তাগিদে সকাল হলেই এসব মানুষ মোটা গরম কাপড় পরে কেউ সাইকেল নিয়ে আবার কেউ পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন।

শহরের তাজের মোড় এলাকার ভ্যানচালক মন্টু মিয়া বলেন, এমন শীত এর আগে হয়নি নওগাঁয়। ভ্যান চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

কাজীর মোড় এলাকায় কথা হয় শ্রমজীবী সুবাস দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এত ঠান্ডা ঘর থেকে বের হতেই মন চাইছে না। আবার কাজ কাম না করলে পেটে ভাত জুটবে না। তাই বাধ্য হয়েই কাজে বের হতে হচ্ছে।

নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক বলেন, সোমবার সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় কয়েক দিন ধরেই শীত বেশি হচ্ছে। এ রকম তাপমাত্রা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দিনাজপুর

হিমালয়ের পাদদেশে জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে সোমবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার দিনাজপুর ও নওগাঁ জেলার বদলগাছীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা।

এর আগে, রোববার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে তাপমাত্রা কমায় জেলার প্রাথমিকে ছুটি ঘোষণা করা হলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছুটি ঘোষণা করেনি কর্তৃপক্ষ।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী আসাদুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে তিনটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। এ ধরনের আবহাওয়া আরও কয়েকদিন ধরে থাকবে।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত